রাজধানী দিল্লিতে (Delhi) মঙ্গলবার সকালে কিছুটা উন্নতি হলেও, শহরের বিভিন্ন এলাকা এখনও বিপজ্জনক মাত্রায় দূষণের শিকার হয়েছে (Delhi Smog)। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) অনুযায়ী, দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) সকাল ৭টায় ৩৩৫ রেকর্ড হয়েছে, যা ‘ভেরি পুওর’ (খুব খারাপ) ক্যাটেগরিতে পড়ে। অপরদিকে, মুম্বাইয়ের AQI ছিল তুলনামূলকভাবে ভাল, ১৪৭, যা ‘মডারেট’ (মধ্যম) ক্যাটেগরিতে পড়ে। কিন্তু দিল্লির বেশ কিছু এলাকা, যেমন জাহাঙ্গীরপুরী, আনন্দবিহার এবং রোহিনী, ‘সিভিয়র’ (গম্ভীর) দূষণের শিকার, যেখানে AQI স্কোর ৪০০ এরও উপরে ছিল (Delhi air pollution)।
কলকাতায় অপরিবর্তিত পেট্রোল-ডিজেলের দাম, দেশের কোথায় কত?
দিল্লির বিভিন্ন এলাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জাহাঙ্গীরপুরী, একটি প্রধান এলাকা, রেকর্ড করেছে ৪১৮ AQI, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং ‘সিভিয়র’ দূষণকে নির্দেশ করে। আনন্দবিহার এবং রোহিনী, যথাক্রমে ৪০৪ এবং ৪১৫ AQI সহ, একই রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এর পাশাপাশি আরও কিছু এলাকার AQI স্কোরও বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। যেমন আশোকবিহার (৩৯১), বাওয়ানা (৩৯৩), এবং মুণ্ডকা (৪০৬)। এই সব এলাকায় ‘ভেরি পুওর’ (খুব খারাপ) থ্রেশহোল্ডের উপরে দূষণের পরিমাণ ছিল।
এছাড়া, কিছু অন্যান্য এলাকা যেমন মথুরা রোড, চাঁদনী চক, এবং আইটিও এলাকাতেও AQI স্কোর ৩৪০ এর উপরে ছিল, যা ‘আনহেলথি’ (অস্বাস্থ্যকর) বাতাসের সূচনা করছে। যদিও এই এলাকাগুলি ‘সিভিয়র’ ক্যাটেগরিতে পড়েনি, তবুও এটি তাদের বাসিন্দাদের জন্য উদ্বেগজনক।
রাতের ঠান্ডায় বাড়ছে শীতের আমেজ, দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রা হ্রাসের পূর্বাভাস”
এদিন, দিল্লিতে স্মগের চাদর আরও ঘনীভূত হয়েছিল, যা শহরের দৃশ্যমানতা কমিয়ে দিয়েছিল এবং বাসিন্দাদের জন্য নানা সমস্যা তৈরি করেছিল। সকাল বেলা, ঘন কুয়াশা ও মিষ্টির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন চলাচল অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছিল। যেহেতু কুয়াশা পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল, তাই মানুষ তাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে বের হতে পারছিল না, এবং অনেকেরই সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ ছিল। একদিকে যেমন দূষণের কারণে মানুষের শ্বাসকষ্ট বাড়ছিল, অন্যদিকে স্মগ এবং কুয়াশা থেকে মটরযান চালকদেরও অস্বস্তি হচ্ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের পরিস্থিতি আসলে বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হচ্ছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হল পল্লী অঞ্চলে জ্বালানির অপ্রচলিত ব্যবহার এবং নির্মাণ কার্যক্রমের কারণে তেল, ধোঁয়া এবং অন্যান্য দূষণকারী কণার মুক্তি। এছাড়া, ধীরে ধীরে ঠান্ডা পড়া এবং বাতাসের গতি কমে যাওয়া, এই ধরনের দূষণকে সঞ্চালিত করতে সহায়ক হয়।
বিগত কয়েকদিনের দূষণ পরিস্থিতি দিল্লির মানুষের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন AQI রিডিংগুলো শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা, হাঁপানি, এবং হৃদরোগের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষত শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এবং শ্বাসকষ্টের রোগীরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। দীর্ঘ সময় ধরে এই ধরনের দূষণ exposure শ্বাসযন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে, এবং বিভিন্ন স্থায়ী রোগের জন্ম দিতে পারে।
দিল্লি সরকার ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নাগরিকদের বারবার সতর্ক করেছেন যেন তারা অতিরিক্ত সময় বাইরে না থাকে এবং বিশেষত সকালে ও সন্ধ্যায় বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকে। স্বাস্থ্য সংস্থাগুলি পরামর্শ দিয়েছে, যাদের শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাদের যেন একেবারে বাইরে না বের হয় এবং গৃহস্থালি ফিল্টার ব্যবহার করা হয়।
মণিপুরে নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার
দূষণের প্রভাব কেবল মানুষের স্বাস্থ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি শহরের দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। দিল্লিতে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা বিশেষ করে সকাল বেলা কুয়াশার কারণে বেশি অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে। অনেক স্কুলে নির্দিষ্ট সময়ের পরে স্কুল চলতে থাকলেও, ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বাসিন্দাদের প্রাত্যহিক যাতায়াতেও দেরি হচ্ছে, কারণ স্মগের কারণে রাস্তা দেখতে অসুবিধা হচ্ছে এবং যানবাহন চলাচল অত্যন্ত ধীর গতিতে হচ্ছে।
তাছাড়া, ব্যবসায়ীদের জন্যও এই পরিস্থিতি সমস্যা সৃষ্টি করেছে। বিক্রেতারা তাদের দোকানপাটে আগের মতো ভিড় পাচ্ছেন না, কারণ লোকজন দূষণের কারণে বাইরে যেতে চাচ্ছে না।দিল্লির দূষণ পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খোঁজা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও বিশেষজ্ঞরা সরকারের কাছে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। এগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, নির্মাণ কার্যক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধতা এবং কলকারখানাগুলির দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
এছাড়া, গ্রীন সিটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা এবং পুনর্ব্যবহারের উপকরণ ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া, এমন কিছু পদক্ষেপ যা দূষণ কমাতে কার্যকর হতে পারে।
পরিশেষে, দিল্লির দূষণ পরিস্থিতি শুধুমাত্র শহরের জনজীবনকেই নয়, বরং এর বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। দূষণের মাত্রা কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে, আগামী দিনে এর প্রভাব আরও বাড়বে, যা দিল্লির ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় সংকটের সৃষ্টি করতে পারে।