নয়াদিল্লি: দিল্লি সরকারের এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে এবার বদল আসছে কর্মক্ষেত্রে নারীদের কাজের সুযোগে। মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা শুক্রবার ঘোষণা করেছেন, রাজধানীর সমস্ত দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় মহিলা কর্মীরা এখন থেকে রাত ৯টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত কাজ করতে পারবেন যা এতদিন আইনগতভাবে নিষিদ্ধ ছিল।
রেখা গুপ্তা বলেন, “আমি সত্যিই অবাক হই এটা ভেবে যে, এতদিন ধরে মহিলারা রাত ৯টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত কাজ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। আমরা সেই অন্যায় তুলে দিয়েছি। এখন মহিলারা তাঁদের সুবিধামতো যেকোনও সময় কাজ করতে পারবেন।” এই সিদ্ধান্তটি কার্যকর হয়েছে দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে, যা দিল্লি দোকান ও প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৫৪ এর প্রাসঙ্গিক ধারাগুলিতে সংশোধন আনে।
জুলাই মাসে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা এই প্রস্তাবের কথা প্রথম ঘোষণা করেছিলেন, আর এখন শ্রম দপ্তরের মাধ্যমে সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, মদ বিক্রির দোকান ছাড়া সমস্ত দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান মহিলাদের রাতের শিফটে কাজে রাখতে পারবে, তবে সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিরাপত্তা, কল্যাণ এবং শ্রম আইনের নিয়মাবলী কঠোরভাবে মানতে হবে।
কোনও কর্মচারীকে দিনে ৯ ঘণ্টার বেশি বা সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। টানা ৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করা নিষিদ্ধ; তারপরে বাধ্যতামূলক বিরতি দিতে হবে। কোনও মহিলাকে শুধুমাত্র রাতের শিফটে কাজ করতে বাধ্য করা যাবে না।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী, এবং CCTV নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। CCTV ফুটেজ কমপক্ষে এক মাস সংরক্ষণ করতে হবে এবং প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের কাছে তা জমা দিতে হবে।
এছাড়া, অতিরিক্ত সময় কাজ করলে কর্মীদের দ্বিগুণ বেতন দিতে হবে। জাতীয় ছুটির দিনে কাজ করলে কর্মীদের দ্বিগুণ বেতন ও একটি ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি (কম্পেনসেটরি লিভ) দিতে হবে। প্রত্যেক নিয়োগকর্তার দায়িত্ব থাকবে কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড (PF), এমপ্লয়িজ স্টেট ইন্স্যুরেন্স (ESI), বোনাস এবং ছুটির সুবিধা নিশ্চিত করা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে গঠন করতে হবে ইন্টারনাল কমপ্লেন্টস কমিটি যা কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, নিষেধ এবং প্রতিকার আইন, ২০১৩ অনুযায়ী বাধ্যতামূলক।
এছাড়াও, কোনও মহিলা কর্মীকে রাতের শিফটে পাঠানোর আগে তাঁর লিখিত সম্মতি নিতে হবে যাতে কাজের স্বাধীনতার পাশাপাশি নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও বজায় থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিল্লি সরকারের এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র কর্মক্ষেত্রে নয়, বরং সামগ্রিকভাবে সমাজে নারী স্বাধীনতা ও সমতা প্রতিষ্ঠার পথে এক বড় মাইলফলক। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাজধানী দিল্লি প্রমাণ করল, প্রশাসনিক সদিচ্ছা থাকলে gender equality কেবল স্লোগান নয়, বাস্তবায়নও সম্ভব।


