পাঞ্জাবি সুপারস্টার দিলজিৎ দোসাঞ্জ (Diljit-Dosanjh) তাঁর আগামী ছবি ‘সরদার জি ৩’-এ পাকিস্তানি অভিনেত্রী হানিয়া আমিরের সঙ্গে কাজ করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের মধ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই সহযোগিতা সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কের ঝড় তুলেছে।
২৭ জুন বিদেশে মুক্তি পেতে চলা এই ছবিটি ভারতে মুক্তি পাবে না, এবং ট্রেলারটিও ভারতে জিও-ব্লক করা হয়েছে। ফেডারেশন অফ ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া সিনে এমপ্লয়িজ (এফডব্লিউআইসিই) দিলজিৎ ও তাঁর প্রকল্পগুলির উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছে। ‘সরদার জি ৩’-এর ট্রেলার রবিবার (২২ জুন) দিলজিৎ নিজের সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেন।
এই হরর-কমেডি ছবিতে দিলজিৎ (Diljit-Dosanjh) ‘জগ্গি’ নামে এক ভূত শিকারির চরিত্রে অভিনয় করেছেন, এবং হানিয়া আমির তাঁর প্রেমের আগ্রহের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। নীরু বাজওয়া ছবিতে ‘রানি চুড়াইল’ চরিত্রে ফিরছেন। ছবিটিতে হানিয়া ছাড়াও পাকিস্তানি অভিনেতা নাসির চিনিয়োতি, ড্যানিয়েল খাওয়ার এবং সালিম আলবেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছেন। ট্রেলারে হানিয়ার উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই ভারতীয় নেটিজেনরা দিলজিৎকে ‘দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতক’ বলে কটাক্ষ করছেন।
বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা, যাতে ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। এরপর ৭ মে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ যাতে পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালানো হয়। এই ঘটনার পর ভারত পাকিস্তানি শিল্পীদের উপর নিষেধাজ্ঞা জোরদার করে, যার মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে তাদের অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়।
এফডব্লিউআইসিই-এর প্রেসিডেন্ট বিএন তিওয়ারি হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “দিলজিৎ(Diljit-Dosanjh) পাকিস্তানি শিল্পীর সঙ্গে কাজ করে ভারতীয় সেনা ও নাগরিকদের ত্যাগকে অপমান করেছেন। আমরা তাঁর সমস্ত প্রকল্প বয়কট করব।”
সামাজিক মাধ্যমে দিলজিৎকে (Diljit-Dosanjh) তীব্র ভাষায় সমালোচনা করা হচ্ছে। এক্স-এ একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “হানিয়া আমির অপারেশন সিঁদুরকে ‘হিন্দুত্ব উগ্রবাদ’ বলে ভারতীয় সেনার সমালোচনা করেছিলেন। এখন তিনি দিলজিৎ-এর ছবিতে অভিনয় করছেন। ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে লাভ করা!” আরেকটি পোস্টে বলা হয়েছে, “দিলজিৎ (Diljit-Dosanjh) অপারেশন সিঁদুরের পরও হানিয়ার সঙ্গে কাজ করছেন। দেশভক্তি কি শুধু সৈনিকদের জন্য?” নেটিজেনরা দিলজিৎকে “নির্লজ্জ” এবং “দেশের প্রতি অবিশ্বস্ত” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
দিলজিৎ (Diljit-Dosanjh) এই বিতর্কে সরাসরি কিছু বলেননি, তবে গ্র্যামি রেকর্ডিং অ্যাকাডেমির প্রেসিডেন্ট প্যানোস এ প্যানায়ের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমাদের সীমান্তের বাইরে গিয়ে মাতৃভূমির দিকে তাকাতে হবে। সব সীমান্ত মাতৃভূমির অংশ, এবং আমি তাঁরই।” তিনি শিল্প সীমান্ত অতিক্রম করে বলেও মন্তব্য করেন। তবে, এই মন্তব্য বিতর্ককে আরও উস্কে দিয়েছে।
ছবির প্রযোজক গুনবীর সিং সিধু ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, “ছবির শুটিং ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার আগে সম্পন্ন হয়েছিল।” তিনি দাবি করেন, ছবিটি ভারতে মুক্তি না পাওয়ার সিদ্ধান্ত পরিস্থিতির কারণে নেওয়া হয়েছে। তবে, এফডব্লিউআইসিই এবং অল ইন্ডিয়া সিনে ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন (এআইসিডব্লিউএ) এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ। এআইসিডব্লিউএ-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “দিলজিৎ ভারতীয় শিল্পীদের পরিবর্তে পাকিস্তানি প্রতিভাকে প্রাধান্য দিয়ে তাঁর আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।”
২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর থেকে ভারতে পাকিস্তানি শিল্পীদের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এফডব্লিউআইসিই ১১ জুন সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন (সিবিএফসি)-কে ছবিটির অনুমোদন না দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিল। এই নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে দিলজিৎ-এর সিদ্ধান্তকে অনেকে “দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা” বলে অভিহিত করছেন।
কিছু ভক্ত দিলজিৎ-এর (Diljit-Dosanjh) সমর্থনে বলেছেন, শিল্পের কোনো সীমান্ত নেই। এক্স-এ একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “দিলজিৎ-এর ছবি শিল্পের একটি অংশ। তিনি কেন পাকিস্তানি শিল্পীর সঙ্গে কাজ করবেন না?” তবে, এই মত সংখ্যালঘুতে রয়েছে। বেশিরভাগ নেটিজেন দিলজিৎ-এর এই পদক্ষেপকে পাহালগাম হামলায় শহিদদের প্রতি অসম্মান হিসেবে দেখছেন।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে অভিভাবক-ছাত্রছাত্রীদের গণঅবস্থান
‘সরদার জি ৩’ ইউকে-তে সেট করা একটি হরর-কমেডি, যেখানে দিলজিৎ ও হানিয়া ভূত শিকারি হিসেবে একটি প্রেতাত্মার মুখোমুখি হন। ছবিটি আমর হুন্দল পরিচালনা করেছেন। এটি জনপ্রিয় ‘সরদার জি’ ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় কিস্তি, যার প্রথম দুটি ছবি ২০১৫ ও ২০১৬ সালে মুক্তি পেয়েছিল।
তবে, এই বিতর্কের কারণে (Diljit-Dosanjh) ছবিটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দিলজিৎ-এর এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে ক্রস-বর্ডার সহযোগিতা নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আগামী দিনে এই বিতর্ক কীভাবে প্রভাব ফেলে এবং দিলজিৎ কীভাবে এর জবাব দেন, তা দেখার বিষয়।