দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণায় আরও উন্নত প্রযুক্তি আনতে বড় পদক্ষেপ নিল DRDO। রাসায়নিক, জীবাণু, রেডিয়েশন ও নিউক্লিয়ার (CBRN) প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য প্রযুক্তি এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর যৌথ গবেষণা চালাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্বাক্ষর করলো DRDO-র Institute of Nuclear Medicine & Allied Sciences (INMAS) এবং হিমাচল প্রদেশ বিশ্ববিদ্যালয় (HPU)। বুধবার এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ড. সুধীর চাঁদনা (পরিচালক, INMAS) এবং প্রফেসর মহাবীর সিং (উপাচার্য, HPU)-এর মধ্যে।
এই MoU–র মাধ্যমে দুই প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে উন্নত গবেষণার নয়া পথ খুলে দিচ্ছে। বিশেষত, CBRN প্রতিরক্ষা গবেষণায় ভারতের সক্ষমতা আরও দৃঢ় হবে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ রাসায়নিক ও জীবাণু যুদ্ধ, রেডিয়েশন ঝুঁকি এবং নিউক্লিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে জোর দিচ্ছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই চুক্তি ভারতের নিরাপত্তা স্থাপত্যে বড় ভূমিকা রাখবে।
CBRN প্রতিরক্ষা: কেন গুরুত্বপূর্ণ
CBRN প্রতিরক্ষা আজকের যুগে শুধু সামরিক সুরক্ষার ক্ষেত্রেই নয়, সাধারণ নাগরিকের জীবন রক্ষার দিক থেকেও অত্যন্ত জরুরি। রাসায়নিক বিস্ফোরণ, জীবাণু ছড়ানো, নিউক্লিয়ার লিক বা রেডিয়েশন সম্পর্কিত দুর্ঘটনা—সবই একটি দেশের নিরাপত্তাকে মুহূর্তে বিপর্যস্ত করতে পারে। INMAS বহু বছর ধরে এই ক্ষেত্রে গবেষণা এবং প্রশিক্ষণের কাজ করে আসছে। এবার বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগিতায় গবেষণা আরও ব্যাপক আকারে পরিচালিত হবে।
স্বাস্থ্য প্রযুক্তির উন্নয়নেও জোর
চুক্তির একটি বড় অংশ স্বাস্থ্য প্রযুক্তি উন্নয়ন। DRDO–র INMAS অতিমারির সময় থেকেই advanced biosafety research, diagnostics, এবং জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার গতি বাড়লে স্বাস্থ্য পরিষেবা, বায়োমেডিক্যাল ডিভাইস, সেনাবাহিনীর চিকিৎসা সহযোগিতা—সবক্ষেত্রেই নতুন প্রযুক্তি তৈরি হতে পারে।
বিশেষত, উন্নত ডায়াগনস্টিক টুলস, পোর্টেবল বায়োমেডিক্যাল সিস্টেম, high-risk pathogen management এবং জনস্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়ার মতো ক্ষেত্রগুলোয় নতুন গবেষণা শুরু হবে এই সহযোগিতার মাধ্যমে।
শিক্ষা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি: MoU–র গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ
এই চুক্তির আরেকটি মূল উদ্দেশ্য হলো গবেষক, ছাত্রছাত্রী এবং বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের দক্ষতা বৃদ্ধি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান, বায়োটেক, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও প্রতিরক্ষা গবেষণায় আগ্রহী ছাত্রছাত্রীরা এবার INMAS–এ ইন্টার্নশিপ, ল্যাব ট্রেনিং এবং যৌথ গবেষণার সুযোগ পাবেন।
এতে ছাত্রদের হাতে–কলমে অভিজ্ঞতা বাড়বে এবং দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা ব্যবস্থায় নতুন মানবসম্পদ তৈরি হবে।
HPU–র উপাচার্য প্রফেসর মহাবীর সিং বলেন, “এই MoU শুধু গবেষণা নয়, ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতার নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের অংশগ্রহণ বাড়ানো ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য।”
INMAS–এর পরিচালক ড. সুধীর চাঁদনা জানান, “CBRN এবং স্বাস্থ্য–প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে দেশে বিপুল স্কোপ রয়েছে। HPU–র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ আমাদের গবেষণার পরিধি ও গুণমান বাড়াতে সাহায্য করবে।”
DRDO–University সহযোগিতা: ভবিষ্যতের গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু
DRDO গত কয়েক বছরে দেশের বহু প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়িয়েছে। Academic collaboration–এর মাধ্যমে গবেষণায় নবীন দৃষ্টিভঙ্গি, প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং সিভিল–মিলিটারি যৌথ উন্নয়নের পরিধি বৃদ্ধি পায়। INMAS–HPU–র এই MoU সেই ধারাবাহিকতারই অংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে ভারতের নিরাপত্তা কাঠামো—বিশেষত সাইবার-CBRN-হেলথকেয়ার ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাবে। এই তিনটি ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করবে।
দেশের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতিতে বড় ভূমিকা রাখবে
এই চুক্তি দীর্ঘমেয়াদে শুধু গবেষণা নয়, দেশের জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থাও উন্নত করবে। দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, সীমান্তবর্তী এলাকায় হাই-রিস্ক ঘটনা—যে কোনও পরিস্থিতিতে trained manpower এবং advanced tools তৈরি করা এখন দেশের জন্য অপরিহার্য। MoU–র মাধ্যমে সেই প্রস্তুতি আরও পোক্ত হবে।
সব মিলিয়ে, DRDO–র INMAS ও হিমাচল প্রদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই MoU ভারতীয় প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য–প্রযুক্তি এবং জাতীয় নিরাপত্তা গবেষণায় এক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন। আগামী দিনে এই সহযোগিতা দেশের নিরাপত্তা পরিকাঠামো ও সামগ্রিক বৈজ্ঞানিক সক্ষমতা আরও মজবুত করবে।


