বিস্ফোরণের আগে মসজিদে গিয়েছিলেন ডঃ উমর, সিসিটিভি ফুটেজে নয়া তথ্য

Dr Umar visited mosque before blast

নয়াদিল্লি: লালকেল্লা বিস্ফোরণ কাণ্ডে নতুন তথ্য সামনে আনল তদন্তকারীরা। প্রকাশ্যে এসেছে একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ, যেখানে দেখা গিয়েছে বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্ত, কাশ্মীরের চিকিৎসক ডঃ উমর উন নবি। বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে তাঁকে দেখা যায় পুরনো দিল্লির রামলীলা ময়দানের কাছে, তুর্কমান গেটের বিপরীতে অবস্থিত ফয়েজ-ই-ইলাহি মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করতে। সেখানে প্রায় দশ মিনিট অবস্থান করেন তিনি। এরপরই লালকেল্লার দিকে রওনা হন, যেখানে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, প্রাণ হারান অন্তত ১২ জন নিরীহ মানুষ।

Advertisements

হেঁটে যাচ্ছেন উমর

১৯ সেকেন্ডের ওই ফুটেজে দেখা যায়, আসফ আলি রোড ধরে হেঁটে যাচ্ছেন উমর। তাঁর মুখে গভীর উদ্বেগের ছাপ। তদন্তকারীদের মতে, ওই সময়েই তিনি জানতেন যে তাঁর সহযোগীরা- জইশ-ই-মহম্মদ (JeM)-ঘনিষ্ঠ ফারিদাবাদ মডিউলের সদস্যরা, পুলিশের জালে পড়ে গিয়েছেন। আতঙ্কেই সম্ভবত দ্রুত পরিকল্পনা বদলে ফেলে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পথে হাঁটেন উমর নবি।

   

বিস্ফোরণের পর তাঁর পরিচয় নিয়ে তৈরি হয়েছিল প্রবল ধোঁয়াশা। কারণ, বিস্ফোরণের তীব্রতায় দেহ প্রায় সম্পূর্ণভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। অবশেষে ডিএনএ পরীক্ষায় মিলেছে স্পষ্ট প্রমাণ, বিস্ফোরণের সময় হিউন্দাই আই-২০ গাড়িটি চালাচ্ছিলেন উমর নিজেই। কাশ্মীরের পুলওয়ামায় তাঁর পরিবারের কাছ থেকে সংগৃহীত নমুনার সঙ্গে মিলে গিয়েছে গাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া দেহাংশের ডিএনএ।

নজরে লাল রঙের ফোর্ড ইকোস্পোর্ট Dr Umar visited mosque before blast

এখন তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে উমরের আরেকটি গাড়ি- লাল রঙের ফোর্ড ইকোস্পোর্ট। সেটি উদ্ধার হয়েছে হরিয়ানার এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে। নিরাপত্তা বাহিনীর সন্দেহ, সেই গাড়িতেই ধীরে ধীরে মজুত করা হচ্ছিল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটসহ আরও বিস্ফোরক উপাদান। এনএসজি ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এলাকাটি ঘিরে রেখেছে, কারণ আশঙ্কা রয়েছে যে গাড়িটিতে এখনও থাকতে পারে বিস্ফোরক দ্রব্য। সম্পূর্ণ সুরক্ষিত ঘোষণা না করা পর্যন্ত সেটি কারও হাতে তুলে দেওয়া হবে না।

তদন্তে আরও উঠে এসেছে, বিস্ফোরণের আগের রাতে উমর দিল্লি–মুম্বই এক্সপ্রেসওয়ে ধরে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। ফারিদাবাদ থেকে মেওয়াট ও ফিরোজপুর ঝিরকা হয়ে তিনি যান হাইওয়েতে, এবং এক ধাবার পাশে গাড়ির মধ্যেই রাত কাটান। পরের দিন সকালে ফের ফারিদাবাদ পেরিয়ে বাদরপুর সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেন দিল্লিতে, তারপরই ঘটে যায় রাজধানীর সাম্প্রতিক অতীতের অন্যতম ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ।

Advertisements

হোয়াইট কলার জঙ্গি

তদন্তকারীরা বলছেন, চিকিৎসক পরিচয়ের আড়ালে উমর ছিলেন এক “হোয়াইট কলার জঙ্গি”, এমন এক সন্ত্রাসী, যিনি আধুনিক শিক্ষার আচ্ছাদনে ধর্মীয় চরমপন্থা ছড়াতেন। আল-ফালাহ মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত উমর ও তাঁর সহযোগীরা ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছিলেন এক জৈশ-ঘনিষ্ঠ নেটওয়ার্ক, যার শাখা বিস্তৃত ছিল ফারিদাবাদ থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত।

এদিকে, যে মসজিদে বিস্ফোরণের আগে তাঁকে দেখা গেছে, সেই ফয়েজ-ই-ইলাহি মসজিদ দীর্ঘদিন ধরেই তাবলিঘি জামাতের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। তদন্তকারীরা এখন খতিয়ে দেখছেন, ওই মসজিদে তাঁর উপস্থিতি কাকতালীয়, নাকি তা-ই ছিল বিস্ফোরণের আগে কোনও গোপন বার্তা বা নির্দেশ গ্রহণের অংশ।

হুন্ডাই আই-২০

উল্লেখ্য, সোমবার বিকেলে লালকেল্লার কাছে সাদা রঙের হুন্ডাই আই-২০ গাড়িতে ঘটে এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ। মুহূর্তে গাড়িটি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, প্রাণ হারান অন্তত ১২ জন। আহত হন আরও অনেকে। এরপর থেকেই দিল্লি, হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে শুরু হয়েছে সমন্বিত তল্লাশি অভিযান।