মস্কোতে ড্রোন হামলা, অল্পের জন্য রক্ষা ভারতীয় প্রতিনিধি বিমানের

মস্কোর (moscow) ডোমোদেদোভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার কারণে ভারতীয় সাংসদদের একটি প্রতিনিধি দল বহনকারী বিমানকে কিছুক্ষণ আকাশে ঘুরতে হয়েছে । দ্রাবিড় মুনেত্র কঝগম…

moscow flight late

মস্কোর (moscow) ডোমোদেদোভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার কারণে ভারতীয় সাংসদদের একটি প্রতিনিধি দল বহনকারী বিমানকে কিছুক্ষণ আকাশে ঘুরতে হয়েছে । দ্রাবিড় মুনেত্র কঝগম (ডিএমকে) নেত্রী ও লোকসভা সাংসদ কানিমোঝি করুণানিধির নেতৃত্বে এই প্রতিনিধি দলটির অপারেশন সিঁদুরের পর ভারতের বৈশ্বিক কূটনৈতিক প্রচারণার অংশ হিসেবে মস্কো পৌঁছনোর কথা ছিল।

অপারেশন সিঁদুর পরিচালিত হয়েছিল পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে) সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলির বিরুদ্ধে। যা ছিল ভারতের একটি সামরিক অভিযান। সূত্রের খবর, বিমানটিকে প্রায় ৪৫ মিনিট আকাশে ঘুরতে হয়েছে , তবে পরে এটি নিরাপদে অবতরণ করে।

   

অপারেশন সিঁদুরের প্রেক্ষাপট 

এই ঘটনা ঘটে ২২ মে, ২০২৫, বৃহস্পতিবার রাতে, যখন কানিমোঝির নেতৃত্বে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলটির মস্কো (moscow)পৌঁছনোর কথা ছিল । এই দলটি ভারত সরকারের একটি বৃহত্তর কূটনৈতিক উদ্যোগের অংশ, যার লক্ষ্য পাকিস্তান-সমর্থিত সীমান্ত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ় অবস্থান বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরা।

এই প্রচারণা শুরু হয়েছিল ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর, যেখানে ২৬ জন, প্রধানত ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পর্যটক, নিহত হয়েছিল। এই হামলার জবাবে ভারত অপারেশন সিঁদুর পরিচালনা করে, যার মাধ্যমে পাকিস্তান ও পিওকে’র ২৪টি জঙ্গি ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালানো হয়।

কানিমোঝির নেতৃত্বাধীন এই প্রতিনিধি দলটি রাশিয়া(moscow), স্পেন, গ্রিস, স্লোভেনিয়া এবং লাটভিয়া সফরের প্রথম ধাপে মস্কো (moscow)পৌঁছেছিল। এই দলের সদস্যরা হলেন সমাজবাদী পার্টির রাজীব রাই, বিজেপির ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ চৌতা (অবসরপ্রাপ্ত), রাষ্ট্রীয় জনতা দলের প্রেম চন্দ্র গুপ্ত, আম আদমি পার্টির অশোক কুমার মিত্তাল এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মঞ্জীব সিং পুরী ও জাভেদ আশরাফ।

মস্কোতে ড্রোন হামলা (moscow)

বৃহস্পতিবার রাতে মস্কোর (moscow)ডোমোদেদোভো বিমানবন্দরের কাছে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার কারণে বিমানবন্দরটি কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই হামলার ফলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে যায়। কানিমোঝির দল বহনকারী বিমানটি এই সময় আকাশে ঘুরতে বাধ্য হয়।

কানিমোঝির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, বিমানটি প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে মস্কোর আকাশে ঘুরছিল। তবে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করে। ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা, ভারতের রাষ্ট্রদূত বিনয় কুমারের নেতৃত্বে, প্রতিনিধি দলটিকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান এবং তাদের নিরাপদে হোটেলে স্থানান্তর নিশ্চিত করেন।

চট্টগ্রাম বন্দর কি যাচ্ছে চিন-দুবাইয়ের হাতে? বিতর্কে ইউনূস

Advertisements

ভারতের কূটনৈতিক প্রচারণা

অপারেশন সিঁদুরের পর ভারত সরকার ৩৩টি দেশে সাতটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে, যার মধ্যে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি রয়েছে। এই প্রচারণার উদ্দেশ্য পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার ভূমিকা বিশ্বের কাছে তুলে ধরা এবং ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি জানানো। কানিমোঝির নেতৃত্বাধীন দলটি রাশিয়ার ফেডারেশন কাউন্সিল (উচ্চকক্ষ) এবং স্টেট ডুমা (নিম্নকক্ষ), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করবে।

কানিমোঝি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন, “রাশিয়া ভারতের একটি কৌশলগত অংশীদার। আমরা সবসময় কূটনৈতিক বিষয় ও বাণিজ্যে একসঙ্গে কাজ করেছি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের দৃঢ় অবস্থান বিশ্বের কাছে তুলে ধরা এখন গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আরও বলেন, ভারতের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল একত্রিত। “এই বিষয়ে কোনো মতভেদ নেই। আমরা সবাই একসঙ্গে দাঁড়িয়েছি,” তিনি জোর দিয়ে বলেন।

অপারেশন সিঁদুরের পটভূমি

২২ এপ্রিল পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারত অপারেশন সিঁদুর চালু করে, যেখানে ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুর ও মুরিদকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরে নির্ভুল হামলা চালায়। এই অভিযানে এয়ার-টু-সারফেস গাইডেড মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছিল।

পাকিস্তান এর জবাবে ৭ থেকে ১০ মে পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব, রাজস্থান ও গুজরাটে ড্রোন হামলার চেষ্টা করে, যা ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা ব্যর্থ করা হয়। তবে, পাঞ্জাবের ফিরোজপুরে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত পাকিস্তানি ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ একটি বাড়িতে পড়ে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং একটি পরিবারের তিনজন সদস্য আহত হয়।

ভারতের বৈশ্বিক অবস্থান

ভারতের এই কূটনৈতিক প্রচারণা পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। কানিমোঝির নেতৃত্বাধীন দলটি রাশিয়ার পর স্পেন, গ্রিস, স্লোভেনিয়া এবং লাটভিয়ায় সফর করবে, যেখানে তারা পাকিস্তানের জঙ্গি কার্যকলাপের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যপঞ্জি উপস্থাপন করবে। এই প্রতিনিধি দলের সফর ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতিকে বিশ্বব্যাপী প্রচার করবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

মস্কোর (moscow)ড্রোন হামলার ঘটনা ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সফরে একটি অপ্রত্যাশিত বাধা সৃষ্টি করলেও, দলটি নিরাপদে অবতরণ করেছে এবং তাদের কূটনৈতিক কাজ শুরু করেছে। ভারতের এই সর্বদলীয় প্রচারণা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তুলে ধরছে। কানিমোঝির নেতৃত্বে এই দলটি ভারতের সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রচেষ্টার একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করছে, যা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে।