দিল্লির লালকেল্লার সামনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের তদন্তে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে, সোমবার বিকেলে বিস্ফোরণের আগে রুপালি রঙের একটি হুন্ডাই i20 গাড়ি তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পার্ক করা ছিল ঐতিহাসিক সোনেহরি মসজিদের পাশে। স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ১৯ মিনিটে গাড়িটি পার্ক হয়, এবং ঠিক ৬টা ৪৮ মিনিটে সেই জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে যায়—বিস্ফোরণের মাত্র কয়েক মিনিট আগে।
এরপরেই সন্ধ্যা সাতটার কিছু আগে লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের গেট নম্বর ১-এর সামনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ কাঁপিয়ে দেয় গোটা এলাকা। নয়জনের মৃত্যু হয়, আহত একাধিক।
বিস্ফোরণের আগমুহূর্তে সিসিটিভিতে দেখা গেল চালককে
আরও একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, সেই একই গাড়িটি ঘন ট্রাফিকের মধ্যে দিয়ে এগোচ্ছে বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগে। চালকের মুখে ছিল কালো ফেস মাস্ক। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, একাধিক অ্যাঙ্গেল থেকে প্রাপ্ত ফুটেজে দেখা যাচ্ছে—চালকের চেহারার গঠন ফরিদাবাদের পলাতক সন্ত্রাসী চিকিৎসক উমর মোহাম্মদের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।
দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল ইতিমধ্যেই ১৩ জন সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এদের মধ্যে ফরিদাবাদ ও কাশ্মীর-যোগ সন্দেহে কয়েকজনকে নজরে রাখা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তৎপরতা Dr. Umar Mohammed CCTV Footage
ঘটনার পর দিনই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের তদন্ত “সব দিক থেকেই” চলছে এবং মঙ্গলবার শীর্ষ নিরাপত্তা কর্তাদের সঙ্গে একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণ বৈঠক হবে। তাঁর কথায়, “প্রতিটি সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সর্বাত্মকভাবে এগোবে।”
কাশ্মীর মডিউলের ছায়া
তদন্ত এখন সীমান্ত ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের শোপিয়ান ও পুলওয়ামা জেলায়।
শোপিয়ানে ‘নাদিগাম’-এর বাসিন্দা ইমরান ওরফে মৌলবি-র বাড়িতে হানা দিয়েছে পুলিশ। পুলওয়ামার খারপোরা সাম্বুরা গ্রামের বাসিন্দা তারিক আহমেদ দার, যিনি এক সময় পেশায় ট্রাকচালক ছিলেন, তাকেও আটক করা হয়েছে। উভয়েই ফরিদাবাদ মডিউলের সঙ্গে যুক্ত বলে আশঙ্কা।
গাড়ির মালিকানা ঘিরে রহস্য
তদন্তে প্রকাশ, বিস্ফোরকবাহী i20-টির মালিকানার শৃঙ্খল জটিল ও সন্দেহজনক। প্রথমে গাড়িটি ছিল মোহাম্মদ সালমান-এর নামে। তিনি বিক্রি করেন নাদিম-কে। পরে সেটি পৌঁছয় রয়্যাল কার জোন নামে ফরিদাবাদের এক সেকেন্ড হ্যান্ড ডিলারের কাছে। সেখান থেকে যায় আমির-এর হাতে, এরপর পুলওয়ামার তারিক-এর কাছে—এবং সবশেষে ড. উমর মোহাম্মদের দখলে আসে গাড়িটি।
চাঞ্চল্যকরভাবে, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (RC) এখনও পর্যন্ত সালমানের নামেই রয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ মালিকানা হস্তান্তরের কোনও সরকারি নথি হয়নি। ফলে ধারণা, জাল কাগজ ও অঘোষিত লেনদেনের মাধ্যমে গাড়িটি হাতবদল হয়েছে—ইচ্ছাকৃতভাবে আসল মালিকানা গোপন রাখতেই এই চক্র সাজানো হয়।
পুলিশের হাতে আরও এসেছে একটি প্রমাণ—চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর ফরিদাবাদে অবৈধ পার্কিংয়ের অভিযোগে একই গাড়ির বিরুদ্ধে চালান কাটা হয়েছিল।
তদন্তে তৎপরতা, এলাকা এখনও সিল
বিস্ফোরণস্থল চাঁদনি চক-সুভাষ মার্গ এখনও সিল করা। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল নমুনা সংগ্রহে ব্যস্ত। বিস্ফোরণে একাধিক গাড়ি ও দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সন্ধ্যার সেই মুহূর্তে আতঙ্কে ছুটে পালিয়েছিলেন পথচারীরা।
তদন্তকারীরা মনে করছেন, এটি এক উচ্চমাত্রার পরিকল্পিত হামলা, এবং ড. উমর মোহাম্মদই হামলার মাস্টারমাইন্ড।


