দিল্লির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল, সারাই কালে খান চকের (Sarai Kale Khan Chowk) নাম পরিবর্তন (renamed) করে তা ‘বিরসা মুন্ডা চক’ রাখা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি ঘোষণা করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর। এর মাধ্যমে এখন থেকে দিল্লির গুরুত্বপূর্ণ এই চত্বরটি ‘লর্ড বিরসা মুন্ডা’ (‘Lord Birsa Munda’) নামে পরিচিত হবে।
শুক্রবার, ভগবান বিরসা মুন্ডার (Lord Birsa Munda) ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মনোহর লাল খট্টর এই নাম পরিবর্তনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “আজ থেকে সারাই কালে খান আইএসবিটি বাসস্ট্যান্ডের বাইরের চত্বরটি ‘লর্ড বিরসা মুন্ডা’ (Lord Birsa Munda) নামে পরিচিত হবে। এই মূর্তিটি এবং নাম, শুধু দিল্লির নাগরিকদের নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাসস্ট্যান্ডে আসা মানুষদেরও বিরসা মুন্ডার জীবনের মূল্যবোধ এবং সংগ্রামের প্রতি অনুপ্রেরণা জোগাবে।”
বিরসা মুন্ডার জীবন সংগ্রাম এবং অবদানঃ
বিরসা মুন্ডা ছিলেন এক মহান বিপ্লবী, যিনি ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন। ১৮৭৫ সালের ১৫ নভেম্বর, আজকের ঝাড়খণ্ডের রাঁচি জেলার উলিহাতু গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সুগনা মুন্ডা ছিলেন একজন আদিবাসী কৃষক।
বিরসা মুন্ডার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল একটি মিশনারি স্কুলে, তবে তার মনোযোগ ছিল দেশবাসীর দুঃখকষ্ট এবং ব্রিটিশ শাসকদের অত্যাচারের প্রতি। তিনি শীঘ্রই অনুভব করেছিলেন যে ভারতীয়দের উপর ব্রিটিশরা যে অত্যাচার চালাচ্ছিল, তা তিনি আর সহ্য করতে পারবেন না।
১৮৯৪ সালে, ছোট নাগপুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ এবং মহামারী ছড়িয়ে পড়লে, বিরসা মুন্ডা জনগণের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করেন। তিনি শুধু এক মহান আদিবাসী নেতা হিসেবেই পরিচিত হননি, বরং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিবাদী হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
১৮৯৫ সালে, ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে বিরসা মুন্ডাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাকে হাজারীবাগ জেলে পাঠানো হয়। ১৮৯৭ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ও মুন্ডাদের মধ্যে এক গৃহযুদ্ধ চলতে থাকে। এই সংগ্রামে মুন্ডা এবং তার অনুসারীরা আত্মত্যাগ করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তিনি একটি আদিবাসী রেভোলিউশন চালিয়ে, বীরত্বের সঙ্গে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন। তার এই সংগ্রাম আদিবাসী সমাজে এক নতুন দিক সূচিত করে।
বিরসা মুন্ডার মৃত্যু ২৫ বছর বয়সে হলেও, তার অবদান আজও চিরকাল স্মরণীয়। তাকে শুধু ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ হিসেবে নয়, বরং একটি আদর্শ ও মহান নেতা হিসেবে পূজা করা হয়। বিশেষ করে ঝাড়খণ্ড রাজ্যে, তাকে দেবতা হিসেবে পূজা করা হয় এবং তার আদর্শের ওপর ভিত্তি করে একটি শক্তিশালী আদিবাসী সমাজ গড়ে ওঠে।
ভারত সরকার এখন প্রতি বছর ১৫ নভেম্বর তার জন্মদিনে “আদিবাসী গর্ব দিবস” হিসেবে উদযাপন করে। সারা দেশে আদিবাসী সমাজের অবদান এবং তাদের সংগ্রামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দিনটি পালন করা হয়। বিশেষত ঝাড়খণ্ডে, এই দিনটি মহাসমারোহে উদযাপিত হয়।
বিরসা মুন্ডার সংগ্রাম শুধু আদিবাসীদের জন্যই ছিল না, বরং পুরো ভারতবাসীর জন্য একটি বার্তা ছিল। তাঁর সংগ্রামের মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় যে, শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একে অপরকে সাহায্য করলে কোনো শক্তি আর টিকতে পারে না। আজকের দিনে, তার নাম দিল্লির মতো শহরে স্মরণীয় হয়ে উঠেছে, যেখানে হাজারো মানুষ প্রতিদিন এই চত্বরে যাতায়াত করেন। তাঁর মূর্তি এবং নাম সেখানে তাঁর মহান আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।
এই নামকরণের মাধ্যমে, দিল্লি তথা গোটা দেশের জনগণের কাছে বিরসা মুন্ডার মহান আদর্শ এবং সংগ্রাম আরও জোরালোভাবে পৌঁছে যাবে।