নয়াদিল্লি: রাজধানী দিল্লি জুড়ে চলছে পুলিশের বড়সড় অভিযান। নাম ‘অপারেশন ক্লিনসুইপ’। এই অপারেশনের লক্ষ্য ভিসা লঙ্ঘন, মাদক ব্যবসা ও অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ডে যুক্ত বিদেশিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা। ফলাফল মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় ২৬০ জন আফ্রিকান নাগরিক, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মহিলা, ধরা পড়েছেন দিল্লি পুলিশের হাতে।
দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, ডোয়র্কা, উত্তমনগর, জনকপুরী, নাজফগড়, বিকাশপুরী ও পশ্চিম দিল্লির একাধিক এলাকায় একযোগে অভিযান চালানো হয়। অভিযান চালানো হয় স্থানীয় থানার পাশাপাশি ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (FRRO)-এর সহায়তায়।
৮৪ কোটি টাকায় চালু ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্য ক্লিনিক, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, ধৃতদের অনেকেই মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা নিয়েই দেশে অবস্থান করছিলেন। কেউ কেউ পর্যটক ভিসায় এসেছিলেন, কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও থেকে গিয়েছেন। আরও উদ্বেগের বিষয়, কয়েকজন আফ্রিকান নাগরিককে মাদক পাচার চক্রের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বলে সন্দেহ করছে পুলিশ।
দিল্লি পুলিশের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা শুধু অবৈধভাবে থাকা বিদেশিদের নয়, মাদক, মানব পাচার ও জাল নথির চক্র ভাঙার দিকেও জোর দিয়েছি। এই অভিযান শুধু একটি রুটিন রেইড নয়, বরং রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার একটি ধারাবাহিক প্রচেষ্টা।”
সূত্রের খবর, ২৬০ জনের মধ্যে ১৭৫ জনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ডিপোর্টেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যাদের নথি সম্পূর্ণ অবৈধ, তাদের সরাসরি নিজ নিজ দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাকিদের নথি যাচাই চলছে।
পুলিশের দাবি, এই অভিযান কেবল আফ্রিকান নাগরিকদের টার্গেট করেনি, বরং দিল্লি জুড়ে সব অবৈধ বিদেশি কার্যকলাপের উপর এক কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফেক এডমিশন ভিসা, ফেক এমপ্লয়মেন্ট পারমিট এবং ভুয়ো আইডি কার্ড ব্যবহারের ঘটনা। অভিযানের সময় পুলিশের হাতে এসেছে বেশ কিছু নগদ টাকা, নেশাজাত দ্রব্য, জাল পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন ও একাধিক সন্দেহজনক নথি। সবকিছুই ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
দিল্লি পুলিশের মতে, ‘অপারেশন ক্লিনসুইপ’ মূলত একটি মাল্টি-এজেন্সি ইনিশিয়েটিভ, যেখানে FRRO, NCB (নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো) এবং IB (ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো) একসাথে কাজ করছে। এর উদ্দেশ্য—রাজধানীজুড়ে বেআইনি বিদেশি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে একটি দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তোলা। রাজধানীর নাগরিকরাও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। পশ্চিম দিল্লির এক বাসিন্দা বলেন, “আমাদের এলাকায় গত কয়েক মাস ধরে মাদক সংক্রান্ত ঘটনাগুলো বাড়ছিল। এখন পুলিশ নেমে পড়ায় আমরা একটু নিশ্চিন্ত।”
পুলিশ জানিয়েছে, এই অভিযান এখানেই থামবে না। পরবর্তী পর্যায়ে দক্ষিণ দিল্লি, সাকেত, মেহরৌলি ও রোহিণী এলাকাতেও একইভাবে অভিযান চালানো হবে। একজন সিনিয়র অফিসার বলেন, “দিল্লি হলো দেশের রাজধানী, এখানে আইনশৃঙ্খলা ভাঙার কোনোরকম ছাড় নেই।
আমরা চেষ্টা করছি যেন কোনও বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে থেকে না যায়, বা কোনও অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত না হয়।” এইভাবে, ‘অপারেশন ক্লিনসুইপ’ এখন রাজধানীর সুরক্ষা ব্যবস্থার নতুন মাইলফলক হিসেবে ধরা হচ্ছে—একটি বার্তা, ‘আইন সবার জন্য সমান, নাগরিকত্ব নির্বিশেষে।’


