রাজধানী দিল্লির নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে দিল্লি পুলিশ (Delhi Police) রাত্রিকালীন টহলর অংশ হিসেবে একটি বিশেষ নিরাপত্তা অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযান প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে ভোর ২টা পর্যন্ত চলবে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা এবং দিল্লির জনগণের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল কমিশনার গরিমা ভাটনাগর এই অভিযান সম্পর্কে বলেছেন, “একাধিক বৈঠকের পর এবং নতুন সরকার গঠনের পর আমাদের মূল লক্ষ্য হলো অপরাধ আরও কমানো। টহলর সময় পুলিশ কর্মীদের উৎসাহ বৃদ্ধি পায়, এবং আমাদের দায়িত্ব হলো দিল্লিকে নিরাপদ রাখা।”
এই নিরাপত্তা অভিযানের অংশ হিসেবে পুলিশ রাতের বেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় টহল বাড়িয়েছে। রাস্তায় ব্যারিকেড বসিয়ে যানবাহনের তল্লাশি চালানো হচ্ছে এবং সন্দেহজনক গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। গত কয়েক মাসে দিল্লিতে রাতের বেলা বেশ কিছু গুরুতর অপরাধের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে গত নভেম্বরে দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির গোবিন্দপুরী এলাকায় একজন কনস্টেবলের হত্যাকাণ্ড উল্লেখযোগ্য। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে পুলিশ প্রশাসন এই নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
অভিযানের বিস্তারিত পরিকল্পনা
দিল্লি পুলিশের এই রাত্রিকালীন টহল অভিযানে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে, এবং টহল দলগুলোকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। গরিমা ভাটনাগর জানিয়েছেন, “আমরা শহরের প্রতিটি কোণে পুলিশের দৃশ্যমানতা বাড়াতে চাই। রাতের বেলা যানবাহন চেকিং, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং অপরাধপ্রবণ এলাকায় নজরদারি আমাদের মূল লক্ষ্য।” এই অভিযানে মোটরসাইকেল টহল, পায়ে হেঁটে টহল এবং পুলিশ ভ্যানের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছে।
প্রতিটি টহল দলে অস্ত্রধারী পুলিশ কর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে তারা যেকোনো জরুরি পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারে। এছাড়া, প্রতিটি দলের কাছে ওয়্যারলেস সেট এবং যানবাহন পরীক্ষার রেজিস্টার রাখা হয়েছে। এই রেজিস্টারে পরীক্ষিত যানবাহনের বিস্তারিত তথ্য লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। পুলিশের নির্দেশ অনুযায়ী, এই রেজিস্টার না রাখলে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
#WATCH | Delhi: Special CP Law & Order Ravindra Yadav along with other officials reviewed the security of the Delhi CM.
Delhi police is carrying out special night area domination exercise to strengthen security across the national capital. pic.twitter.com/ijnay3OC4o
— ANI (@ANI) March 4, 2025
অভিযানে পুলিশের প্রস্তুতি
দিল্লি পুলিশের এই অভিযানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও সরাসরি অংশ নিচ্ছেন। প্রতিটি থানা স্তরে একজন সাব-ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে টহল দল কাজ করছে। এই দলের সঙ্গে একজন ড্রাইভার এবং একজন অতিরিক্ত অস্ত্রধারী পুলিশ কর্মী থাকছেন। উপ-বিভাগ স্তরে একজন ইন্সপেক্টর এবং জেলা স্তরে একজন সহকারী কমিশনার (এসিপি) টহলর তদারকি করছেন। এছাড়া, প্রতিটি পুলিশ জোনের জন্য একজন ডেপুটি কমিশনার (ডিসিপি) বা অতিরিক্ত ডিসিপি ‘নাইট গেজেটেড অফিসার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পুরো শহরের জন্য একজন অতিরিক্ত কমিশনার বা জয়েন্ট কমিশনার প্রতি রাতে ‘নাইট সুপারভাইজরি অফিসার’ হিসেবে কাজ করছেন।
গরিমা ভাটনাগর আরও জানান, “এই অভিযানের মাধ্যমে আমরা পুলিশ কর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগাতে চাই। যখন তারা রাস্তায় থাকে, তখন জনগণও নিরাপদ বোধ করে।” এই উদ্যোগে পুলিশের বিভিন্ন শাখা যেমন উপকূলীয় নিরাপত্তা, পর্যটক পুলিশ এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাটালিয়ন থেকে অতিরিক্ত জনবল সংগ্রহ করা হয়েছে।
#WATCH | Delhi Police Commissioner Sanjay Arora meets the police officials and reviews the security operation being carried out from 9 pm to 2 am under night patrolling.
