নয়াদিল্লি, ১২ নভেম্বর — দিল্লির লালকেল্লা মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসলামাবাদে ভয়াবহ আত্মঘাতী বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, যাতে কমপক্ষে ১২ জন নিহত এবং ২১ জনের মতো আহত হয়েছে। দুই ঘটনার সময়গত ঘনিষ্ঠতা স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নজর কেড়েছে। ভারতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে সীমান্ত–পারের নিরাপত্তা গতিবিধিগুলো বেশি গুরুত্ব পায়।
এই অবস্থায় আফগানিস্তানের কিছু সংবাদমাধ্যম একটি বিতর্কিত দাবি করেছে—তাদের মতে, ইসলামাবাদের আত্মঘাতী বিস্ফোরণটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ শক্তি–রাজনীতির অংশ এবং এই বিস্ফোরণের উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় প্রতিক্রিয়া এড়ানো। আফগান সংবাদমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী, পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ভারতীয় প্রতিক্রিয়া প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে কৌশলগত পরিকল্পনা করছে।
ভারতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এসব দাবি নিয়ে সতর্ক। তাঁদের মতে, “যে কোনো আন্তর্জাতিক বিস্ফোরণ বা সন্ত্রাসী ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল থেকে নানা তত্ত্ব বা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ প্রচারিত হয়। সরকারি যাচাই ছাড়া নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত নয়।”
ভারতের উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তা প্রশাসন থেকে এখনও দিল্লি বিস্ফোরণ বা ইসলামাবাদ বিস্ফোরণের মধ্যে সরাসরি কোনও সংযোগের বিষয়ে মন্তব্য করা হয়নি। দিল্লির ঘটনায় তদন্ত চলছে, ফরেনসিক রিপোর্ট এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে।
ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এই দুটি বিস্ফোরণ নিয়ে তিনটি বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে:
🔹 ১. সময়ের ঘনিষ্ঠতা
দুটো বিস্ফোরণ প্রায় একই দিনে ঘটেছে। সময়গত মিল আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের আগ্রহ বাড়াচ্ছে।
🔹 ২. সীমান্ত–পারের সন্ত্রাসবাদ নিয়ে উদ্বেগ
ভারত বহুদিন ধরেই সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে সরব। দিল্লির ঘটনায় জইশ-ই-মহম্মদের নাম উঠে আসায় পাকিস্তান–ভিত্তিক সন্ত্রাস নেটওয়ার্কের কার্যকলাপ নিয়েও নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
🔹 ৩. পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অবস্থার প্রতিফলন
ইসলামাবাদের বিস্ফোরণ পাকিস্তানে চলমান রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত সংকটের প্রতিফলন বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে সন্ত্রাসী হামলার বৃদ্ধি আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
একজন ভারতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেন, “আমরা দেখছি আফগান মিডিয়া যেসব দাবি করছে, সেগুলো তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অঞ্চলীয় অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে বলা। ভারতের দৃষ্টিতে যেটা জরুরি— দিল্লির বিস্ফোরণের পেছনে কারা, কেন, এবং কীভাবে ঘটলো—তার স্পষ্ট তদন্ত।”
তিনি আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক পরিবেশ খুব সংবেদনশীল। তাই যাচাইহীন দাবির ভিত্তিতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।”
ভারতীয় প্রশাসনের বক্তব্য স্পষ্ট —
দিল্লির বিস্ফোরণ নিয়ে কঠোর তদন্ত চলছে, আর জাতীয় নিরাপত্তা কোনওভাবেই হালকাভাবে নেওয়া হবে না।
ইসলামাবাদ বিস্ফোরণ নিয়ে ভারত সরকার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং সংবেদনশীল এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।


