দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে বোয়িং ৭৮৭ মডেলের জন্য নতুন সিদ্ধান্ত নিল ডিজিসিএ

গুজরাটের আমেদাবাদে (dgca) এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এআই ১৭১-এর মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার একদিন পর, ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (dgca),…

dgca new guideline

গুজরাটের আমেদাবাদে (dgca) এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এআই ১৭১-এর মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার একদিন পর, ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (dgca), শুক্রবার এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮/৯ ফ্লিটে নিরাপত্তা পরিদর্শন জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে। এই দুর্ঘটনায় ২৪১ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানিও রয়েছেন। একমাত্র জীবিত ব্যক্তি, ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্বাস কুমার রমেশ, আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন।

ডিজিসিএ-র নির্দেশ (dgca)

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে, ডিজিসিএ (dgca) এয়ার ইন্ডিয়াকে জেনএক্স ইঞ্জিনযুক্ত বোয়িং ৭৮৭-৮/৯ বিমানগুলিতে অতিরিক্ত রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম অবিলম্বে শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছে। এই কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ডিজিসিএ অফিসের সমন্বয়ে পরিচালিত হবে। রবিবার থেকে ভারত থেকে প্রতিটি ফ্লাইট ছাড়ার আগে এয়ার ইন্ডিয়াকে কয়েকটি এককালীন পরীক্ষা পরিচালনা করতে বলা হয়েছে।

   

এই পরীক্ষাগুলির মধ্যে রয়েছে, জ্বালানি প্যারামিটার মনিটরিং এবং সংশ্লিষ্ট সিস্টেম পরীক্ষা, কেবিন এয়ার কম্প্রেসার এবং সংশ্লিষ্ট সিস্টেম পরিদর্শন,ইলেকট্রনিক ইঞ্জিন কন্ট্রোল-সিস্টেম পরীক্ষা, ইঞ্জিন জ্বালানি চালিত অ্যাকচুয়েটর-অপারেশনাল পরীক্ষা এবং তেল সিস্টেম পরীক্ষা, হাইড্রলিক সিস্টেমের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা, টেকঅফ প্যারামিটার পর্যালোচনা।

এছাড়া, এয়ার ইন্ডিয়াকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ট্রানজিট পরিদর্শনে ‘ফ্লাইট কন্ট্রোল ইন্সপেকশন’ চালু করতে বলা হয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে পাওয়ার অ্যাসুরেন্স পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে। গত ১৫ দিনে বোয়িং ৭৮৭-৮/৯ বিমানগুলিতে পুনরাবৃত্ত সমস্যার পর্যালোচনার ভিত্তিতে রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সম্পন্ন করতে হবে। ডিজিসিএ (dgca) এয়ার ইন্ডিয়াকে এই সমস্ত পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে।

দুর্ঘটনার বিবরণ

বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, আমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে টেকঅফ করা এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার, ফ্লাইট এআই ১৭১, টেকঅফের কিছুক্ষণ পর মেঘানিনগরে বিজে মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে আছড়ে পড়ে।

বিমানে ২৩০ জন যাত্রী (dgca) এবং ১২ জন ক্রু সদস্য-সহ মোট ২৪২ জন ছিলেন। যাত্রীদের মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, সাতজন পর্তুগিজ এবং একজন কানাডিয়ান নাগরিক ছিলেন। দুর্ঘটনায় ২৪১ জন নিহত হয়েছেন। একমাত্র জীবিত ব্যক্তি বিশ্বাস কুমার রমেশ বর্তমানে আমেদাবাদ সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, “আমি সিটবেল্ট খুলে বিমান থেকে বেরিয়ে আসি। চারপাশে শুধু মৃতদেহ ছিল। আমার বাঁ হাত পুড়ে গেছে।”

ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার ও তদন্ত

শুক্রবার, এয়ারক্রাফট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি) নিশ্চিত করেছে যে দুর্ঘটনাস্থলের একটি ভবনের ছাদ থেকে ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (ডিএফডিআর), যাকে সাধারণত ব্ল্যাক বক্স বলা হয়, উদ্ধার করা হয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় (এমওসিএ) (dgca) স্পষ্ট করেছে যে, কিছু প্রতিবেদনে প্রচারিত ভিডিও রেকর্ডারটি ডিএফডিআর নয়।

মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “কিছু প্রতিবেদনের বিপরীতে, প্রচারিত ভিডিও রেকর্ডারটি ডিএফডিআর নয়। ব্ল্যাক বক্সটি ছাদ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এএআইবি তাৎক্ষণিকভাবে পূর্ণ শক্তিতে তদন্ত শুরু করেছে। গুজরাট রাজ্য সরকারের ৪০ জনেরও বেশি কর্মী মন্ত্রণালয়ের দলগুলিকে সহায়তা করছে।” এএআইবি (dgca) এই দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছে। ব্ল্যাক বক্সটি দুর্ঘটনার কারণ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তদন্তে ইঞ্জিনের ত্রুটি, প্রযুক্তিগত সমস্যা বা অন্য কোনো কারণ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।

Advertisements

প্রধানমন্ত্রীর হাসপাতাল পরিদর্শন

শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমেদাবাদ সিভিল হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং একমাত্র জীবিত ব্যক্তি বিশ্বাস কুমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উদ্ধার কার্যক্রমের তদারকি করেন। মোদী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানির পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেন এবং শোক প্রকাশ করে বলেন, “বিজয়ভাইয়ের নম্রতা, কঠোর পরিশ্রম এবং দলের প্রতি প্রতিশ্রুতি চিরকাল স্মরণীয় থাকবে।”

উদ্ধার কার্যক্রম

দুর্ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দা, ফায়ার ব্রিগেড, এনডিআরএফ এবং সিআরপিএফ-এর দল উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমেদাবাদ পুলিশ কমিশনার জিএস মালিক জানিয়েছেন, “অনেক মৃতদেহ পুড়ে অচেনা হয়ে গেছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তকরণ করা হবে।” কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও আমেদাবাদে উপস্থিত হয়ে উদ্ধার কার্যক্রম তদারকি করেছেন।

ক্ষতিপূরণ ও সমবেদনা

টাটা গ্রুপ ১ কোটি টাকা এবং এয়ার ইন্ডিয়া মন্ট্রিল কনভেনশন অনুযায়ী ১.৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি সহ বিশ্বনেতারা শোক প্রকাশ করেছেন। গুজরাট বিজেপি সভাপতি সিআর পাটিল বলেন, “বিজয় রূপানির মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।”

পার্সোনাল লোনের উপর অতিরিক্ত অর্থের সুযোগ, জানুন বিস্তারিত

কংগ্রেসের সমালোচনা

কংগ্রেস নেতা পবন খেরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের “কেউ দুর্ঘটনা ঠেকাতে পারে না” মন্তব্যকে অসংবেদনশীল বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর (dgca) কাছ থেকে দায়বদ্ধতার প্রতিশ্রুতি প্রত্যাশিত, ভাগ্যের উপর বক্তৃতা নয়।” তিনি বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

আমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা ভারতের বিমান চলাচলের ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক অধ্যায়। ডিজিসিএ-র নির্দেশ এবং তদন্ত ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ব্ল্যাক বক্সের বিশ্লেষণ দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। আমরা প্রার্থনা করি, নিহতদের আত্মা শান্তি লাভ করুক।