যৌনকর্মীদের নিয়ে ‘অশোভন’ মন্তব্যে বিপাকে ডি এম কে

তামিলনাড়ুর বনমন্ত্রী কে পন্মুডির যৌনকর্মীদের (sex workers) নিয়ে একটি অশোভন এবং নারীবিদ্বেষী মন্তব্য রাজ্যের রাজনীতিতে ঝড় তুলেছে। এই মন্তব্য, যাতে জাতিগত ইঙ্গিতও ছিল বলে অভিযোগ,…

sex workers attacked by minister

তামিলনাড়ুর বনমন্ত্রী কে পন্মুডির যৌনকর্মীদের (sex workers) নিয়ে একটি অশোভন এবং নারীবিদ্বেষী মন্তব্য রাজ্যের রাজনীতিতে ঝড় তুলেছে। এই মন্তব্য, যাতে জাতিগত ইঙ্গিতও ছিল বলে অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন এবং তার দল দ্রাবিড় মুন্নেত্র কড়গম (ডিএমকে)-কে বিপাকে ফেলেছে। মহিলা অধিকারকর্মী, বিরোধী দল এবং এমনকি ডিএমকের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের তীব্র সমালোচনার মুখে পন্মুডিকে দলের উপ-সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি এখনও মন্ত্রী পদে বহাল রয়েছেন, যা নিয়ে আরও বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে।

মন্তব্যের বিবরণ

একটি সাম্প্রতিক জনসভায় পন্মুডি একটি ভিডিওতে ধরা পড়েন, যেখানে তিনি একজন পুরুষ এবং একজন যৌনকর্মীর (sex workers) মধ্যে একটি কথিত কথোপকথনের গল্প বলছেন। এই গল্পটি শুধুমাত্র অশ্লীলই ছিল না, বরং শৈব ও বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতীক—শৈবদের কপালে আড়াআড়ি তিলক এবং বৈষ্ণবদের উল্লম্ব তিলক—নিয়ে অশোভন রসিকতার মাধ্যমে মজা করা হয়। তিনি বক্তৃতার শুরুতে উপস্থিত মহিলাদের কাছে বলেন, তার কথা যেন “ভুল বোঝা না হয়”। কিন্তু এই মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

জনসভায় উপস্থিত কিছু শ্রোতা তার মন্তব্যে হেসেছিলেন, যা বিতর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। তবে সামাজিক মাধ্যমে এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে পন্মুডির বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই মন্তব্যকে অনেকে নারীবিদ্বেষী, ধর্মীয়ভাবে অসংবেদনশীল এবং সমাজের একটি প্রান্তিক গোষ্ঠীকে অপমানজনক বলে মনে করছেন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া (sex workers)

ডিএমকের সাংসদ এবং দলের প্রভাবশালী নেত্রী কানিমোঝি করুণানিধি এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, “মন্ত্রী পন্মুডির সাম্প্রতিক বক্তৃতা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। যে কোনো প্রেক্ষাপটেই হোক না কেন, এই ধরনের অশ্লীল মন্তব্য নিন্দনীয়।” তার এই বিবৃতি দলের অভ্যন্তরে পন্মুডির বিরুদ্ধে ক্ষোভের ইঙ্গিত দেয়।

বিজেপির তামিলনাড়ু ইউনিটের প্রাক্তন সভাপতি কে অন্নামালাই এবং দলের নেত্রী খুশবু সুন্দরও এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। খুশবু এক্স-এ লিখেছেন, “এই মন্ত্রী একজন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তার এই অশোভন মানসিকতা তার কথার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।

স্ট্যালিন স্যার, আপনার কি সাহস আছে তাকে মন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার? নাকি আপনার দল নারীদের অপমানে আনন্দ পায়?” অন্নামালাই পন্মুডির মন্তব্যকে “অশ্লীল এবং অসংস্কৃত” বলে আখ্যা দিয়ে স্ট্যালিনের নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “ডিএমকের পুরো ব্যবস্থাই অশ্লীল এবং নোংরা। হিন্দু ধর্মের মূল স্তম্ভ শৈব ও বৈষ্ণবের উপর তাদের এই আক্রমণ চিরকাল উত্তরহীন থাকবে না।”

ডিএমকে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে পন্মুডিকে দলের উপ-সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়। তবে মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন এখনও তাকে মন্ত্রী পদ থেকে অপসারণের কোনো সিদ্ধান্ত নেননি, যা নিয়ে বিরোধী দলগুলি তীব্র চাপ সৃষ্টি করছে। সূত্রের খবর, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মন্ত্রী পদ থেকে তাকে সরানোর বিষয়ে আলোচনা করছে, তবে আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর হতে পারে।

আরএফডিএল ফাইনালে মোহনবাগানের মুখোমুখি ক্লাসিক এফএ

Advertisements

সমাজের প্রতিক্রিয়া

মহিলা অধিকারকর্মী এবং সুপরিচিত গায়িকা চিন্ময়ী শ্রীপদা এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি এক্স-এ লিখেছেন, “এটা একটা রসিকতা। কিন্তু এই রসিকতা আমাদের উপর। পন্মুডি তামিলনাড়ুর বনমন্ত্রী, যিনি আগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন। তিনি জনসভায় এমন ‘রসিকতা’ করেন কারণ এর জন্য কথিতভাবে একটা ‘বাজার’ আছে।” তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের মন্তব্যের জন্য কোনো ঐশ্বরিক শাস্তি না থাকলেও, এটা পরিষ্কার যে এই ধরনের নেতারা ক্ষমতায় থাকা সমাজের জন্য লজ্জাজনক।”

মন্তব্যটি শুধুমাত্র যৌনকর্মীদের (sex workers) অপমান করেনি, বরং হিন্দু ধর্মের দুটি প্রধান সম্প্রদায়ের প্রতি অসম্মান প্রকাশ করেছে। এটি বিশেষত ডিএমকের জন্য বিব্রতকর, কারণ দলটি দ্রাবিড় আন্দোলনের নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যা নারী অধিকার এবং জাতিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য পরিচিত। চিন্ময়ী তাদের নেতা ইভি পেরিয়ারের উল্লেখ করে বলেন, “এই ধরনের বক্তৃতার পিছনে পেরিয়ারের ছবি থাকা উচিত ছিল। তিনি নারী অধিকারের জন্য লড়েছিলেন, আর এই নেতারা তাদের মূল্যবোধের অপমান করছেন।”

পন্মুডির বিতর্কের ইতিহাস

এটি পন্মুডির প্রথম বিতর্ক নয়। এর আগে তিনি মহিলাদের বিনামূল্যে বাস ভ্রমণের বিষয়ে অসংবেদনশীল মন্তব্য করেছিলেন এবং অভিবাসী শ্রমিকদের “পানিপুরি বিক্রেতা” বলে উল্লেখ করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। ২০১১ সালে সম্পত্তি অর্জনের একটি মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, যদিও সুপ্রিম কোর্ট ২০২৪ সালে তার সেই সাজা স্থগিত করে। এরপর স্ট্যালিন তাকে পুনরায় মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে আনেন, যা তখনও
বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল।

রাজনৈতিক প্রভাব

এই বিতর্ক এমন এক সময়ে এসেছে যখন ডিএমকে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। পন্মুডির মন্তব্য দলের ইমেজের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে নারী ভোটার এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে। বিজেপি এই ঘটনাকে হিন্দু ধর্মের উপর আক্রমণ হিসেবে উপস্থাপন করে তাদের প্রচারণাকে জোরদার করার চেষ্টা করছে। এদিকে, ডিএমকের মিত্র দলগুলিও এই মন্তব্যের নিন্দা করেছে, যা স্ট্যালিনের জন্য রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ বাড়িয়েছে।

সমাজের প্রতিফলন

পন্মুডির মন্তব্য যৌনকর্মীদের প্রতি সমাজের একটি অংশের বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রকাশ করেছে। এই ঘটনা ভারতীয় রাজনীতিতে নারী অধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচার নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। অধিকারকর্মীরা বলছেন, এই ধরনের মন্তব্য শুধুমাত্র প্রান্তিক গোষ্ঠীকে অপমান করে না, বরং সমাজে বিদ্যমান পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতাকে উৎসাহিত করে।

পন্মুডির মন্তব্য তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে একটি বড় বিতর্কের সূত্রপাত করেছে। ডিএমকের দ্রুত পদক্ষেপ সত্ত্বেও, মন্ত্রী পদ থেকে তাকে না সরানো নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই ঘটনা কেবল রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সংঘাতই নয়, বরং সমাজে নারী অধিকার এবং ধর্মীয় সংবেদনশীলতার বিষয়ে গভীর আলোচনার সূত্রপাত করেছে। আগামী দিনে এই বিতর্ক কীভাবে ডিএমকের নির্বাচনী সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করে, তা দেখার বিষয়।