নয়াদিল্লি: রাস্তা দিয়ে নৌকা চলছে! ভারী বৃষ্টিতে কার্যত ভেসে গিয়েছে নয়াদিল্লির অপেক্ষাকৃত নীচু এলাকা। স্তব্ধ জনজীবন। বুধবার সকাল থেকে লাগাতার বৃষ্টির জেরে নাজেহাল মজনু কা টিলা, মদনপুর খদর, বদরপুরের মত শহরের ব্যস্ত এলাকা। সামান্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন এলাকার অধিকাংশ মানুষ। এদিন দুপুর ১ টা নাগাদ যমুনা নদীর জলস্তর বেড়ে গিয়েছে ২০৭ মিটার! যার জেরে বন্যা (Flood) পরিস্থিতি রাজধানী দিল্লিতে (Delhi)।
অপেক্ষাকৃত নীচু অঞ্চলগুলির বাসিন্দাদের সুরক্ষিত স্থানে সরিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। তবে প্রাণে বাঁচলেও জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে অধিকাংশ মানুষের ঘরবাড়ি, দোকানপাট। আগে যেখানে রাস্তা ছিল, এখন বইছে ঘোলা নদীর জল। বাজারগুলো পরিণত হয়েছে পুকুরে। মজনু কা টিলার (Majnu ka Tila) এক দোকানী অনুপ থাপা বলেন, “দোকানের বেশিরভাগ জিনিসপত্রই আমরা সরিয়ে নিয়েছিলাম। তবে যেটুকু বাকি ছিল, বন্যার জলে সব নষ্ট হয়ে গেল। জল নামলে পুরো দোকান আমাকে মেরামত করতে হবে”।
বর্তমানে রাস্তার পাশে ক্যাম্পে তিন বছরের শিশু কন্যা এবং স্ত্রীকে সঙ্গে করে আশ্রয় নিয়েছেন অনুপ থাপা। তিনি বলেন, “২০২৩ এর পর ফের আমরা বন্যার শিকার হলাম। তখনই সরকারকে জানানো হয়েছি রাস্তাগুলো সারিয়ে প্রয়োজনীয় অংশে মেরামতি করিয়ে দিতে। তাহলে এই বছর এরকম পরিস্থিতি হত না”। অন্যদিকে, একই কথা বলছেন মদনপুরের বাসিন্দা তায়ারা। রাস্তার ধারে ত্রিপল খাটিয়ে কোনরকমে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে মাথা গুঁজেছেন তাঁরা।
তায়ারা বলেন, “আমাদের সবকিছু ঘরের ভিতরে রয়ে গেছে। খুব কষ্টে সামান্য কিছু জিনিস নিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছি”। রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়ায় উঁচু বাড়ির সিঁড়িতে আশ্রয় নিয়েছে পথকুকুরেরা। আরও এক বন্যা বিধ্বস্ত বলেন, “পরিবার গুলোর কাছে খাবার, বাসনপত্র কিচ্ছু নেই। আমরা শুধুমাত্র বিস্কুট আর পাউরুটি খেয়ে কোনক্রমে ক্ষুধা নিবারণ করছি”। মন্টেসারি মার্কেটের দোকানী সচিন যাদব বলেন, “গতকাল থেকেই আমাদের দোকান বন্ধ করে দিয়েছি। ওই দোকানের উপর নির্ভর করেই আমাদের সংসার চলে। জল কমতে এখনও বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে। ততদিন পর্যন্ত কীভাবে কাটাবো জানি না!”
অন্যদিকে, যমুনা মার্কেটকে দেখলে মনে হচ্ছে যেন এক ভাসমান বাজার! এক দোকানী রোহিত কুমার বলেন, “সবে মাসের শুরু। আর এর মধ্যেই আমাদের সব জমানো অর্থ খরচ হয়ে গিয়েছে। এখনও বাড়ি ভাড়া দেওয়া বাকি। জল কমলে কীভাবে সব সামলাবো বুঝতে পারছি না”। বাদরপুরেও একই অবস্থা। জলের ভেতর থেকে কেবলমাত্র ঘরের চালা উঁকি দিচ্ছে।
জিনিসপত্র মাথায় বোঝাই করে বাড়ি থেকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন আসিফ। তিনি বলেন, “কত বছরের পরিশ্রমের অর্থ দিয়ে এই বাড়ি তৈরি করেছিলাম। আর এখন এটি জলের তলে। স্ত্রী-সন্তান্দের নিয়ে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। এখন আমরা কোথায় যাব?” উল্লেখ্য, মঙ্গলবারেই যমুনার (Yamuna) জলস্তর বিপদসীমা ছোঁয়। বুধবার বেলা একটা নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়ায় ২০৭ মিটারে। প্রশাসন জানিয়েছে, ২০২৩ সালের রেকর্ডও ভেঙে দিতে পারে চলতি বছরের বর্ষা। নয়াদিল্লি সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় জারি হয়েছে সতর্কতা।