নয়াদিল্লি: দিল্লির লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে ১০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে যে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে, তা এখনও শহরের বাতাসে আতঙ্কের গন্ধ ছড়িয়ে রেখেছে। একটি ধীরগতির হুন্ডাই আই-টোয়েন্টি গাড়ির ভিতরে হঠাৎ যেন আগুনের গোলা ফেটে পড়ল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল ধোঁয়া, আগুন আর চিৎকার। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পুড়ে ছাই হয়ে গেল পাশের কয়েকটি গাড়ি।
রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ল মানুষের দেহাংশ, ভাঙা কাচ আর পোড়া ধাতু। প্রাথমিক হিসেবে মৃতের সংখ্যা ৯ থেকে ১৩-এর মধ্যে। আহত অন্তত ২০ জন, যাদের তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে এলএনজেপি হাসপাতালে। পুরো এলাকা এখনও কর্ডন করা। লালকেল্লা মেট্রো স্টেশন বন্ধ।দিল্লি পুলিশ, ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (এফএসএল) এবং অন্যান্য সংস্থার প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বিহারে দ্বিতীয় দফার ভোট শুরু, ভোটারদের উদ্দেশে বার্তা প্রিয়ঙ্কা-মোদীর
বিস্ফোরণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, জ্বালানি তেল (যা একসঙ্গে মিলে তৈরি করে এএনএফও—অর্থাৎ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট-ফুয়েল অয়েল মিশ্রণ) এবং বিস্ফোরক ডেটোনেটর। এই মিশ্রণটি আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) তৈরিতে খুবই কার্যকর। কারণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সহজলভ্য—সার হিসেবে বাজারে পাওয়া যায়। আর ডেটোনেটরের সাহায্যে তা মুহূর্তে বিধ্বংসী শক্তি ছড়াতে পারে।
গাড়ির ভিতরে এই বিস্ফোরক ভর্তি ছিল বলে ধারণা। বিস্ফোরণের তীব্রতা দেখে পুলিশ নিশ্চিত—এটি দুর্ঘটনা নয়, সুনির্দিষ্ট জঙ্গি হামলা।এই হামলার মূল সন্দেহভাজন ডা. উমর মহম্মদ, পুলওয়ামার বাসিন্দা এবং একজন চিকিৎসক। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, মুখোশ পরা এক ব্যক্তি (যাকে পুলিশ উমর বলে শনাক্ত করেছে) গাড়িটি বিস্ফোরণস্থলে প্রায় তিন ঘণ্টা আগে পার্ক করে রেখে চলে যান। গাড়িটির মালিকানা একাধিকবার বদল হয়েছে, যা পুলিশের কাছে সন্দেহজনক।
উমরের সঙ্গে যোগ রয়েছে ফরিদাবাদের একটি জঙ্গি মডিউলের। বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগেই হরিয়ানা এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ ফরিদাবাদে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে ৮ জনকে। তাদের মধ্যে তিনজন চিকিৎসক ডা. মুজাম্মিল শাকিল, ডা. আদিল রাথার এবং আরেকজন। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ২,৯০০ কেজি বিস্ফোরক (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, পটাশিয়াম নাইট্রেট, সালফার), আইইডি তৈরির সরঞ্জাম, ডেটোনেটর, টাইমার, একটি অ্যাসল্ট রাইফেল এবং গোলাবারুদ।
ডা. শাকিলের বাড়ি থেকে আরও ৩৫০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উদ্ধার হয়।পুলিশের ধারণা, এই মডিউল দিল্লিতে একাধিক হামলার পরিকল্পনা করছিল। উমর হয়তো গ্রেফতারের খবর পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে নিজেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেন। এই নেটওয়ার্কে শিক্ষিত, ‘হোয়াইট কলার’ পেশাজীবীদের জড়িত থাকা পুলিশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। কারণ তারা সাধারণ সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকেন। বিস্ফোরক কিনেছেন বৈধ চ্যানেল থেকে, কিন্তু ব্যবহার করেছেন অবৈধ উদ্দেশ্যে।


