দিল্লির তলায় ঘুমন্ত দানবের নড়াচড়া! ঘুম উড়ছে রাজধানীর বাসিন্দাদের। বারবার ভূমিকম্প ভয়াল বিপদ সংকেত (Delhi Earthquake Risk) দিচ্ছে। সেরকম মুহূর্ত কি অতি নিকটে? গত কয়েক বছরে দিল্লি এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতে (বিশেষ করে জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, এবং পশ্চিম পাঞ্জাব অঞ্চল) ভূমিকম্পের ঘটনা লক্ষ্যণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভূতাত্ত্বিক কারণ বিশ্নেষণ
ভারতীয় উপমহাদেশর ভূস্তর ইন্ডিয়ান প্লেট ক্রমাগত উত্তর দিকে সরছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫ সেন্টিমিটার হারে এটি সরে যাচ্ছে। এই ভূস্তরের সঙ্গে ইউরেশিয়ান প্লেটের ধাক্কা লাগছে। ভূতাত্বিকরা বলছেন এই দুই ভূস্তরের সংঘর্ষের ফলে হিমালয়ের সৃষ্টি হয়েছে, এবং আজও সেই সংঘর্ষ চলমান। এর ফলে তৈরি হয়েছে একটি “সিসমিক জোন”, অর্থাৎ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। আর দিল্লি পড়েছে সেই এলাকার মধ্যে।
কতটা বিপজ্জনক দিল্লি?
১. ঘিঞ্জি পুরাতন দিল্লির নগর কাঠামো দুর্বল
দিল্লির বহু এলাকা, বিশেষ করে পুরনো দিল্লি, লোড-বিয়ারিং নির্মাণে গড়ে উঠেছে। এসব ভবন আধুনিক ভূমিকম্প প্রতিরোধী কোড অনুসরণ করে তৈরি হয়নি। ফলে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেও বড় ক্ষতি হতে পারে।
২. জনঘনত্ব
দিল্লি ও এনসিআর অঞ্চলে জনঘনত্ব অত্যন্ত বেশি। একমাত্র দিল্লিতেই প্রায় ৩ কোটি মানুষ বাস করে। একটি মাত্র ৬.৫-৭.০ মাত্রার ভূমিকম্পে কয়েক হাজার প্রাণহানির আশঙ্কা করা হয়, যদি সেটি শীতকালীন গভীর রাতে ঘটে।
দিল্লির দুলুনি
২০২৩ ও ২০২৪ সালে একাধিক মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প দিল্লি এনসিআর-সহ সংলগ্ন এলাকায় অনুভূত হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। ভূমিকম্পের পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে ১৯৯৩–২০২৫ সালের মধ্যে দিল্লির ৫০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে মোট ৪৪৬ ভূমিকম্প রেকর্ড হয়েছে। কম্পন ১.১ থেকে ৪.৬ মাত্রা। এই পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে দিল্লি ও সংলগ্ন উত্তর প্রদেশে ২০১৭–২০২০ সালে ৩ বা তার বেশি মাত্রার ২৬টি ভূমিকম্প ঘটেছে।
আর শতবর্ষের পুরনো তথ্যে দেখা যাচ্ছে এই অঞ্চলে ১৯০৩ (মথুরা ৬.৮), ১৯৫৬ (বুলন্দশহর ৬.৭), ১৭২০ (দিল্লি ৬.৫) মতো বড় ভূমিকম্প ঘটেছিল।
এইসব ভূমিকম্প স্পষ্ট করে যে, উত্তর-পশ্চিম ভারত একাধিকবার ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প দেখেছে, এবং ভবিষ্যতেও দেখার সম্ভাবনা রয়েছে।