সোমবার দিল্লি-এনসিআর এলাকায় পথের কুকুরদের (Dog Crisis) নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দিল্লি-নয়েডা-গাজিয়াবাদ-গুরুগ্রামসহ এনসিআর-এর সব কুকুরকে বসতি এলাকা থেকে সরিয়ে শেল্টারে নিয়ে যাওয়া হবে। এই কঠোর পদক্ষেপটি জনগণের নিরাপত্তার জন্য গৃহীত হয়েছে, যেহেতু সাম্প্রতিক বছরে কুকুরের কামড় এবং র্যাবিজে মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি পশু অধিকার সমর্থকদের আবেগপ্রবণ আপত্তির ওপরও প্রভাব ফেলেছে, যিনি এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন।
সিদ্ধান্তের পটভূমি
দিল্লি-এনসিআর এলাকায় স্ট্রে কুকুরদের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কুকুরের কামড়ের ঘটনা বেড়ে গেছে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৭,০০০, যা ২০২৫ সালে ১৭,০০০-এর বেশি হয়ে গেছে। আরও ভয়াবহ হলো র্যাবিজে মৃত্যুর হার, যা প্রতি বছর ভারত জুড়ে ১৮,০০০ থেকে ২০,০০০ জনকে আক্রান্ত করে, যার ৯৫-৯৭% ক্ষেত্রে কুকুরের কামড়ই দায়ী। ২০১৯ সালের একটি গবেষণা (PMC) এই তথ্য উল্লেখ করেছে যে র্যাবিজ প্রতিরোধে প্রয়োগ করা হয়নি যথেষ্ট পদক্ষেপ। এই বিপদজনক পরিস্থিতি বিশেষ করে শিশু এবং বৃদ্ধদের জন্য ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে। এই কারণেই সুপ্রিম কোর্ট জনস্বাস্থ্যের দিক থেকে এই দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ, যিনি এই মামলা শুনছিলেন, জানিয়েছেন যে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি এই পদক্ষেপের পথে বাধা সৃষ্টি করলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া, কুকুর গুলোকে শেল্টারে স্থানান্তর করার কাজে কোনো ব্যক্তি তাদের দত্তক গ্রহণের মাধ্যমে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না। এই নিষেধাজ্ঞা সোলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার পরামর্শের ওপর ভিত্তি করে গৃহীত হয়েছে, যিনি জানিয়েছেন যে কুকুর গুলোকে পুনরায় রাস্তায় ফেলে দেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এই কারণে দিল্লি-এনসিআর এলাকার নাগরিক কর্তৃপক্ষদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তারা দ্রুত কুকুর শেল্টার নির্মাণ করবে এবং র্যাবিজের বিরুদ্ধে প্রতিভাষী প্রস্তুত করবে।
পূর্ববর্তী প্রচেষ্টার অকার্যকারিতা
বছরের পর বছর ধরে ভারত সরকার কুকুরের জন্য পশু শেল্টার, ভর্তুকি, ব্যাপক টিকাকরণ এবং নির্যাতন বন্ধ করার জন্য ক্রোড় টাকা বরাদ্দ করেছে। তবে, এই তহবিলগুলোর ব্যবহার ও ফলাফল নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের মতে, এই তহবিলগুলো কোথায় গেছে এবং কেন এই সমস্যা এখনও সমাধান হয়নি, তা নিয়ে হিসেব দিতে হবে। এই অকার্যকারিতা সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে আরও জরুরি করে তুলেছে।
প্রতিক্রিয়া এবং চ্যালেঞ্জ
এই সিদ্ধান্তের পর থেকে বিভিন্ন দিক থেকে প্রতিক্রিয়া আসছে। কিছু ব্যক্তি এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন, যেহেতু রাস্তায় কুকুরের হামলা থেকে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। তবে, পশু অধিকার সমর্থকরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন এবং জানাচ্ছেন যে কুকুরদের শেল্টারে রাখার পর তাদের যথাযথ যত্ন নেওয়া সম্ভব হবে কি না। তাদের দাবি, এই শেল্টারগুলো যথেষ্ট সংখ্যায় নির্মিত হলে বা যথাযথ পরিচর্যা পেলে কী হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
একই সময়ে, ভারতের ব্যুরোক্রেটিক ব্যবস্থার ধীরগতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সামাজিক মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন যে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ১২ বছর লাগতে পারে, কারণ ভারতের প্রশাসনিক ব্যবস্থা সাধারণত এমন বড় প্রকল্পে দেরি করে। তবে, দিল্লি সরকার জানিয়েছে যে তারা এই আদেশের সময়োপযোগী বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে।
ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা
এই সিদ্ধান্তের সফল বাস্তবায়নের জন্য নাগরিক কর্তৃপক্ষদের কাছে দ্রুত কাজ শুরু করা জরুরি। শেল্টার নির্মাণ, কুকুরদের স্থানান্তর এবং র্যাবিজ প্রতিরোধের জন্য টিকাকরণ প্রক্রিয়া সমন্বিতভাবে পরিচালনা করতে হবে। এর পাশাপাশি, তহবিলের ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও দায়িত্ব নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি এই পদক্ষেপ সফল হয়, তবে এটি শুধুমাত্র দিল্লি-এনসিআর-এর মানুষের জন্য নয়, সমগ্র ভারত জুড়ে স্ট্রে কুকুর সমস্যা সমাধানের একটি মডেল হতে পারে।
তবে, এই পদক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ও পশুদের জন্য একটি সুষম ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার দায়িত্বও সরকারের ওপর রয়েছে। পশু কল্যাণ এবং মানব নিরাপত্তা উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করা একটি চ্যালেঞ্জ হবে, তবে এটি সম্ভব যদি সকলের সহযোগিতা থাকে। সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, এবং এটি কীভাবে এগোবে, তা ভবিষ্যতে পরিষ্কার হবে।