দিল্লি (Delhi) পুলিশের দক্ষিণ-পশ্চিম জেলার অপারেশন টিম অবৈধ তামাকজাত পণ্যের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের অভিযান চালিয়ে ৯৪,০০০ সিগারেট বাজেয়াপ্ত করেছে। এই অভিযানে একটি গুদাম থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সিগারেট উদ্ধার করা হয় এবং দুজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে এই অবৈধ সরবরাহ চক্র সক্রিয় ছিল এবং এটি আরও বিস্তৃত হচ্ছিল বলে জানা গেছে।
দক্ষিণ-পশ্চিম জেলার অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ (এডিসিপি) ঐশ্বর্যা সিং(Delhi) বলেন, “আমাদের অপারেশন টিম অবৈধ তামাকজাত পণ্যের বিরুদ্ধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই অভিযান তারই একটি ফলাফল। আমরা এই চক্রের পেছনের নেটওয়ার্ক উন্মোচন করতে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।”
অভিযানটি দিল্লির দক্ষিণ-পশ্চিম (Delhi) জেলার একটি গুদামে সংঘটিত হয়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ গত রবিবার রাতে এই অভিযান চালায়। গুদাম থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৯৪,০০০ সিগারেট বাজেয়াপ্ত করা হয়, যেগুলো অবৈধভাবে সংগ্রহ ও বিক্রি করা হচ্ছিল। এই সিগারেটগুলোর মধ্যে কিছু বিদেশি ব্র্যান্ডের ছিল, যা ভারতে কর ফাঁকি দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে আনা হয়েছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
গ্রেফতার হওয়া দুজন অভিযুক্তের নাম শরণ্য সিং এবং মোহিত কুমার। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, এই চক্র দিল্লি-এনসিআর (Delhi) ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তারের পরিকল্পনা করছিল। ঐশ্বর্যা সিং জানান, “এই অভিযান আমাদের অবৈধ তামাকজাত পণ্যের বিরুদ্ধে চলমান প্রচেষ্টার একটি অংশ।
এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে দিল্লি-এনসিআরে (Delhi) সক্রিয় ছিল এবং তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের চেষ্টা করছিল। আমরা তাদের সরবরাহ চেইন, উৎস এবং ক্রেতাদের শনাক্ত করতে তদন্ত করছি।” তিনি আরও বলেন, জব্দ করা সিগারেটগুলোর বাজার মূল্য প্রায় ১.৫ কোটি টাকা এবং এই অবৈধ ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত অর্থ অপরাধমূলক কার্যকলাপে ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অভিযানের সময় পুলিশ গুদাম থেকে সিগারেট ছাড়াও প্যাকেজিং সামগ্রী, বিল এবং অন্যান্য নথি জব্দ করেছে, যা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। পুলিশ সন্দেহ করছে, এই চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চোরাচালান নেটওয়ার্কের যোগাযোগ থাকতে পারে।
এই বিষয়ে কাস্টমস বিভাগ এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে তদন্ত চালানো হচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে চোরাচালান, প্রতারণা এবং অবৈধ ব্যবসা।
অবৈধ তামাকজাত (Delhi) পণ্যের ব্যবসা ভারতে একটি গুরুতর সমস্যা। এই ধরনের কার্যকলাপ শুধু সরকারের রাজস্ব ক্ষতি করে না, বরং জনস্বাস্থ্যের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে অবৈধ তামাকজাত পণ্যের বাজার প্রায় ৩০% শেয়ার ধরে রাখে, যা সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করে। দিল্লি-এনসিআর অঞ্চল এই ধরনের অবৈধ ব্যবসার একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
এই অভিযানে দিল্লি পুলিশের তৎপরতা প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে, রাজনৈতিক মহল থেকে এই ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একটি রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র বলেন, “এই ধরনের অভিযান জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দিল্লি পুলিশের এই পদক্ষেপ প্রশংসনীয়।” তবে, বিরোধী দলের এক নেতা বলেন, “এই ধরনের অভিযান শুধুমাত্র মিডিয়ার মনোযোগ আকর্ষণের জন্য নয়, তবে এর পেছনের বৃহত্তর নেটওয়ার্ক উন্মোচন করা জরুরি।”
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করতে ব্যস্ত ভারত, অপারেশন সিঁদুরের পর গতি পেল ৫২টি স্যাটেলাইট প্রোগ্রাম
সামাজিক মাধ্যমে এই অভিযান নিয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। একজন নেটিজেন লিখেছেন, “অবৈধ সিগারেটের ব্যবসা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, তরুণ প্রজন্মের স্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি। পুলিশকে আরও কঠোর হতে হবে।” আরেকজন লিখেছেন, “এই চক্রের মূল মাথা কারা? শুধু ছোট মাছ ধরলে হবে না।”
পুলিশ এখন বাজেয়াপ্ত সিগারেটের উৎস এবং এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে তদন্ত করছে। এডিসিপি সিং জানিয়েছেন, “আমরা এই নেটওয়ার্কের পেছনের মূল হোতাদের ধরতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই অভিযান কেবল শুরু।” তিনি আরও বলেন, দিল্লির বিভিন্ন বাজারে অবৈধ তামাকজাত পণ্যের সরবরাহ বন্ধে পুলিশ নিয়মিত নজরদারি করছে।
এই ঘটনা জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে অবৈধ ব্যবসার বিস্তৃত নেটওয়ার্কের উপর আলোকপাত করেছে। তদন্তের অগ্রগতি এবং এই চক্রের পেছনের মূল হোতাদের শনাক্তকরণ এই মামলার ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে। দিল্লি পুলিশের এই অভিযান অবৈধ তামাকজাত পণ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।