গত কয়েকদিন ধরে দিল্লির বায়ু (Delhi) দূষণের (pollution) মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে, যার ফলে রাজধানীজুড়ে তৈরি হয়েছে একটি অস্বস্তিকর পরিবেশ। বিশেষ করে, দিনে বা রাতে, শহরের বিভিন্ন এলাকায় এমনকি সামনের দিকটাও ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। বায়ু মানের সূচক (AQI) এখন ৫০০ এর কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা অত্যন্ত খারাপ মানের হিসেবে বিবেচিত হয়।
দূষণের কারণে দিল্লিবাসী সাধারণ মানুষের শ্বাস প্রশ্বাসেও সমস্যা হচ্ছেন। কেউ বুকে ভারী ভাব অনুভব করছেন, আবার কারো শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, চোখে পানি পড়ছে, কাশি বা হাঁচির সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি শহরের বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা একেবারেই ব্যাহত করছে, আর এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর ব্যবসায়ও।
ব্যবসায় মন্দা এবং চেম্বারের উদ্বেগঃ
চেম্বার অফ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (CTI) জানিয়েছে, দূষণের কারণে দিল্লিতে কেনাকাটা করতে আসা মানুষের সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। আগে প্রতি দিন এনসিআর (ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিওন) থেকে ৩-৪ লাখ মানুষ দিল্লির বাজারে আসতেন, কিন্তু এখন সেটা মাত্র ১ লাখে নেমে এসেছে। এই কারণে ব্যবসায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
CTI-এর চেয়ারম্যান ব্রিজেশ গয়াল এবং সভাপতি সুভাষ খান্ডেলওয়াল বায়ু দূষণের বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি চিঠি লিখে এই পরিস্থিতির সমাধানের জন্য জরুরি বৈঠক ডাকার দাবি করেছেন। চিঠিতে তারা একযোগভাবে দিল্লি, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, ইউপি এবং রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীদের এবং পরিবেশ মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক আয়োজনের আহ্বান জানান। তারা আরো বলেন, সরকার যদি কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তবে ব্যবসায়ের ক্ষতি আরও বাড়বে।
বিয়ের মরশুমে ব্যবসায় প্রভাবঃ
এদিকে, দিল্লিতে বর্তমানে বিয়ের মৌসুম চলছে, এবং এই সময়ে বাজারে ব্যাপক ফুটফল দেখা যায়। অন্যান্য শহর থেকেও গ্রাহকরা দিল্লিতে কেনাকাটা করতে আসেন, তবে দূষণের কারণে তাদের আগমন অনেকটাই কমে গেছে। এই অবস্থা ব্যবসায়ী মহলে অস্বস্তি তৈরি করেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, যদি সরকার বিভিন্ন সময়ে বাজার খোলার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তারা সরকারকে সহযোগিতা করবে।
দিল্লির বায়ু দূষণের অবস্থাঃ
সোমবার সকালে দিল্লির বায়ু দূষণের মাত্রা ছিল অত্যন্ত খারাপ। শহরের AQI বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪৮১, যা গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়। বিশেষত অশোক বিহার, শাদিপুর, বাওয়ানা, রোহিনী, ওয়াজিরপুর, জাহাঙ্গীরপুরী, নেহরু নগর, আনন্দ বিহার ও ITO-র মতো এলাকায় বায়ুর মান ছিল অত্যন্ত খারাপ, যার AQI ছিল ৪৭৪ থেকে ৪৯৫ এর মধ্যে।
দিল্লির ব্যবসায়ীদের অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। দূষণের কারণে যেখানে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যও গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন, যাতে পরিস্থিতি শিগগিরই উন্নতি হয় এবং দিল্লির অর্থনীতি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।