১৯৮৪ সালের ১২৫ দাঙ্গা বিধ্বস্ত শিখ পরিবারকে চাকরির নিয়োগপত্র দিল্লি সরকারের

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা (delhi-government) এবং মন্ত্রিসভার মন্ত্রী মঞ্জিন্দর সিং সিরসা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ন্যায়বিচার প্রদানের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন। সোমবার আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তাঁরা…

delhi-government announcement for sikh

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা (delhi-government) এবং মন্ত্রিসভার মন্ত্রী মঞ্জিন্দর সিং সিরসা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ন্যায়বিচার প্রদানের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন। সোমবার আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তাঁরা ১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ১৯ জন সদস্যের হাতে সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন। এই উদ্যোগের আওতায় মোট ১২৫ জন দাঙ্গা-কবলিত ব্যক্তিকে চাকরি প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে। এই পদক্ষেপকে দাঙ্গার শিকার পরিবারগুলোর জন্য ন্যায়বিচার এবং সমর্থনের একটি প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা বলেন (delhi-government)

মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা এই অনুষ্ঠানে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর(delhi-government) নির্দেশনায়, দিল্লি সরকার ১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ১২৫ জন সদস্যের জন্য চাকরির নিয়োগপত্র জারি করেছে। আমরা শিকার পরিবারগুলোর জন্য ন্যায়বিচার প্রদান করতে চাই।” তিনি আরও জানান, এই উদ্যোগ শুধুমাত্র চাকরির সুযোগ প্রদান নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত পরিবারগুলোর জন্য ন্যায়বিচার এবং সম্মান ফিরিয়ে আনার একটি প্রয়াস।

   

মন্ত্রী মঞ্জিন্দর সিং সিরসা, যিনি দাঙ্গার শিকার পরিবারগুলোর জন্য ন্যায়বিচারের লড়াইয়ে সক্রিয়ভাবে জড়িত, এই উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “কোনো পূর্ববর্তী সরকার এই বিষয়ে যথাযথ মনোযোগ দেয়নি।

এশিয়ান কাপে ফেরার লড়াইয়ে ডাক দিলেন ভারতীয় ফুটবলের উজ্জ্বল তারকা

৪০ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামে

৪০ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামের পর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (delhi-government)নেতৃত্বে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।” তিনি দিল্লি গুরুদ্বারা ম্যানেজমেন্ট কমিটি এবং এর প্রেসিডেন্ট হরমিত সিং কালকার অবদানের কথাও উল্লেখ করেন। সিরসা জানান, একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে যারা এই চাকরি প্রদানের প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করছে।

১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গা: একটি ঐতিহাসিক ট্র্যাজেডি

১৯৮৪ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পর শিখ-বিরোধী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে হাজার হাজার শিখ নাগরিক নিহত হন এবং অসংখ্য পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। দিল্লি এই দাঙ্গার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিল, যেখানে ব্যাপক সহিংসতা, লুটপাট এবং সম্পত্তি ধ্বংসের ঘটনা ঘটে। এই দাঙ্গার শিকার পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করে আসছে। অনেক পরিবার একাধিক সদস্য হারিয়েছে, এবং তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে।

দিল্লি সরকারের (delhi-government)এই সাম্প্রতিক উদ্যোগ শুধুমাত্র চাকরির সুযোগ প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য একটি নৈতিক সমর্থন এবং সম্মান প্রদানের প্রচেষ্টা। মুখ্যমন্ত্রী গুপ্তা জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার শিকার পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে চায় এবং তাদের জীবনে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

লেফটেন্যান্ট গভর্নরের পূর্ববর্তী উদ্যোগ

এই উদ্যোগটি দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনার পূর্ববর্তী প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতা। ২০২৪ সালের নভেম্বরে তিনি ১৯৮৪ সালের দাঙ্গার ৪৭ জন শিকারের পরিবারের সদস্যদের নিয়োগপত্র বিতরণ করেছিলেন। এই ধরনের উদ্যোগগুলো শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং তাদের প্রতি সরকারের সমর্থন প্রকাশ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Advertisements

জরুরি অবস্থার যোদ্ধাদের জন্য পেনশন ঘোষণা

চাকরির নিয়োগপত্র প্রদানের পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা (delhi-government)আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, দিল্লি সরকার জরুরি অবস্থার (১৯৭৫-১৯৭৭) বিরুদ্ধে লড়াই করা ব্যক্তিদের জন্য পেনশন প্রদান শুরু করবে। এই পদক্ষেপ ঐতিহাসিক অবিচারের শিকার ব্যক্তিদের প্রতি সরকারের সমর্থনের আরেকটি উদাহরণ। গুপ্তা বলেন, “আমরা কেবল ১৯৮৪ সালের দাঙ্গার শিকারদের জন্য নয়, বরং জরুরি অবস্থার সময়ে যারা সংগ্রাম করেছেন, তাদের জন্যও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চাই।”

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট

এই উদ্যোগটি দিল্লির (delhi-government) রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিজেপি দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টির (এএপি) ১০ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসে। রেখা গুপ্তা, যিনি বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোর মধ্যে একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর শাসনকালে সামাজিক ন্যায়বিচার এবং উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন। এই চাকরি প্রদানের উদ্যোগটি বিজেপি সরকারের ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ নীতির প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তবে, এই উদ্যোগ নিয়ে বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে এএপি, সমালোচনা করেছে। এএপি নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ দাবি করেছেন, বিজেপি এই ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “১৯৮৪ সালের দাঙ্গার শিকার পরিবারগুলোর জন্য ন্যায়বিচার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিন্তু এটিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।”

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

এক্স-এ এই উদ্যোগ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। অনেকে এই পদক্ষেপকে শিখ সম্প্রদায়ের প্রতি সরকারের সংবেদনশীলতার প্রমাণ হিসেবে দেখছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “৪০ বছর পর শিখ দাঙ্গার শিকার পরিবারগুলোর জন্য ন্যায়বিচারের এই পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসনীয়।” তবে, কেউ কেউ এটিকে নির্বাচনী রাজনীতির অংশ হিসেবে সমালোচনা করেছেন।

ভবিষ্যৎ প্রভাব

এই উদ্যোগ শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে সরকারের প্রতি আস্থা বাড়াতে পারে এবং দিল্লির (delhi-government) রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বিজেপির অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারে। তবে, এই পদক্ষেপের সফলতা নির্ভর করবে এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এবং দাঙ্গার শিকার পরিবারগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদী সমর্থনের ওপর। মুখ্যমন্ত্রী গুপ্তার ঘোষণা অনুযায়ী, সরকার এই ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে, যা কাশ্মীরি অভিবাসী এবং কোভিড-১৯ শিকার পরিবারগুলোর জন্যও সমর্থন প্রসারিত করতে পারে।

১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গার শিকার পরিবারগুলোর জন্য চাকরির নিয়োগপত্র প্রদান এবং জরুরি অবস্থার যোদ্ধাদের জন্য পেনশন ঘোষণা দিল্লি সরকারের ন্যায়বিচারের প্রতি প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা এবং মন্ত্রী মঞ্জিন্দর সিং সিরসার নেতৃত্বে এই উদ্যোগ শিখ সম্প্রদায়ের জন্য একটি নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে। তবে, এই পদক্ষেপের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব আগামী দিনে দিল্লির রাজনীতি এবং সমাজে কীভাবে প্রতিফলিত হবে, তা স্পষ্ট হবে।