মানসিক শান্তির খোঁজে সরকারি ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন এই সুন্দরী

আজকের দিনে নিরাপদ সরকারি চাকরি মানেই জীবনের প্রতিটি কষ্ট দূর হওয়ার নিশ্চয়তা (Job for Mental Peace)। অন্তত সমাজে এমনই একটি প্রচলিত ধারণা প্রচলিত। কিন্তু দিল্লির…

Delhi Woman Quits PNB Job for Mental Peace: Vani’s Viral Story Sparks Debate on Work-Life Balance

আজকের দিনে নিরাপদ সরকারি চাকরি মানেই জীবনের প্রতিটি কষ্ট দূর হওয়ার নিশ্চয়তা (Job for Mental Peace)। অন্তত সমাজে এমনই একটি প্রচলিত ধারণা প্রচলিত। কিন্তু দিল্লির ২৯ বছর বয়সী এক তরুণী দেখিয়ে দিলেন, আর্থিক নিরাপত্তা সব কিছু নয়। জীবনে মানসিক শান্তিই আসল—এবার তা প্রমাণ করলেন ভানী, যিনি নিজের স্থায়ী চাকরি ছেড়ে দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন।

ব্যাংকার থেকে নতুন যাত্রা
২০২২ সালে কঠিন IBPS পরীক্ষা পাস করে তিনি যোগ দেন পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (PNB)-এ, একজন Probationary Officer হিসেবে। তিন বছর কাটানোর পর তিনি বুঝতে পারেন, জীবনের পরতে পরতে জমে উঠছে মানসিক চাপ। প্রতিদিনের অফিসের কাজ তাঁকে “mentally draining” করে তুলছিল। কর্মপরিবেশের অবিরাম চাপ, অস্বস্তি এবং কৃতিত্বের স্বীকৃতির অভাব তাঁকে ধীরে ধীরে এক বিষণ্ণ, ক্ষুব্ধ এবং বিরক্ত মানুষে পরিণত করছিল।
“Not All Heroes Wear Capes… Some Just Quit Jobs”
সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের চাকরি ছাড়ার কথা ঘোষণা করতে গিয়ে ভানী লেখেন: “Not all heroes wear capes… some just quit jobs. So I closed the chapter that was no longer serving me.”

   

এই একটিমাত্র বাক্যই স্পষ্ট করে দেয়, ভানীর কাছে মানসিক শান্তি সব কিছুর আগে। তাঁর মতে, নিরাপদ চাকরির জন্য নিজের সুখ ত্যাগ করা কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়।

চাপ ও স্বভাবের পরিবর্তন
ভানী নিজেই জানিয়েছেন—তিনি আগে সবসময় খুশি মানুষ ছিলেন। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে তিনি নিজেকে একেবারে বদলে যেতে দেখেছেন। সহজে বিরক্ত হওয়া, সবসময় অস্থির থাকা—এসব যেন তাঁর স্বভাবের অংশ হয়ে যাচ্ছিল। সেখান থেকেই তিনি বুঝেছিলেন, এবার সময় এসেছে মানসিক শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার।

“Peace Over Pay”
চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ভানী বলেন: “The happiness and mental peace you get after leaving a place where you don’t belong is far superior to any regret you might have.”

এই বক্তব্যে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তিনি পরিষ্কার করে জানান, এটি কাউকে চাকরি ছাড়তে উৎসাহ দেওয়া নয়—এটি কেবল তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, যা তাঁর জীবনের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ছিল।

কোনও Plan-B নেই, তবু কৃতজ্ঞ
অনেকেই তাঁকে প্রশ্ন করেছেন—Plan-B ছাড়াই কীভাবে তিনি জীবন চালাবেন? ভানীর উত্তর স্পষ্ট—“আমার কাছে কোনো বিকল্প পরিকল্পনা নেই। কিন্তু আমার পরিবার আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের সমর্থন আমার কাছে অমূল্য।” তিনি আরও জানান, তাঁর মাসিক খরচ খুবই কম, মাত্র ₹৫,০০০, এবং কোনো ঋণ বা EMI নেই। ফলে সিদ্ধান্ত নেওয়া তাঁর জন্য সহজ হয়েছিল।

Advertisements

সামাজিক প্রতিক্রিয়া
ভানীর ভিডিও এবং পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে। বহু মানুষ তাঁর সাহসের প্রশংসা করেছেন।
কেউ লিখেছেন: “It takes a lot of courage! Not everyone can do this. Good luck for your future endeavours, mate.”
আরেকজনের মন্তব্য: “Cheers to new beginnings.”
কেউ কেউ মজা করে বলেছেন: “Nowadays, everyone is resigning from their jobs to become a travel vlogger.”
অনেকেই আবার নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। যেমন, এক প্রাক্তন ব্যাংককর্মী লিখেছেন: “I joined SBI in 2009 and quit in 2021. I opened my own boutique… liberated।”

এইসব প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায়, ভানীর সিদ্ধান্ত অনেকের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

চাকরির নিরাপত্তা বনাম মানসিক শান্তি
ভারতে সরকারি চাকরি মানেই সমাজে সম্মান, স্থায়ী আয়ের নিশ্চয়তা এবং আর্থিক সুরক্ষা। কিন্তু ভানীর অভিজ্ঞতা স্পষ্ট করে দিয়েছে—সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো মানসিক শান্তি। চাকরি যদি কারও ব্যক্তিত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তবে সেটি যতই স্থায়ী হোক না কেন, সেটি দীর্ঘমেয়াদে সুখ এনে দিতে পারে না।

ভানী প্রমাণ করে দিয়েছেন—সাহস থাকলে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। সরকারি ব্যাংকের উচ্চপদে চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন, মানসিক শান্তির মূল্যই সর্বাধিক। তাঁর পদক্ষেপ শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং সমাজে সাফল্যের সংজ্ঞাকেও নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে।

আজকের দিনে, যেখানে প্রতিটি মানুষ দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত, সেখানে ভানীর এই পদক্ষেপ একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়—অর্থ নয়, আসল সম্পদ হলো মানসিক শান্তি।