দিল্লির সাম্প্রতিক বিস্ফোরণকে (Delhi blast) কেন্দ্র করে তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই নতুন দিক উঠে আসছে বলে তদন্তকারী সংস্থাগুলির সূত্রে জানা যাচ্ছে। বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন চিকিৎসক ও কর্মীর কল-রেকর্ড ট্র্যাক করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি। সেই সঙ্গে বেশ কয়েকজনের মোবাইল ফোন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তদন্ত আরও সংবেদনশীল মোড় নিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনও গ্রেপ্তার বা অভিযোগ গঠন সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
দিল্লি বিস্ফোরণের তদন্ত শুরু থেকেই বহু সংস্থা একযোগে কাজ করছে। স্পেশাল সেল, সিবিআই, এনআইএ এবং ইন্টেলিজেন্স ইউনিট—সবাই আলাদা স্তরে তথ্য সংগ্রহে নেমেছে। তদন্তের স্বার্থে কোনও সংস্থাই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিচ্ছে না, তবে সূত্র বলছে, বেশ কয়েকটি “সাসপিশিয়াস কমিউনিকেশন প্যাটার্ন” ধরা পড়েছে।
কল ডিটেল রেকর্ড (CDR) বিশ্লেষণ—কেন গুরুত্ব পাচ্ছে?
তদন্তকারীরা দাবি করছেন, বিস্ফোরণের পর উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস, সিসিটিভি ও মোবাইল টাওয়ার ডেটা বিশ্লেষণে কিছু নির্দিষ্ট নম্বরের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়–সংযুক্ত কিছু ব্যক্তির যোগাযোগ পাওয়া গেছে।
➡ “এটি প্রাথমিক স্তরের বিশ্লেষণ, এবং এটি অপরাধ প্রমাণ করে না”, এমনটাই জানাচ্ছে তদন্তকারী সূত্র।
CDR বিশ্লেষণ সাধারণত তিনটি বিষয়ে আলোকপাত করে—
কারা কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে
কোথা থেকে ফোন করা হয়েছে
ঘটনার সময় ওই নম্বরগুলির অবস্থান কোথায় ছিল
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফোন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া বা অফলাইন থাকা—এটি সন্দেহজনক হতে পারে, আবার এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণেও হতে পারে। তাই তদন্তকারীরা সতর্কতার সঙ্গে ডেটা যাচাই করছেন।
আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়—কেন প্রশ্নের মুখে?
গত কয়েক দিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা দাবি ভেসে উঠেছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে “অস্বাভাবিক কার্যকলাপ” চলছিল। তবে এই দাবির কোনও সরকারি প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি, এবং প্রশাসন এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কোনও নোটিশ জারি করেনি।
তদন্তকারী একটি সূত্র জানায়—
“বিশ্ববিদ্যালয়কে লক্ষ্য করে তদন্ত নয়। কিছু ব্যক্তির সঙ্গে কিছু যোগাযোগের মিল পাওয়ায় তাঁদের সম্পর্কে তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে না।”
অর্থাৎ তদন্ত বরাবরই ব্যক্তিকেন্দ্রিক, প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নয়।
তদন্ত কোথায় দাঁড়িয়ে?
Delhi Blast Case–এ তদন্তকারীরা এখন তিনটি ভিন্ন স্তরে তথ্য বিশ্লেষণ করছেন—
1️⃣ ডিজিটাল ফরেনসিক বিশ্লেষণ
বিস্ফোরণস্থল থেকে উদ্ধার উপাদান
CCTV ফুটেজ
মোবাইল টাওয়ার ডাম্প
উদ্ধার হওয়া ভাঙাচোরা ডিভাইস
2️⃣ সন্দেহভাজনদের সোশ্যাল সার্কেল ম্যাপিং
কারা কার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে
অপরাধমূলক বা মৌলবাদী সংগঠনের সঙ্গে লিঙ্ক আছে কি না
যোগাযোগের ফ্রিকোয়েন্সি
3️⃣ অর্থনৈতিক লেনদেন যাচাই
ব্যাংক ট্রান্সফার
বিদেশি ফান্ডিং
UPI লেনদেন
এই তিনটি স্তরের বিশ্লেষণ মিলিয়ে তবেই তদন্তকারীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন বলে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ—অতিরিক্ত জল্পনা ক্ষতিকর
সন্ত্রাসবিরোধী আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনও তদন্ত চলার সময় ব্যক্তিগত নাম উঠে আসা মানেই তাঁদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না।
একজন প্রাক্তন তদন্তকারী কর্মকর্তা মন্তব্য করেন—
“তদন্তের প্রথম ধাপেই অনেকের নাম আসে। ৯০% ক্ষেত্রেই তাঁরা নির্দোষ প্রমাণিত হন। তাই তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্তে যাওয়া ঠিক নয়।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া—সতর্ক সুর
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইস্যুটি ঘিরে প্রতিক্রিয়া জানালেও প্রায় সবাই সতর্ক।
➡ কেউই সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়কে অভিযুক্ত করছে না
➡ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্তব্যে সতর্কতার পরামর্শ
➡ সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়ালের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা
জনমত ও সোশ্যাল মিডিয়ার চাপ
বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে প্রবল জল্পনা তৈরি হয়েছে—
“বিশ্ববিদ্যালয়ে কী ঘটছিল?”
“কাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল?”
“অন্য কোথাও বড় নেটওয়ার্ক আছে কি?”
তবে তদন্তকারী এজেন্সিগুলির অবস্থান স্পষ্ট—
➡ “সোশ্যাল মিডিয়া আলোচনার উপর ভিত্তি করে তদন্ত নয়, শুধুই তথ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত।”
উপসংহার—তদন্ত চলছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনই নয়
এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে—
✔ কল ডিটেল ট্র্যাক করা হচ্ছে
✔ কিছু নম্বর অফ থাকা তদন্তকে জটিল করছে
✔ ব্যক্তিগত পর্যায়ে জেরা হতে পারে
✔ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ নেই
✔ চূড়ান্ত রিপোর্ট আসতে সময় লাগবে
তদন্তকারী সংস্থাগুলির মতে—
“তদন্ত সঠিক দিকেই এগোচ্ছে, কিন্তু প্রমাণ ছাড়া কাউকে অভিযুক্ত করা হবে না।”
সব মিলিয়ে, এটি স্পর্শকাতর একটি তদন্ত—ধৈর্য, সতর্কতা এবং আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার অপেক্ষাই এখন সবচেয়ে জরুরি।


