প্রয়াগরাজের যাত্রাপথে দিল্লী রেলওয়ে স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে মৃত ১৫

দিল্লী রেলওয়ে স্টেশনে (Delhi Railway Station) এক মারাত্মক পদপিষ্ট হয়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। শনিবার রাতে এই ঘটনা ঘটে যখন…

Delhi Railway Station Stampede

দিল্লী রেলওয়ে স্টেশনে (Delhi Railway Station) এক মারাত্মক পদপিষ্ট হয়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। শনিবার রাতে এই ঘটনা ঘটে যখন বহু যাত্রী মাঘ মাসের ধর্মীয় উৎসব ‘মহা কুম্ভ’ উপলক্ষে প্রয়াগরাজের দিকে যাত্রা করার জন্য রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেন ধরতে এসেছিলেন।

এই ঘটনাটি এমন একটি সময়ে ঘটেছে, যখন প্রয়াগরাজ এক বিরাট ধর্মীয় মহোৎসবের আয়োজন করছে৷ যার ফলে রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের তীব্র চাপ ছিল। বেশ কিছু ট্রেন, বিশেষ করে প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস, স্বতন্ত্র সেনানী সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস, এবং ভুবনেশ্বর রাজধানি এক্সপ্রেস, সবই একযোগে একই প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিল, যা যাত্রীদের জন্য এক বিপদজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যাত্রীদের মধ্যে প্রচন্ড ভিড় এবং হুড়োহুড়ির কারণে পদপিষ্ট হয়ে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।

   

দিল্লী রেলওয়ে স্টেশনটির প্ল্যাটফর্ম নং ১৪-এ উপস্থিত যাত্রীরা এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। এর মধ্যে, প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস ট্রেনটি দাঁড়ানোর কারণে সেখানে আগেই অনেক যাত্রী জমায়েত হয়ে গিয়েছিলেন। এরপর, সান্ত্রতা সেনানি এক্সপ্রেস এবং ভুবনেশ্বর রাজধানি এক্সপ্রেস ট্রেনগুলির দেরিতে আসার কারণে আরও অনেক যাত্রী প্ল্যাটফর্মে জমা হয়। এমনকি প্ল্যাটফর্ম নং ১২, ১৩ এবং ১৪ তে হাজার হাজার যাত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন, যার ফলে সেখানকার পরিবেশে এক ধরণের চাপ সৃষ্টি হয়।

গোটা স্টেশন জুড়ে ভিড় এতটা তীব্র হয়ে ওঠে যে, বহু যাত্রী শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন এবং অনেকে অচেতন হয়ে পড়েন। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন যে, প্ল্যাটফর্মে সঠিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পেরে অনেক যাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং তারপর পদপিষ্ট হওয়ার শিকার হন।

দুর্ঘটনার পরপরই, ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব উচ্চ স্তরের তদন্তের নির্দেশ দেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘এটি একটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা এর জন্য একটি উচ্চ-স্তরের তদন্তের ব্যবস্থা নিয়েছি এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’ তিনি আরও বলেন, “এমন ধরনের ঘটনা কখনও কাম্য নয়, তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যাতে আহতদের দ্রুত চিকিৎসা প্রদান করা হয় এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এই ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি টুইটারে বলেন, “নতুন দিল্লী রেলওয়ে স্টেশনে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় আমি অত্যন্ত দুঃখিত। যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আহতদের চিকিৎসা এবং দুর্ঘটনার শিকার পরিবারগুলোর পাশে রয়েছে।”

এদিকে, দিল্লীর আম আদমি পার্টির (AAP) নেতা অতীশি এই ঘটনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ও উত্তরপ্রদেশ সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। কুম্ভমেলা উপলক্ষে ট্রেনের অতিরিক্ত চাপ সম্পর্কে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার এবং উত্তরপ্রদেশ সরকার এই পরিস্থিতিতে একেবারেই উদাসীন ছিল। প্রয়াগরাজে কোনো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না এবং যাত্রীদের জন্য ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ছিল না।’’ অতীশি আরও বলেন, ‘‘এটি আমাদের কর্তব্য ছিল যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কিন্তু তা না হওয়ায় এই ধরনের বিপর্যয় ঘটেছে।”

সংসদীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহও এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি টুইটারে বলেছেন, ‘‘দিল্লী রেলওয়ে স্টেশনে পদপিষ্ট হওয়ার কারণে অনেকের প্রাণহানির খবর শুনে আমি অত্যন্ত দুঃখিত। এই দুঃখজনক সময়ে শোকাহত পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’’

এই দুর্ঘটনার পর, আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য তাদের স্থানীয় লোক নায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ (LNJP) হাসপাতাল এবং অন্যান্য কাছাকাছি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে যাতে তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেতে পারেন।

এই দুর্ঘটনাটি দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং রেলওয়ে স্টেশনগুলির ভিড় ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আরও অনেক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে। বিশেষ করে, যখন দেশের মতো বিশাল ধর্মীয় মেলা যেমন কুম্ভমেলা চলছে, তখন যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং ট্রেন চলাচলের সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দেশবাসীর দাবি, ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে পদক্ষেপ নিতে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে আরও বেশি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।