সমুদ্রসুরক্ষায় বড় সাফল্য: ডিআরডিওর নয়া MP-AUV সিস্টেমের সফল পরীক্ষা

drdo-successfully-tests-next-gen-man-portable-autonomous-underwater-vehicles-mp-auv

ভারতের জলসীমা সুরক্ষায় আরেকটি যুগান্তকারী অগ্রগতি আনতে সক্ষম হলো প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO)। সংস্থার নৌবাহিনী সম্পর্কিত গবেষণাগার NSTL (Naval Science and Technological Laboratory) সফলভাবে তৈরি করেছে নতুন প্রজন্মের Man-portable Autonomous Underwater Vehicles (MP-AUVs), যা সমুদ্রের মাইন সনাক্তকরণ ও নিষ্ক্রিয়করণ মিশনে বড় ভূমিকা নিতে পারে।

Advertisements

এই অত্যাধুনিক আন্ডারওয়াটার সিস্টেমটি DRDO-র একাধিক শাখা—NPOL, RCI, HEMRL এবং DYSL-AT—এর যৌথ প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় উন্নত করা হয়েছে। ফলে, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই সিস্টেম ভারতীয় নৌবাহিনীর ভবিষ্যৎ অপারেশনাল সক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলবে বলে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

   

MP-AUV—কি এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

Man-portable AUV মানে এমন আন্ডারওয়াটার ভেহিকল, যা একজন বা দু’জন ব্যক্তি সহজেই বহন করতে পারেন এবং দ্রুত মোতায়েন করা যায়। সমুদ্রতল বা বন্দরের আশেপাশে মাইন লুকিয়ে থাকে কিনা—তা শনাক্ত করা নৌবাহিনীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শত্রুর পাতা মাইন কোনো যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন বা বাণিজ্যিক ভেসেলকে বড় ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে।

অতএব, মাইন-মুক্ত সমুদ্রপথ নিশ্চিত করতে ভারতের এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

উন্নত সেন্সর—Side Scan Sonar ও Water-Proof Camera

DRDO-র MP-AUV-এ যুক্ত করা হয়েছে—

  • Side Scan Sonar,

  • উচ্চ রেজোলিউশনের আন্ডারওয়াটার ক্যামেরা,

    যেগুলি সমুদ্রতলে থাকা বস্তুগুলিকে রিয়েল-টাইমে স্ক্যান করে। সোনারের মাধ্যমে বিস্তৃত এলাকায় প্রতিফলিত সিগন্যাল বিশ্লেষণ করে মাইন-সদৃশ বস্তু (Mine-Like Objects বা MLOs) শনাক্ত করা যায়।

এই সিস্টেমের ক্যামেরা জলের তলায় থাকা বস্তুগুলির পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরে, যা গোটা মিশনকে আরও নির্ভুল করে তোলে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় চালিত Target Recognition System

এই নতুন প্রজন্মের AUV–এর অন্যতম বড় সাফল্য হলো—

Deep Learning ভিত্তিক Target Recognition Algorithm

এর মাধ্যমে AUV নিজেই একটি সম্ভাব্য মাইনকে শনাক্ত, বিশ্লেষণ এবং শ্রেণিবদ্ধ করতে পারে।

অর্থাৎ, অপারেটরকে প্রতিটি ফ্রেম বিশ্লেষণ করতে হয় না।

AUV নিজেই সিদ্ধান্ত নেয়—

  • কোন বস্তুটি সন্দেহজনক

  • কোনটি প্রকৃত মাইন

  • কোন বস্তুটি নিরাপদ

ফলে মিশনের সময় অনেকটাই কমে আসে এবং মানবীয় ভুলের সম্ভাবনাও কম হয়ে যায়।

Inter-AUV Communication—জলের নীচে একে অপরের সঙ্গে তথ্য আদান–প্রদান

এই সিস্টেমে যুক্ত করা হয়েছে অত্যাধুনিক underwater acoustic communication mechanism

Advertisements

এর সাহায্যে—

  • একাধিক AUV নিজেদের মধ্যে তথ্য বিনিময় করতে পারে,

  • মিশনের চলমান পরিস্থিতি শেয়ার করতে পারে,

  • একে অপরের অবস্থান সম্পর্কে জানে,

  • এবং পুরো ফ্লিট সমন্বিতভাবে একটি লক্ষ্যবস্তু পরীক্ষা করতে পারে।

নৌসেনার মনুষ্যবিহীন জলে চলা সরঞ্জামগুলির মধ্যে এটি একটি অত্যাধুনিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি।

সফল ফিল্ড–ট্রায়াল—সমুদ্রসুরক্ষায় নতুন অধ্যায়

DRDO জানিয়েছে, সম্প্রতি সম্পন্ন হওয়া ফিল্ড ট্রায়ালগুলি অত্যন্ত সফল হয়েছে। পরীক্ষায় যাচাই করা হয়েছে—

  • সিস্টেমের নেভিগেশন ক্ষমতা

  • সোনারের কার্যকারিতা

  • ক্যামেরার রেজোলিউশন

  • AI–ভিত্তিক শ্রেণিবিভাগের নির্ভুলতা

  • বহু AUV–এর মধ্যে তথ্য আদান–প্রদানের দক্ষতা

  • এবং জটিল সমুদ্র পরিবেশে মোতায়েনযোগ্যতা

সবক্ষেত্রেই MP-AUV সন্তোষজনক ফল দিয়েছে বলে জানিয়েছে NSTL।

ভারতের নৌসেনার জন্য কী মানে?

ব্যাপকভাবে ব্যবহার শুরু হলে এই প্রযুক্তি—

✔ সমুদ্রপথে নিরাপত্তা বাড়াবে

✔ সামরিক ও বাণিজ্যিক পথে মাইন ঝুঁকি কমাবে

✔ নৌসেনার অপারেশনাল সময় কমাবে

✔ মানবজীবন ঝুঁকি কমিয়ে আনবে

✔ জরুরি অবস্থায় দ্রুত মোতায়েন করা যাবে

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে ভারতকে মাইন কাউন্টারমেজার (MCM) ক্ষেত্রে বিশ্বমানের অবস্থানে নিয়ে যাবে।

আত্মনির্ভর ভারতের বড় পদক্ষেপ

এই সিস্টেম সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত হওয়ায় দেশকে বিদেশি প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করতে হবে না। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে Make in India–র লক্ষ্য বাস্তবায়নে এটি বড় পদক্ষেপ।

DRDO জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এই সিস্টেম আরও উন্নত করে নৌসেনার বিভিন্ন সাবমেরিন, সারফেস ভেসেল ও MCM ইউনিটে স্থাপন করা হবে।