নয়াদিল্লি: লালকেল্লার কাছে হুন্ডাই আই২০ বিস্ফোরণ (Delhi blast ) মামলায় এখন বহু রহস্য জটিল গিঁট তৈরি করেছে। গাড়িটির মালিকানা বদলের ইতিহাস, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে মিল, এবং ফারিদাবাদ–পুলওয়ামা সংযোগ—সবই তদন্তকারীদের নজরে এসেছে। একদিকে ২৯০০ কেজি আইইডি তৈরির সামগ্রী উদ্ধার, অন্যদিকে দিল্লির ঐতিহাসিক স্থাপনার কাছে বিস্ফোরণ—সব মিলিয়ে এই ঘটনাগুলো এলোমেলো মনে হলেও এর মধ্যে কিছু অস্বাভাবিক ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে।
তদন্ত সূত্রে জানা যায়, বিস্ফোরণের শিকার আই২০ গাড়িটি প্রথমে ছিল মোহাম্মদ সলমনের নামে। পরে তা বিক্রি হয় নাদিমের কাছে, এরপর একটি ব্যবহৃত গাড়ির দোকান—রয়্যাল কার জোন, ফারিদাবাদে। সেখান থেকে গাড়িটি কিনেছিলেন তারিক। এই তারিক কিছুদিন ধরেই ফারিদাবাদে বাস করছিলেন, যদিও তাঁর বাড়ি পুলওয়ামায়।
ঠিক এই সময়ে আরেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে—ড. মুজ্জামিল শাকিল নামে এক চিকিৎসককে গ্রেফতার করা হয়, যাঁর বাসাও ছিল ফারিদাবাদে, এবং তিনিও মূলত পুলওয়ামার বাসিন্দা। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হয় প্রায় ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক তৈরির উপাদান, ২০টি টাইমার এবং অন্যান্য সন্দেহজনক সরঞ্জাম।
এই দুটি ঘটনার মধ্যে মানবিক ও ভৌগোলিক মিল থাকায় তদন্তকারীরা এখন দুই পক্ষের লিংক খুঁজছেন। তবে পুলিশ বা কেন্দ্রীয় কোনো সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো এই দুই ঘটনার মধ্যে প্রত্যক্ষ যোগ থাকার কথা ঘোষণা করেনি। তদন্ত চলছে বহুমুখীভাবে—ফরেনসিক বিশ্লেষণ, কল ডাটা রেকর্ড, ব্যাংক লেনদেন, ডিজিটাল যোগাযোগ—সবই যাচাই করা হচ্ছে।
গাড়ির শেষ মালিক তারিকের আচরণও এখন তদন্তে কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর চলাফেরার প্যাটার্ন, ফোন রেকর্ড, আর্থিক লেনদেন, পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ—সব খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে দেখা হচ্ছে ড. মুজ্জামিলের গ্রেফতারের পর এলাকায় কোন নেটওয়ার্ক সক্রিয় ছিল কি না।
তদন্তকারীরা বলছেন, ফারিদাবাদে একই অঞ্চলের ব্যক্তিদের উপস্থিতি “সংকেতবাহী” হলেও সেটা সরাসরি অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র প্রমাণ করে না। তবে ঘটনাগুলো যে কাকতালীয় নয়, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তদন্ত চলমান।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনাকে সাধারণত তিন স্তরে বিচার করা হয়—
১) অবস্থানগত মিল
২) সামাজিক–মানসিক সংযোগ
৩) লজিস্টিক নেটওয়ার্ক
এই তিনটির মধ্যে অন্তত দুটি মিলছে—এটাই এখন তদন্তের মূল ফোকাস।
ড. মুজ্জামিলের গ্রেফতারের পর ২৯০০ কেজি আইইডি–সামগ্রী উদ্ধার হওয়া নিরাপত্তা দপ্তরকে বড় বার্তা দিয়েছে। এ ধরনের উপকরণ একা কেউ সংগ্রহ করতে পারে না; এর পেছনে থাকে নেটওয়ার্ক, অর্থের যোগান, এবং পরিকল্পনা।
আই২০ বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে একইভাবে দেখা হচ্ছে—এটি দুর্ঘটনা, নাকি পরিকল্পিত বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের প্রকৃতি, গাড়ির ভেতরের অবস্থা, রাসায়নিক অবশিষ্টাংশ—সব বিশ্লেষণ চলছে।
পুলিশের মতে, এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না। আগে তথ্য জোগাড় করতে হবে, তারপর সিদ্ধান্ত। বর্তমানে কোনো সম্ভাবনাকেই বাদ দেওয়া হচ্ছে না।
নিরাপত্তা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, “দুটি ঘটনা খুবই সংবেদনশীল। তাড়াহুড়ো করলে ভুল পথে তদন্ত চলে যেতে পারে। ধৈর্য ধরে প্রমাণ সংগ্রহই এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
পুরো দেশের নজর এখন তদন্তের ওপর। জঙ্গি-নেটওয়ার্কের সম্ভাব্য উপস্থিতি, রাজধানীর কাছে বিস্ফোরণ, বিশাল পরিমাণ আইইডি—এই সবই প্রমাণ করে, ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। তদন্ত এগোচ্ছে ধীরে ধীরে, তবে পরিষ্কার—প্রশ্ন অনেক, উত্তর এখনও অজানা।


