দিল্লির একজন জনপ্রিয় ইউটিউবারের কাছে ১৩ কোটি টাকার চাঁদাবাজির (YouTuber extortion) হুমকি দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ ২৫ বছর বয়সী এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। শুক্রবার পুলিশের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নাম বিশাল ওরফে কাটিয়া। এই ঘটনায় দিল্লির বাওয়ানা এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২৪ বছর বয়সী ওই ইউটিউবার, যিনি একটি জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করেন, গত ৯ এপ্রিল বাওয়ানার সেক্টর-১ এলাকায় থাকাকালীন একটি অজানা নম্বর থেকে একাধিক ফোন কল পান। অভিযোগকারী জানান, ফোনের ওপার থেকে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় এবং ১৩ কোটি টাকা মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করা হয়। হুমকিদাতা নিজেকে বিশাল ওরফে কাটিয়া হিসেবে পরিচয় দেয়। ইউটিউবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তৎক্ষণাৎ তদন্ত শুরু করে এবং মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, বাওয়ানা গ্রামের নির্মল বাটিকা এলাকায় ফাঁদ পেতে অভিযুক্ত বিশালকে ধরা হয়। তদন্তকারী দলের দ্রুত পদক্ষেপের ফলে এই গ্রেপ্তার সম্ভব হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বিশাল এই চাঁদাবাজির পরিকল্পনা একা করেননি; তার পিছনে আরও কয়েকজনের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। পুলিশ এখন এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য সম্ভাব্য অপরাধীদের খোঁজ চলছে। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সতপাল সিং জানান, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ৩৮৭ ধারা (চাঁদাবাজি) এবং ৫০৬ ধারা (অপরাধমূলক ভয় দেখানো) এর অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, অভিযুক্তের মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য জিনিসপত্র জব্দ করা হয়েছে, যা তদন্তে সহায়ক হবে।
এই ঘটনা দিল্লির ডিজিটাল তারকাদের নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। ইউটিউবাররা, যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছান, প্রায়ই তাদের জনপ্রিয়তার কারণে বিভিন্ন ধরনের হুমকির সম্মুখীন হন। এই ঘটনা এই বিষয়টির দিকে নতুন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সফল ব্যক্তিদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং আইনি সুরক্ষা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের চাঁদাবাজির ঘটনা বৃদ্ধির পিছনে সোশ্যাল মিডিয়ার অত্যধিক প্রভাব এবং অপরাধীদের সহজে লক্ষ্যবস্তু নির্বাচন করার ক্ষমতা একটি বড় কারণ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিশালের পটভূমি এবং তার অপরাধমূলক কার্যকলাপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তিনি এর আগেও এই ধরনের অপরাধে জড়িত ছিলেন কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া, তদন্তকারীরা এই ঘটনার পিছনে কোনো বৃহত্তর অপরাধী চক্রের সম্পৃক্ততা আছে কিনা, তা জানার চেষ্টা করছেন। পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপের জন্য স্থানীয়রা প্রশংসা করলেও, এই ঘটনা সাইবার নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তার গুরুত্বের উপর নতুন করে আলোকপাত করেছে।
ইউটিউবার সম্প্রদায়ের মধ্যেও এই ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অনেকে মনে করেন, তাদের কাজের প্রকৃতি এবং জনপ্রিয়তার কারণে তারা সহজ লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠছেন। এই ঘটনার পর কনটেন্ট ক্রিয়েটররা সরকারের কাছে আরও কঠোর আইন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন।
এই ঘটনা শুধু একটি চাঁদাবাজির কেস নয়, বরং আধুনিক যুগে ডিজিটাল জনপ্রিয়তার সঙ্গে আসা ঝুঁকির একটি উদাহরণ। সমাজের সবাইকে এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষ করে যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়। পুলিশ এই মামলার তদন্তে আরও গভীরভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এবং আশা করা হচ্ছে, এই ঘটনার পিছনের পূর্ণ সত্য শীঘ্রই প্রকাশ্যে আসবে।