দিল্লি বিস্ফোরণে আরও স্পষ্ট বাংলাদেশ-পাকিস্তান যোগ

delhi-blast-pakistan-bangladesh-terror-link-report

নয়াদিল্লি: দিল্লির হৃদয়ভাগে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণের তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই সামনে আসছে উদ্বেগজনক আন্তর্জাতিক যোগসূত্র। প্রথমদিকে স্থানীয় মডিউলের জড়িত থাকার সন্দেহ থাকলেও এখন তদন্তকারীরা ক্রমশই নিশ্চিত হচ্ছেন এটি ছিল সীমান্ত পেরিয়ে বহুস্তরীয় সন্ত্রাসবাদী পরিকল্পনার অংশ। বিশেষ করে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মিলিত নেটওয়ার্কের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা উঠে আসছে গোয়েন্দা রিপোর্টে।

Advertisements

তদন্তে উঠে এসেছে যে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তইবা (LeT)–এর শীর্ষ হ্যান্ডলার সৈফুল্লাহ সাইফ বিস্ফোরণের আগে ঢাকার বনানীতে অনুষ্ঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকটিই ঘটে যাওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে অনুষ্ঠিত হয়। গোয়েন্দারা বলছেন, এই বৈঠকেই মূল নির্দেশনা এবং পুরো অপারেশনাল কৌশল চূড়ান্ত করা হয়েছিল।

   

ট্রাক এবং টেম্পোর মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত ৫, আহত ১৪!

এই গোপন বৈঠকে ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে উপস্থিত ছিলেন মোট ৭ জন। তাদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের দুটি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরির (HuT) এবং আনসার আল ইসলামের (ABT) নেতৃত্বের কয়েকজন সদস্য। আরও উদ্বেগজনক তথ্য, বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের দুইজন কর্মকর্তা, যাদের পরিচয় এখনো প্রকাশ্যে আনা হয়নি। তদন্তকারীদের মতে, এই দুই সরকারি কর্মকর্তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের সাহায্য ছাড়া এ ধরনের সমন্বিত অপারেশন এত নিখুঁতভাবে সেটআপ করা সম্ভব নয়।

প্রাথমিক রিপোর্টে আরও উঠে এসেছে বিস্ফোরণের পিছনে থাকা মূল ছায়ামূর্তি সৈফুল্লাহ সাইফ ভারতজুড়ে বৃহৎ আকারের হামলা চালানোর ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করেছিলেন। শুধু দিল্লি নয়, একাধিক মেট্রো সিটি এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাই ছিল এই পরিকল্পিত হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্য।

Advertisements

এই নেটওয়ার্ককে সাহায্য করেছে ঢাকায় অবস্থানকারী এক বাংলাদেশি নাগরিক, যার নাম ইক্তিয়ার। তিনি নাকি দিল্লি বিস্ফোরণে জড়িত অপারেটিভদের নিরাপদ আশ্রয়, লজিস্টিক সাপোর্ট এবং পালানোর পরিকল্পনায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন। ভারতের গোয়েন্দারা বলছেন, ইক্তিয়ার গত কয়েক মাস ধরে সীমান্ত দিয়ে বহুবার যাতায়াত করেছেন এবং তার মোবাইল লোকেশন বিস্ফোরণের আগে ও পরে সন্দেহজনকভাবে বিভিন্ন সীমান্তঘেঁষা এলাকায় শনাক্ত হয়েছে।

তদন্তে আরও বলা হচ্ছে, দিল্লি হামলাটি ছিল একটি ট্রায়াল রান এর মাধ্যমে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো ভারতের ভেতরে কতটা সহজে নাশকতা ঘটাতে পারে, তা যাচাই করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সীমান্তপারের বিভিন্ন স্লিপার সেলের সঙ্গে যোগাযোগও বিস্ফোরণের আগে আরও সক্রিয় হয়েছিল বলে জানা গেছে।

নিরাপত্তা মহল বলছে, ঘটনাটি শুধু দিল্লি বিস্ফোরণের তদন্ত নয় এটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত নিরাপত্তা, পাকিস্তানের জঙ্গি কার্যকলাপ এবং দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার উপর সরাসরি হুমকি তৈরি করছে। এই মুহূর্তে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ইক্তিয়ারসহ বৈঠকে উপস্থিত সাতজনের হদিস বের করার চেষ্টা করছে।

পাকিস্তানের লস্কর-ই-তইবার সঙ্গে সংযোগের বিষয়টি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক স্তরেও আলোচনায় আসতে চলেছে। দিল্লি বিস্ফোরণের তদন্ত যত গভীরে পৌঁছাচ্ছে, ততই বোঝা যাচ্ছে—এটি ছিল বহু দেশের জঙ্গি নেটওয়ার্ক দ্বারা পরিকল্পিত একটি সুসংবদ্ধ ষড়যন্ত্র। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তদন্ত ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার জঙ্গিবিরোধী কৌশলকে নতুনভাবে সাজাতে বাধ্য করবে।