নয়াদিল্লি: দেশের রাজধানী আবারও কেঁপে উঠল এক নৃশংস অ্যাসিড হামলার ঘটনায়। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ বছর বয়সি এক তরুণী কলেজে যাওয়ার পথে তিন যুবকের হাতে আক্রান্ত হন। জানা গেছে, হামলাকারীদের মধ্যে একজন তরুণীর পরিচিত ছিল এবং অতীতে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিবাদ হয়েছিল। ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির (BNS) সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে দিল্লি পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার দিন সকালে তরুণী উত্তর দিল্লির মুখুন্দপুর এলাকার বাসিন্দা জিতেন্দ্র নামের এক যুবক ও তার দুই সঙ্গী ইশান এবং আরমানের হাতে আক্রান্ত হন। অভিযোগ, তিনজন বাইকে চেপে এসে তরুণীর উপর অ্যাসিড ছুড়ে মারে। ঘটনাস্থল থেকে তারা পালিয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, ইশান বোতলটি আরমানের হাতে দেয়, তারপর সে তরুণীর গায়ে অ্যাসিড ছুঁড়ে মারে।
আক্রান্ত তরুণী জানান, “আমি কলেজে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ তিনজন বাইকে এসে আমার উপর অ্যাসিড ছোড়ে। আমি শুধু চাই ওদের দ্রুত গ্রেফতার করা হোক। আমি ন্যায়বিচার চাই।” পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, অভিযুক্ত জিতেন্দ্র আগে থেকেই তরুণীকে অনুসরণ করত। এক মাস আগে তাঁদের মধ্যে তীব্র বচসা হয়। সেই রাগ থেকেই প্রতিশোধ নিতে এই অ্যাসিড হামলার পরিকল্পনা করে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে পুলিশ।
ঘটনার পর সঙ্গে সঙ্গে তরুণীকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর মুখ ও গলার অংশে গুরুতর পোড়া ক্ষত রয়েছে। বর্তমানে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল হলেও মানসিকভাবে তিনি গভীর আঘাতপ্রাপ্ত। পুলিশ জানিয়েছে, ক্রাইম টিম ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
একটি স্কুটার এবং আশেপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে তিনজনের নাম পেয়েছি। জিতেন্দ্র ও ইশানের সন্ধান চলছে। আরমানের খোঁজও চলছে। তরুণীর বক্তব্যের ভিত্তিতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এই ঘটনার পর রাজধানীতে নারী সুরক্ষা নিয়ে ফের উঠেছে তীব্র প্রশ্ন। এনসিডব্লিউ (ন্যাশনাল কমিশন ফর উইমেন)-এর চেয়ারপার্সন ঘটনাটিকে “চরম উদ্বেগজনক” বলে মন্তব্য করেছেন। কমিশনের তরফে পুলিশ কমিশনারকে দ্রুত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অ্যাসিড হামলা এখনো নারী নির্যাতনের এক ভয়ঙ্কর রূপ, যেখানে সহজলভ্য অ্যাসিড বিক্রি এবং সামাজিক নিরাপত্তার ঘাটতি প্রধান কারণ। মহিলা অধিকার কর্মী মেঘনা তিওয়ারি বলেন, “প্রেমে প্রত্যাখ্যান, প্রতিশোধ বা পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যের মানসিকতা থেকে এই ধরনের হামলা হয়। কঠোর শাস্তি না হলে এমন নৃশংসতা কমবে না।”
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট অ্যাসিড বিক্রির উপর নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিলেও বাস্তবে তার কার্যকর প্রয়োগ বহু ক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ। রাজধানীর এই সাম্প্রতিক ঘটনা সেই ব্যর্থতার আরেকটি প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় মানুষের দাবি, দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। কলেজ প্রশাসনও তরুণীর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।


