দিল্লি বিস্ফোরণে আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই চিকিৎসক আটক

দিল্লি: লালকেল্লার সামনে ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণের তদন্ত আরও জটিল মোড় নিয়েছে। গত সোমবার ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণে ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটার পর দেশজুড়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলির মধ্যে…

delhi-red-fort-blast-nia-decision-on-bengal-doctor

দিল্লি: লালকেল্লার সামনে ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণের তদন্ত আরও জটিল মোড় নিয়েছে। গত সোমবার ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণে ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটার পর দেশজুড়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলির মধ্যে সতর্কতা বৃদ্ধি পায়। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে দিল্লি পুলিশ বিশেষ সেল, এনআইএ ও একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে এখন পর্যন্ত তিন জনকে আটক করেছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন হরিয়ানার আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই চিকিৎসক মোহাম্মদ ও মুস্তাকিম। তাঁরা বিস্ফোরণের দিন গাড়িচালক ড. উমর নাবির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

Advertisements

তদন্তকারী সংস্থাগুলি জানিয়েছে, আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ইউজিসি (UGC) ও ন্যাক (NAAC)–এর রিপোর্টের ভিত্তিতে দু’টি পৃথক এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক অনিয়ম, নথি জালিয়াতি, তথ্য গোপন ও বিধি লঙ্ঘনের মতো গুরুতর ত্রুটি বহুদিন ধরেই চলছিল। শনিবার দিল্লি পুলিশের এক বিশেষ দল ওখলায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসে গিয়ে বিস্তারিত নথি পরীক্ষা করে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।

   

শুক্রবার গভীর রাতে ধাউজ, নুহ ও সংলগ্ন এলাকায় যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে দুই চিকিৎসককে আটক করা হয়। পুলিশ সূত্রের দাবি, মোহাম্মদ ও মুস্তাকিম দু’জনই ড. মুজাম্মিল গণাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন যিনি সম্প্রতি ‘হোয়াইট কলার টেরর মডিউল’ তদন্তে গ্রেফতার হয়েছেন। বিস্ফোরণের দিন আটক চিকিৎসকদের একজন AIIMS–এ ইন্টারভিউ দিতে দিল্লিতে এসেছিলেন বলেও জানা গেছে।

এদিকে, তদন্তে আরেকটি বড় সংযোগ উঠে এসেছে। দিনেশ ওরফে ডাব্বু নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ, যিনি অবৈধভাবে সার বিক্রি করতেন। তদন্তে প্রকাশ, বিস্ফোরণকারীরা মোট ২৬ লক্ষ টাকা জোগাড় করে বিস্ফোরক উপাদান সংগ্রহ করেছিল। এর মধ্যে ৩ লক্ষ টাকা ব্যয় হয় এনপিকে (NPK) সার কেনায় যা বোমা তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সন্দেহ, দিনেশ হয়তো সেই সারের সরবরাহকারী ছিলেন বা তারও বাইরে কোনো বড় ভূমিকায় যুক্ত ছিলেন।

উমর নাবির বিস্ফোরণের আগে গতিবিধি খতিয়ে দেখতে পুলিশ একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। ওয়াজিরপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ায় এক চা দোকানের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, কারণ উমর সেখানে ১০–১৫ মিনিট বসেছিল। দোকানদার জানান, তিনি একটি মাস্ক পরা ব্যক্তিকে দেখেছিলেন কিন্তু সুনির্দিষ্ট কিছু মনে নেই। এছাড়া আসাফ আলি রোডের একটি মসজিদের সিসিটিভিতেও বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে উমরের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। সেই মসজিদের অতিথি খাতা এখন পুলিশ হেফাজতে।

পুলিশ সুনেহরি মসজিদ পার্কিং জোনে বিস্ফোরণের আগে তিন ঘণ্টা গাড়িটি কোথায় কোথায় ছিল তা তালিকাভুক্ত করেছে। ওই সময়ে পার্কিংয়ে প্রবেশ করা প্রতিটি গাড়ির নম্বর, মালিকানা, সময় সব কিছু নথিভুক্ত করা হয়েছে। বিস্ফোরণের সময় উপস্থিত গাড়িগুলি একে একে বোম্ব স্কোয়াড দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

এদিকে, লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের ২ ও ৩ নম্বর গেট, যা বিস্ফোরণের পর নিরাপত্তার কারণে চার দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল, সেগুলি শনিবার থেকে আবার খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন (DMRC)।

এনআইএ ইতোমধ্যেই এই ঘটনার মূল তদন্ত হাতে নিয়েছে। বিস্ফোরণের পেছনে কোনও বৃহত্তর সন্ত্রাস চক্র সক্রিয় কি না, আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও উদ্ধার হওয়া সিসিটিভি প্রমাণে তার ইঙ্গিত মিলতে পারে বলে মনে করছে তদন্তকারী সংস্থা।

Advertisements