গরমের মোকাবিলায় চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের জন্য থাকবে কুলার ও বরফ

গ্রীষ্মের তীব্র গরমে দিল্লি চিড়িয়াখানার (Delhi Zoo) প্রাণীদের স্বস্তি দিতে বিশেষ উদ্যোগ (Zoo Summer Plan) নেওয়া হয়েছে। এবার প্রাণীদের জন্য “ফলের বরফ কিউব” এবং স্প্রিঙ্কলারের…

Delhi Zoo’s Summer Plan: Ice Cubes, Sprinklers & Coolers for Animals

গ্রীষ্মের তীব্র গরমে দিল্লি চিড়িয়াখানার (Delhi Zoo) প্রাণীদের স্বস্তি দিতে বিশেষ উদ্যোগ (Zoo Summer Plan) নেওয়া হয়েছে। এবার প্রাণীদের জন্য “ফলের বরফ কিউব” এবং স্প্রিঙ্কলারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাঘ, সিংহ, চিতাবাঘ এবং শৃগালদের জন্য জলের স্প্রিঙ্কলার স্থাপন করা হবে, যাতে তারা গরম থেকে মুক্তি পায়। চিড়িয়াখানার পরিচালক সঞ্জীব কুমার জানিয়েছেন, ১ এপ্রিল থেকে ‘গ্রীষ্মকালীন কর্মপরিকল্পনা’র সমস্ত ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে, যাতে প্রাণীরা আরামে থাকতে পারে।

Also Read | দিল্লি-ইন্দোর ট্রেন দেরিতে ছাড়ায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তি

   

জাতীয় প্রাণিউদ্যানে (ন্যাশনাল জুওলজিকাল পার্ক) প্রাণীদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এয়ার কুলার, ঘন ঘন জলের স্নান, ছায়াযুক্ত বিশ্রামস্থল এবং পুলে প্রবাহমান জলের ব্যবস্থা করা হবে। সঞ্জীব কুমার জানান, বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদের জন্য একটি কাঠামোগত পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে, যা গ্রীষ্মের শীর্ষ সময়ে তাদের আরাম নিশ্চিত করবে। এই ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে মাংসাশী, তৃণভোজী এবং সরীসৃপদের জন্য পুলে অবিরাম জল প্রবাহ, স্প্রিঙ্কলার এবং ছায়াযুক্ত এলাকা, যাতে অতিরিক্ত গরম থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

মাংসাশী প্রাণীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা

মাংসাশী প্রাণীদের ঘেরে জলের পুল ভরা এবং ছায়াযুক্ত রাখা হবে। বাঘ, সিংহ, চিতাবাঘ এবং শৃগালদের জন্য স্প্রিঙ্কলার স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়া, হোল্ডিং সেলে জল শীতলকারী যন্ত্র (ওয়াটার কুলার) বসানো হবে এবং প্রাণীদের খাদ্য গ্রীষ্মের জন্য হালকা করা হবে। সঞ্জীব কুমার জানান, “মাংসাশীদের জন্য পুল এবং স্প্রিঙ্কলার দুটোই তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। পুলের জল নিয়মিত পরিষ্কার করে পুনরায় ভরা হবে।”

তৃণভোজীদের জন্য ঝরনা ও স্নান

তৃণভোজী প্রাণী যেমন সাম্বার হরিণ, নীলগাই, কৃষ্ণসার এবং হাতিদের জন্য ঘন ঘন জলের ঝরনার ব্যবস্থা করা হবে। গন্ডারদের দিনে দু’বার স্নান করানো হবে, যাতে তারা শীতল থাকে। সম্প্রতি দিল্লিতে মার্চ মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তৃণভোজীদের জন্য এই ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাইমেট ও ভাল্লুকদের জন্য ফলের বরফ

