নয়াদিল্লি: দীপাবলীর আনন্দে মাতল দিল্লি (Delhi pollution)। আদালতের নিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও এবছর রাজধানীতে আতশবাজির বিক্রিতে রেকর্ড গড়েছে ব্যবসায়ীরা। সুপ্রিম কোর্টের সীমিত ছাড়ের পর এবছর দীপাবলিতে আতশবাজির বিক্রি পৌঁছেছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকায়, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি। শহরের বিভিন্ন বাজারে আতশবাজির চাহিদা এতটাই বেশি ছিল যে দীপাবলির একদিন আগেই বেশিরভাগ দোকানের স্টক ফুরিয়ে যায়।
চেম্বার অব ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান ব্রজেশ গোয়েল জানান, “এই বছর আতশবাজির বিক্রিতে রেকর্ড হয়েছে। বহু ক্রেতা নিজেদের এলাকার বাইরে গুরগাঁও, নয়ডা, ফারিদাবাদ, গাজিয়াবাদ ও সোনিপতের মতো শহরে গিয়ে আতশবাজি কিনেছেন।” সদর বাজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পরমজিৎ সিং পাম্মা বলেন, “দীপাবলির কেনাকাটায় এবছর ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গেছে। আতশবাজির পাশাপাশি আলো, লণ্ঠন ও সজ্জা সামগ্রীরও বিপুল বিক্রি হয়েছে।”
সুপ্রিম কোর্ট এবছর সীমিত পরিসরে ‘সবুজ আতশবাজি’ বিক্রি ও ব্যবহারের অনুমতি দেয়। নিয়ম অনুযায়ী, ১৮ থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত বিক্রি এবং দীপাবলির আগের দিন ও দীপাবলির দিন সকালে ৬টা থেকে ৭টা ও রাতে ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে বাজি ফাটানোর অনুমতি ছিল।
কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। অনেক এলাকায় রাত ৩টা পর্যন্ত বাজি ফাটানো হয়েছে। ইস্ট দিল্লি রেসিডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বি. এস. ভোহরা বলেন, “অনেক এলাকায় নিয়ম সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। বয়স্ক ও অসুস্থ নাগরিকদের জন্য এটি খুবই কষ্টদায়ক ছিল।”
ইউনাইটেড রেসিডেন্টস জয়েন্ট অ্যাকশন (URGA)-এর সভাপতি অতুল গোয়েল মন্তব্য করেন, “গ্রীন ক্র্যাকার্স নিয়ে সচেতনতা খুবই কম। উৎসবের উচ্ছ্বাসে মানুষ পরিবেশের ঝুঁকি ভুলে গিয়েছেন। আগামী বছর কঠোর নজরদারি জরুরি।”
গত কয়েক বছর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার কারণে আতশবাজির বাজারে মন্দা নেমে এসেছিল। কিন্তু এবছর আদালতের আংশিক ছাড়ে বাজারে প্রাণ ফিরে এসেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, বিক্রির চাহিদা এতটাই বেশি ছিল যে অনেক দোকানে স্টক শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন পণ্য আনাতে হয়েছে।
তবে একই সঙ্গে বেড়েছে উদ্বেগও। দীপাবলির রাতেই দিল্লির বিভিন্ন অঞ্চলে বায়ুর মান (AQI) দ্রুত খারাপ হতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আতশবাজির ধোঁয়া ও যানবাহনের ধোঁয়া মিলিয়ে উৎসবের পরদিন থেকেই দূষণ মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছায়।
প্রতি বছরই দীপাবলির সময়ে দিল্লির দূষণকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ ছড়ায়। এবারও পরিস্থিতি খুব একটা ভিন্ন নয়। আদালতের ‘গ্রীন ক্র্যাকার্স’ উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও বাস্তবে তা কার্যকর করতে প্রশাসনের চ্যালেঞ্জ থেকেই যাচ্ছে।
অনেক নাগরিকের মতে, উৎসবের আনন্দ বজায় রেখে পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব, যদি সবাই নিয়ম মেনে চলে। কিন্তু এবছরের পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রয়োজন।