নয়াদিল্লি: দিল্লির ভয়াবহ বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, কিন্তু তার মাঝেই শোনা গেল এমন স্লোগান, যা মুহূর্তে নাড়া দিল নিরাপত্তা দফতরকে। ‘হিদমা অমর রহে’, বিক্ষোভকারীদের মুখে এই স্লোগান ধরা পড়তেই বিতর্ক দানা বাঁধল। ANI-র শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভকারীরা একাধিকবার মাওবাদী নেতা মাড়ভি হিদমাকে সমর্থন জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, কুখ্যাত মাওবাদী নেতা মাড়ভি হিদমা গত ১৮ নভেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের আল্লুরি সীতারামারাজু জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন। তাঁর মাথায় ছিল ১ কোটি টাকার পুরস্কার। ছত্তিসগড়ের সুকমায় CRPF জওয়ান হত্যাকাণ্ড-সহ একাধিক নৃশংস মাওবাদী হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন হিদমা। দীর্ঘদিন তাঁকে ঘিরে ছিল রহস্য; নিরাপত্তা সংস্থার কাছে তাঁর স্পষ্ট ছবি পর্যন্ত ছিল না—এবছরই মিলেছে প্রথম নিশ্চিত ভিজ্যুয়াল।
বিক্ষোভ থেকে হাসপাতাল: লাল মরিচ ছিটিয়ে পুলিশের উপর হামলা
বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল সি-হেক্সাগনের কাছে। পুলিশ জানিয়েছে, বারবার বোঝানো সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় অবস্থান বদলায়নি, যার ফলে অ্যাম্বুল্যান্স এবং মেডিক্যাল কর্মীদের চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। পরিস্থিতি তীব্র হলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বাধে। অভিযোগ, সেই সময় কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশ কর্মীদের চোখে ও মুখে লাল মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে দেয়—যা নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও শত্রুভাবাপন্ন আচরণ বলে দাবি করা হয়েছে।
ডিসিপি (নতুন দিল্লি) দেবেশ কুমার মাহলা জানিয়েছেন, একাধিক পুলিশ কর্মী জখম হয়েছেন এবং তাঁদের RML হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করে ভারত গেট এলাকায় দাঙ্গা, সরকারি কাজে বাধা ও বিপজ্জনক রাসায়নিক দিয়ে হামলার অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে।
পুলিশের দাবি, ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজন ভারত গেট এলাকা থেকে এবং বাকিরা পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানার সামনে ধরা পড়েছে। আরও অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক ঝড়: বিজেপির তীব্র আক্রমণ Delhi Protest Maoist Slogans
ঘটনায় সরাসরি রাজনৈতিক তাপও বাড়ল। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য। তাঁর বক্তব্য, “দিল্লি দশ বছর ধরে এক আরবান নকশালকে মুখ্যমন্ত্রী করে রেখেছিল। তখন বছরে বছর শহর শ্বাসরোধে মরলেও এই ‘অ্যাকটিভিস্ট’রা কখনও রাস্তায় নামেনি। আর বিজেপি ক্ষমতায় আসতেই হঠাৎ দূষণের নামে বিক্ষোভ—যার ভিতর লুকিয়ে আছে রিগ্রেসিভ কমিউনিস্ট অ্যাজেন্ডা।”
তিনি আরও বলেন, “আজকে আবার সেই পরিচিত মুখ—বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের তথাকথিত কর্মী। বায়ুদূষণের নামে কান্নাকাটি, অথচ হাতে প্ল্যাকার্ড আর মুখে স্লোগান কুখ্যাত নকশাল হিদমাকে মহিমান্বিত করার!”
নিরাপত্তা বলয়ের উদ্বেগ
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীতে বিক্ষোভের নামে মাওবাদী স্লোগান ওঠা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আফস্পা-মুক্ত রাজ্য ও বনাঞ্চলঘেঁষা এলাকায় বাড়তে থাকা বামপন্থী চরমপন্থার প্রভাবের প্রেক্ষাপটে এটিকে হালকা ভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।
পুলিশ সূত্রে খবর, বিক্ষোভের ভিতরে মাওবাদী সমর্থক গোষ্ঠীর ঢুকিয়ে দেওয়া অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মোবাইল ফুটেজ, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ও রুট ম্যাপ মিলিয়ে তদন্ত চলছে।
