Delhi Cleric Arrested for Spying: দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল বুধবার মেওয়াত থেকে ৩৪ বছর বয়সী এক ব্যক্তি, কাসিমকে গ্রেফতার করেছে। তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (ISI)-এর জন্য গুপ্তচরবৃত্তির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, রাজস্থানের ধিং জেলার গঙ্গোরা গ্রামের বাসিন্দা কাসিম গত এক বছরে দু’বার পাকিস্তান সফর করেছেন। সেখানে তিনি গুপ্তচরবৃত্তির প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, কাসিম ২০২৪ সালের আগস্ট এবং ২০২৫ সালের মার্চ মাসে প্রায় তিন মাস পাকিস্তানে অবস্থান করেছেন। এই সময়ে তিনি আইএসআই-এর কর্মকর্তা ও হ্যান্ডলারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেন। তাকে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বিভাগগুলির সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ ও প্রেরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়াও, কাসিম ভারতীয় সিম কার্ড পাকিস্তানে পাঠিয়েছিলেন, যা আইএসআই এজেন্টরা ভারতের ব্যক্তিদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে এবং গোপনীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করত।
মৌলবি হিসেবে পরিচয়, জয়পুরের সঙ্গে যোগাযোগ
পেশায় ইসলামিক মৌলবি কাসিম পূর্বে দিল্লিতে বসবাস করতেন এবং জয়পুরের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, কাসিম ভারতে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে উগ্রপন্থী মতাদর্শে প্রভাবিত করার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার প্রভাবে উগ্রপন্থী হওয়া ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে পুলিশ বর্তমানে তদন্ত চালাচ্ছে। এই ঘটনা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তদন্তের সূত্রপাত এবং গ্রেফতারি
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়। তথ্যে জানা যায়, ভারতীয় মোবাইল নম্বরগুলি পাকিস্তানে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এই তথ্যের সূত্র ধরে কাসিমকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গত ২৩ মে রাজস্থান পুলিশ তাকে প্রথমে আটক করে। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আইনের প্রাসঙ্গিক ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাখা হয়েছে।
পরিবারের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসূত্র
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, কাসিমের খালা পাকিস্তানে থাকেন এবং তার পাকিস্তান সফরের ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এছাড়া, তার ভাইও আইএসআই-এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে জানা গেছে। বর্তমানে তার ভাই পলাতক রয়েছে, এবং তাকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে।
জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি
দিল্লি পুলিশ এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুতর হিসেবে বিবেচনা করছে। কাসিম যে তথ্য পাকিস্তানে পাঠাচ্ছিলেন, তা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি সৃষ্টি করতে পারত। পুলিশের মতে, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদের গ্রেফতারের জন্য তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। আগামী দিনগুলিতে আরও গ্রেফতারির সম্ভাবনা রয়েছে।
নিরাপত্তা জোরদারের প্রয়োজনীয়তা
এই ঘটনা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার দিকে ইঙ্গিত করে। বিশেষ করে, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ভারতীয় সিম কার্ডের ব্যবহার অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই ধরনের ঘটনা রোধে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ এই নেটওয়ার্কের অন্যান্য সদস্যদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে।
কাসিমের গ্রেফতারি ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও, এই ঘটনা জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি সবাইকে আরও সতর্ক হওয়ার বার্তা দেয়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলির সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং কঠোর তদন্তের মাধ্যমে এই ধরনের গুপ্তচরবৃত্তির নেটওয়ার্ক ভেঙে ফেলা সম্ভব। তবে, ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা এড়াতে আরও কঠোর নজরদারি এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।