রানিয়ার উপরে ১০২ কোটির জরিমানা ডিআরআই এর

কন্নড় চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী রানিয়া রাও-এর বিরুদ্ধে সোনা পাচার মামলায় বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (DRI)। সংস্থাটি রানিয়ার উপর ১০২ কোটি টাকার জরিমানা…

DRI imposes penalty

কন্নড় চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী রানিয়া রাও-এর বিরুদ্ধে সোনা পাচার মামলায় বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (DRI)। সংস্থাটি রানিয়ার উপর ১০২ কোটি টাকার জরিমানা আরোপ করেছে, যা বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৪.২ কেজি সোনা পাচারের অভিযোগের সঙ্গে জড়িত।

এই ঘটনা কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং একটি বৃহত্তর পাচার চক্রের সম্ভাবনা নিয়ে তদন্তকে আরও তীব্র করেছে।গত ৩ মার্চ, ২০২৫-এ, দুবাই থেকে বেঙ্গালুরুতে এমিরেটস ফ্লাইটে আগমনের সময় রানিয়া রাও-কে ডিআরআই আটক করে। তাঁর কাছ থেকে ১৪.২ কেজি সোনার বার উদ্ধার করা হয়, যার মূল্য প্রায় ১২.৫৬ কোটি টাকা।

   

এই সোনা তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে টেপ এবং ক্রেপ ব্যান্ডেজ দিয়ে বাঁধা ছিল, যা কাস্টমস কর্মকর্তাদের নজর এড়ানোর একটি চতুর কৌশল ছিল। পরবর্তীতে, রানিয়ার ল্যাভেল রোডের বিলাসবহুল বাসভবনে তল্লাশি চালিয়ে ২.০৬ কোটি টাকার সোনার গহনা এবং ২.৬৭ কোটি টাকার নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়।

মোট উদ্ধারকৃত সম্পদের মূল্য ১৭.২৯ কোটি টাকা। এই ঘটনা বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় সোনা বাজেয়াপ্তের ঘটনাগুলির একটি।

ডিআরআই-এর তদন্তে জানা গেছে, রানিয়া ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে দুবাইয়ে ৪৫ বার একক ভ্রমণ করেছেন, যার মধ্যে গত ১৫ দিনে চারবার ভ্রমণ উল্লেখযোগ্য। এই ঘন ঘন ভ্রমণ কর্তৃপক্ষের সন্দেহ জাগিয়েছিল। তদন্তে আরও প্রকাশ পেয়েছে যে, রানিয়া এবং ব্যবসায়ী তরুণ রাজু ২০২৩ সালে দুবাইয়ে ভিরা ডায়মন্ডস ট্রেডিং নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

পাচারের জন্য একটি মুখোশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল বলে অভিযোগ। এছাড়া, বেল্লারির একজন সোনার ব্যবসায়ী সাহিল জৈনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে, যিনি রানিয়াকে পাচারকৃত সোনা বিক্রিতে সহায়তা করেছিলেন এবং হাওয়ালা লেনদেনের মাধ্যমে দুবাইয়ে ৩৮.৩৯ কোটি টাকা স্থানান্তর করেছিলেন।

ডিআরআই-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, রানিয়া প্রতি কেজি সোনা পাচারের জন্য ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কমিশন নিতেন। তিনি হাওয়ালা লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে সোনা ক্রয় করতেন বলে স্বীকার করেছেন।

এই মামলায় তিনি এবং তাঁর সহযোগী তরুণ রাজু ও সাহিল জৈনের বিরুদ্ধে কাস্টমস অ্যাক্টের ১৩৫ এবং ১০৪ ধারার অধীনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া, কনজারভেশন অফ ফরেন এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড প্রিভেনশন অফ স্মাগলিং অ্যাক্টিভিটিস অ্যাক্ট (কোফেপোসা) আইনের অধীনে তাঁদের এক বছরের জন্য জেলে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Advertisements

রানিয়া, যিনি কর্নাটকের ডিজিপি-র্যাঙ্কের আইপিএস অফিসার রামচন্দ্র রাও-এর সৎকন্যা, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তিনি তাঁর সৎপিতার পদ-পদবী ব্যবহার করে বিমানবন্দরে নিরাপত্তা পরীক্ষা এড়িয়েছিলেন।

তবে, রামচন্দ্র রাও এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি তাঁর সৎকন্যার কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না এবং তাঁর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। এই ঘটনার পর তাঁকে কর্নাটক সরকার জোরপূর্বক ছুটিতে পাঠিয়েছে।

রানিয়া তাঁর জামিনের আবেদন তিনবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর আদালতে দাবি করেছেন, তাঁকে ডিআরআই কর্মকর্তারা শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন এবং জোর করে নথিতে স্বাক্ষর করিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, তাঁর কাছ থেকে কোনো সোনা উদ্ধার হয়নি এবং তাঁকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। তবে, ডিআরআই দাবি করেছে, তাঁদের তদন্ত ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে এবং আদালতে জমা দেওয়া হবে।

এই মামলায় সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)-এরও তদন্ত শুরু হয়েছে, যারা এই পাচারের পিছনে একটি আন্তর্জাতিক চক্রের সম্পৃক্ততা সন্দেহ করছে। রানিয়ার সম্পত্তি, যার মধ্যে বেঙ্গালুরুর ভিক্টোরিয়া লেআউটে একটি বাড়ি, তুমকুরে শিল্প জমি এবং আনেকাল তালুকে কৃষি জমি রয়েছে, তা প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (পিএমএলএ)-এর অধীনে জব্দ করা হয়েছে। এই সম্পত্তির মোট মূল্য ৩৪.১২ কোটি টাকা।

এই ঘটনা কলকাতার রিয়েল এস্টেট এবং বিনোদন জগতেও প্রভাব ফেলেছে। রানিয়া, যিনি ২০১৪ সালে ‘মানিক্য’ চলচ্চিত্রে অভিষেক করেছিলেন এবং পরবর্তীতে তামিল ছবি ‘ওয়াগাহ’ এবং কন্নড় ছবি ‘পটাকি’-তে অভিনয় করেছেন, তাঁর এই কাণ্ডে অনেকেই হতবাক।

কর্মীদের মনোবল বাড়াতে টিসিএসের নতুন ঘোষণা, বেতন বৃদ্ধি সর্বোচ্চ ৭%

এই রায় কলকাতার রিয়েল এস্টেট খাতে সতর্কতার বার্তা দিয়েছে, যেখানে অবৈধ অর্থের লেনদেন এবং পাচারের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। আগামী দিনে এই মামলার তদন্ত কোন দিকে যায়, তা নিয়ে সবার দৃষ্টি রয়েছে।