প্রাইমেটদের ঘেরে এয়ার কুলার স্থাপন করা হয়েছে এবং প্রতিদিন ফলের বরফ বল তৈরি করা হচ্ছে। এই বরফ বল তাদের হাইড্রেশন এবং পুষ্টি দুটোই সরবরাহ করবে। ভাল্লুকরা গরমে বিশেষভাবে কষ্ট পায়, তাই তাদের জন্য তীব্র গরমে ছায়াযুক্ত খাওয়ার কক্ষে রাখা হবে। বড় বড় বরফের টুকরো এবং ফলের বরফ কিউব দেওয়া হবে। তাদের ঘেরের চারপাশের খাত প্রতিদিন পরিষ্কার করে জল ভরা হবে।

Advertisements

সরীসৃপ ও পাখিদের জন্য শীতলতা

সরীসৃপদের ঘেরে ছায়াযুক্ত এলাকা এবং সাপদের জন্য ভেজা গানি ব্যাগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাখিদের ঘেরে পাশের দেওয়ালে পর্দা, জলের স্প্রিঙ্কলার এবং বড় মাটির পাত্রে ঠান্ডা পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইমু এবং উটপাখিদের নিয়মিত স্নান করানো হবে। ফিজেন্টের মতো সূক্ষ্ম প্রজাতির জন্য ভেজা গানি ব্যাগ রাখা হবে, যাতে পরিবেশ শীতল থাকে।

তাপমাত্রা নজরদারি ও খাদ্যে পরিবর্তন

চিড়িয়াখানায় মূল ঘেরগুলোতে থার্মোমিটার স্থাপন করা হয়েছে, যাতে তাপমাত্রার ওঠানামা পর্যবেক্ষণ করা যায়। প্রাইমেট, ভাল্লুক এবং তৃণভোজীদের খাদ্যে মৌসুমি ফল যেমন তরমুজ, শসা এবং নারকেল জল যোগ করা হয়েছে, যা অতিরিক্ত হাইড্রেশন প্রদান করবে। একজন সিনিয়র চিড়িয়াখানা কর্মকর্তা বলেন, “তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য প্রাণীদের আরামদায়ক ও নিরাপদ রাখা। এ বছর আমরা অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিয়েছি, যাতে তারা ভালোভাবে হাইড্রেটেড এবং গরম থেকে সুরক্ষিত থাকে।”

কর্মীদের সতর্কতা

চিড়িয়াখানার কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, দিনের তীব্র গরমের সময় অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে এবং প্রাণীদের মধ্যে কোনও অস্বস্তির লক্ষণ দেখা গেলে তৎক্ষণাৎ ভেটেরিনারি হাসপাতালে জানাতে। সঞ্জীব কুমার জানান, “আমাদের কর্মীরা সারাক্ষণ নজর রাখছেন। কোনও প্রাণীর আচরণে পরিবর্তন দেখা গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

গ্রীষ্মকালীন পরিকল্পনার গুরুত্ব

দিল্লির গ্রীষ্মকাল প্রায়ই তীব্র হয়ে ওঠে, এবং এই সময়ে প্রাণীদের স্বাস্থ্য ও আরাম নিশ্চিত করা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ফলের বরফ কিউব, স্প্রিঙ্কলার এবং শীতল জলের পুলের মতো ব্যবস্থা প্রাণীদের গরমে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। এছাড়া, খাদ্যে পরিবর্তন এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার প্রাণীদের হাইড্রেশন এবং পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখে।

দিল্লি চিড়িয়াখানার এই গ্রীষ্মকালীন কর্মপরিকল্পনা প্রাণীদের প্রতি কর্তৃপক্ষের দায়িত্ববোধ এবং যত্নের প্রতিফলন। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই পদক্ষেপগুলো প্রাণীদের জীবনমান উন্নত করবে এবং তাদের সুস্থ রাখবে। ফলের বরফ কিউব থেকে শুরু করে স্প্রিঙ্কলার এবং শীতল পুল—এই উদ্যোগগুলো দিল্লির প্রাণীদের গ্রীষ্মের গরম থেকে রক্ষা করার একটি সম্পূর্ণ পরিকল্পনা।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News