নয়ডার গৌর সিটি সেভেন্থ অ্যাভিনিউ হাউজিং সোসাইটির বাসিন্দাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একের পর এক বার্তা—’রান্নার লোক ও পরিচারিকা লাগবে।’ একই দৃশ্য আশপাশের বহু আবাসিক এলাকায়। গত দু’সপ্তাহে নয়ডা ও গুরগাঁও জুড়ে গৃহকর্মী (Bengali workers) সঙ্কট দেখা দিয়েছে, কারণ বিপুল সংখ্যক বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক হঠাৎ করে শহর ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে গেছেন। এতে শত শত পরিবার, যারা রান্না, পরিষ্কার, কাপড় ধোয়া ও অন্যান্য গৃহস্থালি কাজে তাঁদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন, বড় বিপাকে পড়েছেন।
শ্রমিকদের শহরত্যাগের পেছনে মূলত দুই কারণ উঠে আসছে—প্রথমত, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের কড়া অভিযান, যেখানে বহু বাংলাভাষী শ্রমিক আটক হয়েছেন। দ্বিতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গে ভোটের আগে বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা (SIR) প্রক্রিয়াকে ঘিরে আতঙ্ক। নয়ডার গৌর সিটির বেশ কিছু ফ্ল্যাটে কাজ করা গৃহকর্মীরা জানিয়েছেন, তাঁদের বস্তি এলাকার অনেকেই ইতিমধ্যেই ট্রেনের টিকিট কেটে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে গেছেন, তাঁরা নিজেরাও ফিরছেন।
গুরগাঁও থেকে ফেরত আসা এক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, তাঁকে বাংলাদেশি ভেবে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করেছে। কেউ কেউ দাবি করেছেন, নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য পুলিশ তাঁদের জামাকাপড় খুলতে বাধ্য করেছে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু সংসদে বলেছিলেন, ভারতে প্রায় দুই কোটি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী রয়েছে। বর্তমানে চলা এই অভিযান জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুর পাশাপাশি মানবিক সঙ্কটও তৈরি করেছে।
২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্ব দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসা শ্রমিকদের সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “মুম্বই, উত্তরপ্রদেশ বা রাজস্থানে থাকার প্রয়োজন নেই। আমি হয়তো পিঠে বা পায়েস খাওয়াতে পারব না, কিন্তু যদি আমরা একটি রুটি খাই, আপনাদেরও একটি দেব। শান্তিতে পশ্চিমবঙ্গে থাকতে পারবেন।” তিনি আরও জানান, “পুলিশের হেল্পলাইন নম্বর আপনারা জানেন। ফেরার ইচ্ছা হলে জানাবেন, আমরা ট্রেনে ফিরিয়ে আনব।”
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক ফিরে এসেছেন, যদিও বাস্তবে সংখ্যাটি আরও বেশি হতে পারে। নয়ডার গৌর সিটির পাশের হাইবাতপুর বস্তি, যেখানে মূলত পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের শত শত অভিবাসী বাস করতেন, এখন প্রায় ফাঁকা। অনেকেই বছরের পর বছর সঞ্চিত জিনিসপত্র, পোশাক, এমনকি সন্তানদের পড়াশোনা ফেলে হঠাৎ করেই চলে গেছেন।
যদিও গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসা শ্রমিকদের মধ্যে দাবি আদায়ের সন্তুষ্টি আছে, তবু সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আতঙ্কও রয়েছে। যারা নয়ডা-গুরগাঁওতে মাসে ৩০-৫০ হাজার টাকা রোজগার করতেন, তাঁরা এখন গ্রামে দিনে ২০০-২৫০ টাকায় দিনমজুরের কাজ করতে বাধ্য হতে পারেন।
এদিকে গৃহকর্মীর অভাবে ব্যস্ত কর্মজীবী পরিবারগুলির দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হচ্ছে। কিছু হাউজিং সোসাইটি গৃহকর্মীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করেছে। তবে অভিযোগ উঠছে, কাগজপত্র দেখালেও পুলিশ অনেককে জিজ্ঞাসাবাদের নামে আটক করছে এবং দীর্ঘ সময় আটকে রাখছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বিষয়টি নিয়ে তীব্র আলোচনার ঝড় উঠেছে।