রামদেবের ‘শরবত জিহাদ’ মন্তব্যে দিল্লি হাইকোর্টের কঠোর প্রতিক্রিয়া

দিল্লি হাইকোর্ট মঙ্গলবার পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের প্রতিষ্ঠাতা বাবা রামদেবের (ramdev) বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। তিনি হামদর্দ এবং তাদের জনপ্রিয় পানীয় রূহ আফজাকে টার্গেট করে ‘শরবত…

ramdev acused for sharbat jihad

দিল্লি হাইকোর্ট মঙ্গলবার পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের প্রতিষ্ঠাতা বাবা রামদেবের (ramdev) বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। তিনি হামদর্দ এবং তাদের জনপ্রিয় পানীয় রূহ আফজাকে টার্গেট করে ‘শরবত জিহাদ’ বলে সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করেছিলেন।

   

হামদর্দের আইনি আবেদন (ramdev)

হামদর্দের আইনি আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি আমিত বনসল এই মন্তব্যকে “আদালতের বিবেককে ধাক্কা দেওয়া” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই মামলার পরবর্তী শুনানি দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজনের অভিযোগে বাবা রামদেবের (ramdev) ভাবমূর্তির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

হামদর্দ, যিনি ভারতের ঐতিহ্যবাহী ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ এবং পানীয় উৎপাদনের জন্য পরিচিত, তাদের ফ্ল্যাগশিপ পণ্য রূহ আফজাকে কেন্দ্র করে রামদেবের মন্তব্যের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে। রূহ আফজা, যা এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় বাজারে একটি প্রিয় পানীয়, হামদর্দের ব্র্যান্ড মূল্য এবং ঐতিহ্যের প্রতীক।

রামদেবের ‘শরবত জিহাদ’ মন্তব্য

রামদেবের (ramdev) ‘শরবত জিহাদ’ মন্তব্য, যা সামাজিক মাধ্যমে এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়েছে, রূহ আফজার সঙ্গে ধর্মীয় বিভাজনের ইঙ্গিত দেয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এই মন্তব্যকে হামদর্দ তাদের ব্র্যান্ডের মানহানি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে।

বিচারপতি বনসল বলেন

বিচারপতি বনসল শুনানির সময় বলেন, “এই ধরনের মন্তব্য শুধুমাত্র একটি ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি সমাজে বিভাজন সৃষ্টির প্রচেষ্টা। এটি আদালতের বিবেককে গভীরভাবে আঘাত করে।” হামদর্দের আইনজীবী আদালতে যুক্তি দিয়েছেন যে, রামদেবের (ramdev) মন্তব্য তাদের ব্র্যান্ডের সুনামের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে এবং এটি ভোক্তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। তারা আরও দাবি করেছেন যে, এই ধরনের বিবৃতি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে, যা দেশের বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতিতে অত্যন্ত বিপজ্জনক।

সপ্তম স্থানে থেকেও জটিল অঙ্কে প্লে-অফের আশা জাগাচ্ছে KKR

রামদেবের পক্ষের আইনজীবীরা

রামদেবের (ramdev) পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছেন যে, তাঁর মন্তব্য ব্যক্তিগত মতামতের অংশ এবং এটি কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায় বা ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে লক্ষ্য করা হয়নি। তারা দাবি করেছেন যে, ‘শরবত জিহাদ’ শব্দটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছিল এবং এর পিছনে কোনও মানহানিকর উদ্দেশ্য ছিল না। তবে, আদালত এই যুক্তি প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করেনি এবং রামদেবের মন্তব্যের প্রেক্ষাপট এবং প্রভাব নিয়ে আরও বিস্তারিত শুনানির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে।

ক্ষতিপূরণের দাবি

হামদর্দ তাদের আবেদনে রামদেবের বিরুদ্ধে আইনি নিষেধাজ্ঞা এবং ক্ষতিপূরণের দাবি করেছে। তারা বলেছে যে, রূহ আফজা কেবল একটি বাণিজ্যিক পণ্য নয়, বরং এটি ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অংশ, যা সকল সম্প্রদায়ের মানুষ গ্রহণ করেছে। রামদেবের মন্তব্য এই ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করেছে এবং ব্র্যান্ডের বাজার মূল্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

আইনি চ্যালেঞ্জ

এই ঘটনা পতঞ্জলি এবং রামদেবের জন্য আরেকটি আইনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঠে এসেছে। এর আগেও পতঞ্জলির পণ্যের গুণগত মান এবং বিজ্ঞাপনের দাবি নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি পতঞ্জলির বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের জন্য রামদেব এবং তাঁর সহযোগী আচার্য বালকৃষ্ণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, ‘শরবত জিহাদ’ মন্তব্য নিয়ে নতুন এই বিতর্ক রামদেবের জন্য আরও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ফেলেছে। অনেকে রামদেবের মন্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং বিভাজনকারী হিসেবে সমালোচনা করেছেন, অন্যরা তাঁর বক্তব্যের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। হামদর্দের সমর্থকরা বলছেন যে, রূহ আফজার মতো একটি ব্র্যান্ডকে ধর্মীয় রঙ দেওয়ার চেষ্টা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

পরবর্তী শুনানি

আদালতের পরবর্তী শুনানিতে রামদেবের মন্তব্যের উদ্দেশ্য এবং এর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। হামদর্দের আইনজীবীরা আরও প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন, যা রামদেবের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। এই মামলার ফলাফল শুধুমাত্র হামদর্দ এবং পতঞ্জলির মধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেই নয়, বরং ভারতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং দায়িত্বশীল বক্তব্যের বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

এই ঘটনা ব্যবসায়ী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জন্য একটি শিক্ষা হিসেবে কাজ করতে পারে যে, সামাজিকভাবে সংবেদনশীল বিষয়ে মন্তব্য করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। দিল্লি হাইকোর্টের এই মামলার চূড়ান্ত রায়ের দিকে সকলের দৃষ্টি থাকবে।

Advertisements