আগামী মাসে থামছে দিল্লি-ওয়াশিংটন রুটের বিমান চলাচল

ভারতের জাতীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে দিল্লি থেকে ওয়াশিংটন ডিসি-র সরাসরি ফ্লাইট স্থগিত করার ঘোষণা করেছে (Delhi Washington)। এই সিদ্ধান্তের পিছনে…

Delhi Washington air india flight stopped

ভারতের জাতীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে দিল্লি থেকে ওয়াশিংটন ডিসি-র সরাসরি ফ্লাইট স্থগিত করার ঘোষণা করেছে (Delhi Washington)। এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে সংস্থার বোয়িং ৭৮৭-৮ ফ্লিটের সংকটজনক অবস্থা এবং পাকিস্তানের আকাশপথ বন্ধ থাকার কারণে রুটের অপারেশনাল চ্যালেঞ্জ।

এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এই স্থগিতকরণ “রুট নেটওয়ার্কের নির্ভরযোগ্যতা এবং অখণ্ডতা নিশ্চিত করার জন্য” করা হচ্ছে। এই খবর ভারত-মার্কিন সরাসরি বিমান যোগাযোগের উপর প্রভাব ফেলবে এবং যাত্রীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, বিশেষ করে যখন ভারতীয় ডায়াসপোরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক।

   

এয়ার ইন্ডিয়ার মতে, এই সিদ্ধান্তের প্রধান কারণ হল তাদের বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমানের রিট্রোফিট প্রোগ্রাম। সংস্থার ২৬টি বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমানকে আধুনিকীকরণের জন্য স্থগিত করা হয়েছে, যা ২০২৬ সালের শেষ পর্যন্ত চলবে। এই প্রোগ্রামের ফলে ফ্লিটের সংখ্যা কমে যাওয়ায় দীর্ঘ দূরত্বের রুটগুলিতে অপারেশন বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

দিল্লি-ওয়াশিংটন রুটটি প্রায় ১২,০০০ কিলোমিটার দূরত্বের, যা বোয়িং ৭৮৭-এর মতো ওয়াইড-বডি বিমানের উপর নির্ভরশীল। এছাড়া, পাকিস্তানের আকাশপথ বন্ধ থাকার কারণে রুটের দূরত্ব বেড়ে যায় এবং জ্বালানি খরচ বাড়ে, যা অপারেশনাল দক্ষতা হ্রাস করে।

পাকিস্তান ২০১৯ সালের বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের পর থেকে ভারতীয় বিমানগুলির জন্য আকাশপথ বন্ধ রেখেছে, যার ফলে দিল্লি থেকে উত্তর আমেরিকার রুটগুলি আরও দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এই দুটি কারণ মিলে রুটটি লাভজনক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এই স্থগিতকরণ যাত্রীদের জন্য একটি বড় ধাক্কা। দিল্লি-ওয়াশিংটন রুটটি ভারতীয় ডায়াসপোরা, ব্যবসায়ী এবং পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয়। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, স্থগিতকরণের পর যাত্রীদের জন্য ওয়ান-স্টপ অপশন দেওয়া হবে, যেমন দিল্লি থেকে নিউইয়র্ক বা শিকাগো হয়ে ওয়াশিংটন যাওয়া। তবে, এতে যাত্রা সময় বাড়বে এবং খরচও বাড়তে পারে।

সংস্থা জানিয়েছে, যারা টিকিট কিনেছেন তাঁদের পূর্ণ রিফান্ড দেওয়া হবে বা অন্য রুটে রিবুকিং করা হবে। এছাড়া, এয়ার ইন্ডিয়া অন্যান্য রুটগুলিতে ফ্লাইট বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, যেমন দিল্লি-নিউইয়র্ক বা দিল্লি-সান ফ্রান্সিসকো। তবে, যাত্রীরা অভিযোগ করছেন যে এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ এবং অপ্রত্যাশিত, যা তাঁদের পরিকল্পনাকে ব্যাহত করবে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে লিখেছেন, “এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লিট সংকটের জন্য যাত্রীরা কেন ভোগ করবে?”

বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার ফ্লিটের সংকট বিশ্বব্যাপী বিমান সংস্থাগুলির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এয়ার ইন্ডিয়া ২০১১ সাল থেকে এই বিমান ব্যবহার করছে, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বোয়িংয়ের উৎপাদন সমস্যা এবং নিরাপত্তা ইস্যুর কারণে ফ্লিটের সংখ্যা কমেছে। ২০২৪ সালে বোয়িংয়ের কয়েকটি ঘটনার পর ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) কড়া নিয়ম চাপিয়েছে, যার ফলে এয়ার ইন্ডিয়া তাদের ২৬টি বিমানকে রিট্রোফিট করতে বাধ্য হয়েছে।

Advertisements

এই প্রক্রিয়া ২০২৬ সালের শেষ পর্যন্ত চলবে, যার ফলে দীর্ঘ দূরত্বের রুটগুলিতে ফ্লাইট কমানো হয়েছে। পাকিস্তানের আকাশপথ বন্ধ থাকার কারণে রুটের দূরত্ব ১০-১৫% বেড়ে যায়, যা জ্বালানি খরচ এবং সময় বাড়ায়। এই দুটি কারণ মিলে দিল্লি-ওয়াশিংটন রুটটি অলাভজনক হয়ে উঠেছে।

এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তারা ফ্লিট সম্প্রসারণের জন্য নতুন বিমান কেনার পরিকল্পনা করছে। টাটা গ্রুপের অধীনে সংস্থা ৪৭০টি নতুন বিমানের অর্ডার দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বোয়িং ৭৮৭ এবং এয়ারবাস এ৩৫০। তবে, এই বিমানগুলি আসতে সময় লাগবে।

সংস্থা অন্যান্য রুটগুলিতে ফোকাস করছে, যেমন দিল্লি-নিউইয়র্ক, যা এখনও চালু রয়েছে। এছাড়া, পাকিস্তানের আকাশপথ খোলার জন্য কূটনৈতিক চাপ বাড়ানোর দাবি উঠছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই স্থগিতকরণ ভারতীয় বিমান খাতের জন্য একটি সাময়িক ধাক্কা, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ফ্লিট উন্নয়নের মাধ্যমে এটি কাটিয়ে উঠবে।

এই সিদ্ধান্ত ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। ওয়াশিংটন ডিসি-তে ভারতীয় ডায়াসপোরা ব্যাপক, এবং সরাসরি ফ্লাইটের অভাব যাতায়াতকে কঠিন করবে। অর্থনৈতিকভাবে, এয়ার ইন্ডিয়ার রফতানি এবং পর্যটন খাতে প্রভাব পড়তে পারে। সামাজিক মাধ্যমে যাত্রীরা অভিযোগ করছেন যে এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লিট ম্যানেজমেন্টে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের তরফে কোনও মন্তব্য আসেনি, কিন্তু বিমান মন্ত্রক এই বিষয়ে নজর রাখছে।

iPhone 17 আসার আগে সস্তা হল iPhone 16 Plus, আইফোন নিজের মুঠোয় আনার সেরা সুযোগ

এয়ার ইন্ডিয়ার এই সিদ্ধান্ত বোয়িং ফ্লিটের সংকট এবং পাকিস্তানের আকাশপথ বন্ধের ফলে নেওয়া হয়েছে, যা যাত্রীদের জন্য অসুবিধা তৈরি করবে। তবে, সংস্থা আশ্বাস দিয়েছে যে যাত্রীদের সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এই ঘটনা ভারতীয় বিমান খাতের চ্যালেঞ্জগুলিকে তুলে ধরেছে এবং ফ্লিট উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখিয়েছে।