দিল্লির ওল্ড রাজেন্দ্ররনগর এলাকায় কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে জল ঢুকে তিন শিশুর মৃত্যুর তদন্ত করবে সিবিআই। শুক্রবার এই নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। এ দিন শুনানি চলাকালীন, দিল্লি হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মনমোহন এবং বিচারপতি তুষার রাও গেদেলার ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ঘটনার প্রকৃতি বিবেচনা করতে এবং তদন্ত নিয়ে যাতে সাধারণ মানুষের মনে কোনও সন্দেহ না থাকে, তা নিশ্চিত করতেই তদন্তভার সিবিআই-কে হস্তান্তরিত করা হল।
হাইকোর্ট, সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনকে সিবিআই তদন্ত পর্যবেক্ষণের জন্য একজন আধিকারিককে মনোনীত করার নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশে উল্লেখ, “সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনকে (সিভিসি) সিবিআইয়ের তদন্তকে দেখভালের জন্য একজন আধিকারিককে মনোনীত করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
দিল্লির কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে জল ঢুকে পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনার নেপথ্যে সরকারি আধিকারিকদের দুর্নীতির যোগ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিচারপতিরা।
এ দিনের শুনানিতে, পুর কর্তৃপক্ষের ভূমিকার নিন্দা করেছে উচ্চ আদালত। কেন ওই এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক ছিল না, কী ভাবে এত জল জমল, কেনই বা প্রশাসনের চোখের সামনে অনুমতি ছাড়া বেআইনি ভাবে কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে লাইব্রেরি চালানো হচ্ছিল, সে সব প্রশ্ন করেন বিচারপতি। আদালতের পর্যবেক্ষণ, রাস্তায় জল জমে থাকা সাধারণ ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। এই সমস্যাকে গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না পুরসভার তরফে। সেই গাফিলতিরই ফল রাজেন্দ্রনগরের ঘটনা।
এসইউভি গাড়ির চালক মনুজ কাঠুরিয়ার বিরুদ্ধে পুলিশি পদক্ষেপ ‘অনুচিত’ বলেও উল্লেখ করেছে দিল্লি হাইকোর্ট। পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করতে গিয়ে বিচারপতি তদন্তকারী আধিকারিকের উদ্দেশে বলেন, ‘”যে ভাবে আপনারা গাড়ির চালককে গাড়ি চালানোর অপরাধে গ্রেফতার করেছিলেন, তাতে আপনারা যে বেসমেন্টে ঢুকে পড়ার অপরাধে জলের কাছ থেকে জরিমানা চেয়ে বসেননি, সেটাই স্বস্তির।”
বৃহস্পতিবারই ধৃত এসইউভি চালক মনুজ কাঠুরিয়া নিম্ন আদালত থেকে জামিন পেয়ে গিয়েছিলেন। তাঁকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশের ডিসিপি সেন্ট্রাল জানিয়েছিলেন, ওই ব্যক্তিকে জমা জলের উপর দিয়ে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে দেখা গিয়েছিল। সেই জলের ধাক্কাতেই বেসমেন্টের দরজাটি ভেঙে যায় এবং জল ঢুকে তিন পড়ুয়ার মৃত্যু হয়। প্রথমে নিম্ন আদালত মনুজ খাটুরিয়া নামের ওই চালকের জামিন খারিজ করে দিয়েছিল। তাঁকেও বাকিদের সঙ্গে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছিল। পরে জামিন পান এই গাড়ির চালক।
গত ২৭ জুলাই রাজেন্দ্রনগরের একটি কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে আচমকা বৃষ্টির জল ঢুকে যায়। বেসমেন্টের লাইব্রেরিতে পড়ুয়ারা ছিলেন। জল ঢুকতে দেখে অনেকেই দ্রুত উপরে উঠে আসেন। কিন্তু তিন পড়ুয়া বেরিয়ে আসার সময় পাননি। জলে ডুবে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। তিন জনেই আইএএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অভিযোগ, বেআইনি ভাবে বেসমেন্টে লাইব্রেরি চালানো হচ্ছিল। ওই বেসমেন্ট কেবল গাড়ি পার্কিং এবং গুদামঘর হিসাবে ব্যবহারের ছাড়পত্র ছিল। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কোচিং সেন্টারের মালিক সহ ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।