(Visuals from Defence Colony) pic.twitter.com/BR92uI8QWf
— ANI (@ANI) March 4, 2025
অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ফোকাস
দিল্লিতে রাতের বেলা অপরাধের হার কমানো এই অভিযানের প্রধান উদ্দেশ্য। গত কয়েক মাসে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রাতে ডাকাতি, চুরি এবং হত্যার মতো ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে দিল্লি পুলিশের এই পদক্ষেপকে অনেকে স্বাগত জানিয়েছেন। রোহিণি জেলার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “আমরা পুরোপুরি অ্যাকশন মোডে আছি। রাতে রাস্তায় আমাদের উপস্থিতি অপরাধীদের মনে ভয় তৈরি করবে।”
এছাড়া, এই অভিযানের অংশ হিসেবে শহরের প্রতিটি প্রধান চৌরাস্তায় ব্যারিকেড স্থাপন করা হয়েছে। যানবাহনের তল্লাশির পাশাপাশি সন্দেহজনক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশের মতে, এই পদক্ষেপ অপরাধীদের পরিকল্পনা ব্যর্থ করতে এবং জনগণের মধ্যে নিরাপত্তার বোধ জাগাতে সাহায্য করবে।
জনগণের প্রতিক্রিয়া
দিল্লির বাসিন্দারা এই অভিযানকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন। দক্ষিণ দিল্লির বাসিন্দা রাকেশ শর্মা বলেন, “রাতে রাস্তায় পুলিশ দেখলে আমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারি। এটা একটা ভালো উদ্যোগ।” তবে, কেউ কেউ মনে করেন যে শুধু টহল বাড়ালেই অপরাধ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। উত্তর দিল্লির একজন দোকানদার রমেশ গুপ্তা বলেন, “পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো ভালো, কিন্তু অপরাধের মূল কারণগুলোর সমাধানও দরকার।”
#WATCH | Delhi: On team India’s victory against Australia in the semi-finals of the ICC Champions Trophy, Congress leader Shama Mohamed says, “I am very happy today that India has won the semi-final match against Australia under the captaincy of Rohit Sharma. I congratulate Virat… pic.twitter.com/UbRi2k3lqs
— ANI (@ANI) March 4, 2025
টহলের সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ
প্রথম দিনের অভিযানে পুলিশ বেশ কয়েকটি সন্দেহজনক যানবাহন আটক করেছে এবং কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেছে। গরিমা ভাটনাগর জানান, “আমরা প্রতিদিনের ফলাফল পর্যালোচনা করব এবং প্রয়োজনে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনব।” তবে, এই অভিযানের সাফল্য নির্ভর করবে পুলিশের ধারাবাহিকতা এবং জনগণের সহযোগিতার ওপর। রাতের বেলা শহরের বিস্তৃত এলাকা কভার করা এবং পর্যাপ্ত জনবল বজায় রাখা পুলিশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
দিল্লি পুলিশ এই অভিযানকে দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচিতে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা করছে। গরিমা ভাটনাগর বলেন, “এটা শুধু একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা নয়। আমরা চাই দিল্লি সব সময় নিরাপদ থাকুক।” এছাড়া, শহরের জেজে ক্লাস্টারগুলোতে পুলিশ বুথ স্থাপন এবং অপরাধপ্রবণ এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের মতে, এই পদক্ষেপগুলো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী সমাধান আনতে সাহায্য করবে।
দিল্লি পুলিশের এই রাত্রিকালীন নিরাপত্তা অভিযান শহরের নাগরিকদের জন্য একটি আশার আলো হয়ে উঠেছে। রাত ৯টা থেকে ভোর ২টা পর্যন্ত চলা এই টহল অপরাধীদের মনে ভয় তৈরি করার পাশাপাশি জনগণের মধ্যে নিরাপত্তার বোধ ফিরিয়ে আনছে। গরিমা ভাটনাগরের নেতৃত্বে পুলিশ এই উদ্যোগকে সফল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে, এই অভিযানের সাফল্য নির্ভর করবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং জনগণের সহযোগিতার ওপর। দিল্লিকে একটি নিরাপদ শহরে পরিণত করার এই প্রয়াস জনমনে নতুন আশা জাগিয়েছে।