নয়াদিল্লি: দিল্লির ঐতিহাসিক লাল কেল্লার কাছে সোমবার সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনা এখনও দেশের রাজধানীকে চমকে দিচ্ছে। এই হামলায় এখন পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, আরও কয়েক ডজন মানুষ গুরুতর আহত। বিস্ফোরণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল একটি সাদা রঙের হুন্ডাই আই-২০ গাড়ি, যা বিস্ফোরণের মুহূর্তে ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল।
তদন্তে জানা গেছে, এই গাড়িটি ছিল জঙ্গি উমর নবীর হাতে, যে নিজেই এই ফিদায়িন-স্টাইলের হামলার মাস্টারমাইন্ড। এখন, এই গাড়ির বিক্রয়কারী ডিলারকে দিল্লি পুলিশ ফরিদাবাদ থেকে গ্রেফতার করেছে ।ঘটনার সূত্রপাত সোমবার সন্ধ্যা ৬:৫২ মিনিটের দিকে। লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের গেট নম্বর ১-এর কাছে ভিড়ভাট্টার মধ্যে দিয়ে গাড়িটি এগোচ্ছিল। হঠাৎই একটা প্রচণ্ড আওয়াজের সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে, যা চারপাশে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে দেয়।
স্বস্তির খবর! হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেন বলিউডের ‘হি-ম্যান’ ধর্মেন্দ্র
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গাড়িটির চালক কালো মাস্ক পরা একজন লম্বা দাড়িওয়ালা যুবক—পরে এটি উমর নবী হিসেবে চিহ্নিত হয়। তিনি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামার কয়িল গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় ডাক্তার। ফরিদাবাদের আল ফালাহ ইউনিভার্সিটিতে কাজ করার সময় সে এই জঙ্গি মডিউলের সঙ্গে যুক্ত হয়। পুলিশের ধারণা, উমরই গাড়িতে লোড করা বিস্ফোরকটি ফাটিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দেয়, যাতে সর্বোচ্চ ক্ষয়ক্ষতি হয়।তদন্ত এগোতে গিয়ে পুলিশ গাড়ির ট্র্যাকিংয়ে পৌঁছায়।
এই হুন্ডাই আই-২০-এর আসল মালিক ছিলেন মহম্মদ সালমান, যিনি প্রায় এক বছর আগে এটি একটি ইউজড কার ডিলারশিপে বিক্রি করেন। ফরিদাবাদের রয়্যাল কার জোন নামক এই ডিলারশিপের মালিক সোনু, যিনি আসলে সোনু পটেল নামে পরিচিত, গাড়িটি পরে পুলওয়ামার তারিক নামক এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। তারিকের নামে রেজিস্ট্রেশন করে উমর এটি নিয়ে নেয়। মঙ্গলবার সকালে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের একটি দল ফরিদাবাদে ঝাঁপিয়ে পড়ে। রয়্যাল কার জোনের অফিসে হানা দিয়ে তারা সোনুকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারের সময় সোনুর ফোন বন্ধ ছিল, আর অফিসে পাওয়া গেছে মদের বোতল যা তার সন্দেহজনক জীবনযাত্রার ইঙ্গিত দেয়।সোনুর গ্রেফতার তদন্তকে নতুন গতি দিয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে যে, গাড়িটি তারিককে বিক্রি করার সময় কোনো অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেনি। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কেন তারিকের মতো একজন সাধারণ মানুষের নামে গাড়ি কেনা হল, আর উমর কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করল?
এর পাশাপাশি, আরও তিনজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে—গাড়ির ক্রয়-বিক্রয়ের চেইন থেকে যুক্ত লোকজন। এদের মধ্যে রয়েছে একজন মাউলানা, যার বাড়ি থেকে সন্দেহজনক উপকরণ পাওয়া গেছে। দিল্লি পুলিশের সূত্র জানাচ্ছে, এই গ্রেফতার গুলো থেকে জৈশ-এ-মোহাম্মদ (জেএম) এবং আনসার গজওয়াত-উল-হিন্দের মতো সংগঠনের সঙ্গে যোগসূত্র বেরিয়ে আসছে।এই হামলার পটভূমি আরও গভীর। মাত্র একদিন আগে, সোমবার সকালে ফরিদাবাদে জম্মু-কাশ্মীর এবং হরিয়ানা পুলিশের যৌথ অভিযানে ২৯০০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক পাওয়া যায়।


