দিল্লি: দেশের রাজধানীতে বেড়ে চলা পথকুকুরের (Stray Dog) সংখ্যা এবং নাগরিক সুরক্ষার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবার বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে দিল্লি সরকার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে শীঘ্রই চালু হবে এক বৃহৎ পথকুকুর নির্বীজন ও টিকাকরণ অভিযান। ২০২৩ সালের অ্যানিমেল বার্থ কন্ট্রোল (এবিসি) রুলস অনুযায়ী এই উদ্যোগ কার্যকর করা হবে, যা দিল্লির ইতিহাসে অন্যতম বৃহত্তম কুকুর নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, দিল্লির মোট ৭৮টি সরকারি ভেটেরিনারি হাসপাতালের মধ্যে ২৪টিকে বিশেষ টিকাকরণ কেন্দ্রে রূপান্তর করা হবে। এই কেন্দ্রগুলিতে দক্ষ ভেটেরিনারি ডাক্তার ও প্রশিক্ষিত কর্মীরা পথকুকুরদের নির্বীজন এবং প্রয়োজনীয় টিকা প্রদানের কাজ করবেন। প্রশাসন এই প্রকল্পে এনজিও, বেসরকারি পশু চিকিৎসক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে যুক্ত করতে চলেছে।
দিল্লি সরকার জানিয়েছে, এই উদ্যোগে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পশুপ্রেমী ও প্রাণী অধিকার কর্মীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে কার্যকরী পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। অভিযানে পথকুকুরদের নিরাপদ ও সুরক্ষিতভাবে ধরার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অপারেশনের পর যত্নশীল চিকিৎসা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
২০১৬ সালের গৃহপালিত প্রাণীর সেন্সাস অনুযায়ী, দিল্লিতে প্রায় ৮ লক্ষ পথকুকুর ছিল। বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এর ফলে নাগরিকদের নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য এবং প্রাণী কল্যাণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পথকুকুরের কামড়ানোর ঘটনা এবং নাগরিক অসন্তোষ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সমস্যার সমাধান জরুরি হয়ে উঠেছে। এনডিটিভির বিশেষ প্রচারাভিযান ‘ইন্ডিয়াস ডগ ডিলেমা’-তেও এই বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে, যেখানে জননিরাপত্তা, প্রাণীর অধিকার এবং নগর অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে।
দিল্লি প্রশাসন উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্ণৌ মডেল থেকে শিক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখানে নির্বীজন ও টিকাকরণের সমন্বিত কর্মসূচি এবং পরবর্তী যত্ন ব্যবস্থার কারণে কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দিল্লির মতো বৃহৎ মহানগরীতে একই পদ্ধতি প্রয়োগ করা গেলে পথকুকুর নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আরও দ্রুত ও ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দিল্লি সরকার শীঘ্রই এই প্রকল্পের জন্য বিস্তারিত গাইডলাইন প্রকাশ করবে। বড় আকারের নির্বীজন ও টিকাকরণ অভিযান শুরু হলে এটি দেশের অন্যতম বৃহত্তম প্রাণী কল্যাণ উদ্যোগে পরিণত হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে দিল্লির পথকুকুর সমস্যার সমাধানে যা একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হবে।