সিলেবাসে ভগবত গীতা ও বিকশিত ভারত জুড়তে প্রস্তাব

Delhi University

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় (ডিইউ) শিক্ষার্থীদের জন্য ভগবত গীতা (Bhagavad Gita) এবং বিকশিত ভারতের ধারণা নিয়ে নতুন কোর্স চালুর প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতীয় সংস্কৃতি এবং আধুনিক শিক্ষার মেলবন্ধন তৈরির লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গীতার দর্শন এবং উন্নত ভারতের ধারণা একত্রিত করে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত এবং জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে উৎসাহিত করা হবে।

Advertisements

ভগবত গীতার ভূমিকা

ভগবত গীতা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, এটি জীবন পরিচালনার জন্য নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক নির্দেশিকা প্রদান করে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় মনে করছে, এই গ্রন্থের শিক্ষা শিক্ষার্থীদের আত্মোন্নয়ন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। বিশেষত, কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ এবং ভক্তিযোগের মতো ধারণাগুলি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নৈতিকতার বোধ এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা জাগাতে সহায়ক হবে।

বিকশিত ভারতের ধারণা

‘বিকশিত ভারত’ বা উন্নত ভারতের ধারণা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি। ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই কোর্স তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী, সামাজিক দায়িত্ব এবং জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করার জন্য এই কোর্স বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।

কোর্সের কাঠামো

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তাবিত সিলেবাসে ভগবত গীতার বিভিন্ন অধ্যায় এবং বিকশিত ভারতের মূলনীতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনে নৈতিকতা বজায় রাখা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে গীতার দর্শন ব্যবহার এবং সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কোর্সটি ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী এটি গ্রহণ করতে পারেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কারের পদক্ষেপ

শিক্ষায় ভারতীয় সংস্কৃতির ভূমিকা বাড়ানোর প্রচেষ্টা বহুদিন ধরেই চলছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রস্তাব সেই প্রচেষ্টারই একটি অগ্রগতি। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আধুনিকতার সঙ্গে ঐতিহ্যের মেলবন্ধন তৈরির দিকনির্দেশ প্রদান করবে।

সমর্থন ও সমালোচনা

Advertisements

এই উদ্যোগকে অনেকেই স্বাগত জানালেও, এটি নিয়ে সমালোচনারও অভাব নেই। সমর্থকরা মনে করেন, গীতার অন্তর্ভুক্তি শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা এবং ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়ক হবে। অন্যদিকে, সমালোচকদের দাবি, এটি শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণ এবং বহুত্ববাদী শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে পারে।

সরকারের অবস্থান

কেন্দ্রীয় সরকার এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে এবং এটিকে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ (NEP 2020)-এর লক্ষ্য পূরণের সঙ্গে যুক্ত করেছে। সরকারের মতে, এই কোর্স শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশ ঘটাবে এবং বিকশিত ভারতের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়ক হবে।

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই প্রস্তাব মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কিছু শিক্ষার্থী মনে করছেন, এটি তাদের নৈতিক ও পেশাগত জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে, অনেকে মনে করেন যে, এর পরিবর্তে প্রযুক্তি এবং কর্মমুখী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রস্তাব ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে পারে। যদি এটি সফল হয়, তবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও একই ধরনের উদ্যোগ নিতে উৎসাহী হবে। তবে এর কার্যকারিতা এবং জনপ্রিয়তা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের গুণগত মানের ওপর।

সিলেবাসে ভগবত গীতা এবং বিকশিত ভারত ধারণার অন্তর্ভুক্তি একটি সাহসী এবং অভিনব পদক্ষেপ। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা, নেতৃত্ব এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে সহায়ক হতে পারে। তবে, এর কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সঠিক পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এই উদ্যোগ যদি সফল হয়, তবে এটি ভারতীয় শিক্ষাক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে।