নয়াদিল্লি: রাজধানী দিল্লির ঐতিহাসিক লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণ নিয়ে শুরু হয়েছে চূড়ান্ত তদন্ত। ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু ও ২০ জনেরও বেশি মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (NIA) এই কাণ্ডে একটি বিশেষ ১১ সদস্যের তদন্ত দল গঠন করেছে।
দলটির নেতৃত্বে আছেন এনআইএ ডিরেক্টর জেনারেল বিজয় সাখারে, সঙ্গে রয়েছেন একজন ইনস্পেক্টর জেনারেল (IG), দুই ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (DIG), তিনজন সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ (SP) এবং বাকিরা ডিএসপি-স্তরের আধিকারিক।
দিল্লি বিস্ফোরণ কাণ্ডে ফের বিস্ফোরক বিতর্কিত তসলিমা
এই দলটি এখন জম্মু-কাশ্মীর, দিল্লি এবং হরিয়ানা পুলিশের হাতে থাকা জইশ মডিউলের সমস্ত কেস ডায়েরি, প্রমাণ এবং ডিজিটাল নথি নিজেদের হেফাজতে নেবে, যাতে বিস্ফোরণের মূল পরিকল্পনা, আর্থিক উৎস এবং জঙ্গি যোগসূত্র খুঁজে বের করা যায়। সূত্রের খবর, এনআইএ প্রধান ও ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (IB) প্রধান বুধবার এক বৈঠক করবেন, যেখানে গোটা মামলার তদন্তের রূপরেখা নির্ধারণ করা হবে।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের পাশে ঘটে এই বিস্ফোরণ। মুহূর্তের মধ্যে আগুনে পুড়ে যায় গাড়ি ও আশেপাশের দোকানপাট, ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। পরে উদ্ধারকাজে নামে পুলিশ ও দমকল বাহিনী। ওইদিনই ফরিদাবাদে প্রায় ২,৯০০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক, যার মধ্যে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটও ছিল, তা উদ্ধার হয়। দুই দিন আগেই গ্রেফতার হন দুই সন্দেহভাজন ডাক্তার—ড. মুজাম্মিল শাকিল ও ড. আদিল রাঠার, যাঁরা এই মডিউলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন বলে দাবি তদন্তকারীদের।
গোয়েন্দা সূত্রের মতে, বিস্ফোরণের পেছনে থাকা আত্মঘাতী হামলাকারী উমর মোহাম্মদ সম্ভবত ‘ভয়ে’ বা ‘প্যানিক’-এর মুহূর্তে নিজেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফেলেন, কারণ তার সঙ্গীদের গ্রেফতারের খবর তিনি পেয়েছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, উমর বিস্ফোরকটি বয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন অন্য জায়গায়, কিন্তু আতঙ্কে ভুলভাবে ট্রিগার করে ফেলেন।
সাইটের প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কোনও বড় গর্ত বা ক্রেটার তৈরি হয়নি, এবং প্রজেক্টাইল বা মেটাল শার্ডও পাওয়া যায়নি, যা সাধারণত বড় মাপের বিস্ফোরণে থাকে। এই তথ্য থেকে গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, IED বা ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসটি ঠিকভাবে অ্যাসেম্বল করা হয়নি, যার ফলে বিস্ফোরণের প্রভাব সীমিত হয়। তদন্তকারীরা মনে করছেন, সন্দেহভাজনরা সম্ভবত বিস্ফোরক সরানোর বা নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছিলেন, সেই সময়েই দুর্ঘটনা ঘটে।
বর্তমানে ১,০০০-রও বেশি সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে, এবং দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল ফোন টাওয়ার ডেটা ও সোশ্যাল মিডিয়া ট্র্যাফিক বিশ্লেষণ চলছে। গোয়েন্দারা এই বিস্ফোরণের সঙ্গে বিদেশি হ্যান্ডলার বা তহবিল সংযোগ আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখছেন। সূত্রের দাবি, জইশ মডিউলের নির্দেশদাতা ব্যক্তি বিদেশে অবস্থান করছিলেন এবং নিয়মিতভাবে এনক্রিপ্টেড অ্যাপে বার্তা আদানপ্রদান হচ্ছিল।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তদন্তের অগ্রগতি পর্যালোচনা করার পরই মামলাটি এনআইএর হাতে তুলে দেন। তদন্তকারীদের একাংশের মতে, এই বিস্ফোরণ ছিল “একটি ব্যর্থ হামলা” যেখানে পরিকল্পনা ছিল অনেক বড়, কিন্তু কার্যকর করার আগে ভয় ও বিভ্রান্তিতেই বিস্ফোরণ ঘটে যায়।
যদিও তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে, তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কাছে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এই মডিউলের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক কতটা বিস্তৃত, এবং দিল্লি ছাড়াও দেশের অন্য অংশে এর প্রভাব আছে কি না। রাজধানীর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। দেশের অন্যতম সুরক্ষিত অঞ্চলে এমন বিস্ফোরণ প্রশাসনকে ভাবাচ্ছে নতুন করে। আর সেই কারণেই, এই তদন্ত এখন জাতীয় নিরাপত্তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠেছে।


