দিল্লি বিস্ফোরণের আগে হামাস-ধাঁচে ড্রোন আক্রমণের পরিকল্পনা

delhi-blast-module-planned-hamas-style-drone-attack-before-explosion

দিল্লির লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণের (Delhi Blast ) ঘটনার তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই নতুন তথ্য উঠে আসছে তদন্তকারী সংস্থাগুলির হাতে। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (NIA) দাবি করেছে, এই হামলার আগে জড়িত জঙ্গি মডিউলটি ড্রোন পরিবর্তন করে হামাস-ধাঁচের বড়সড় আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। তদন্তকারীদের মতে, অভিযুক্তরা এমন ধরনের শক্তিশালী ড্রোন তৈরি করতে চেয়েছিল, যা ভারী বিস্ফোরক বহন করতে সক্ষম এবং বড় জনসমাগমের এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেত।

Advertisements

NIA জানিয়েছে, দিল্লির আত্মঘাতী কার বোমা হামলার মূল অভিযুক্ত উমর উন নাবির সঙ্গে যুক্ত দ্বিতীয় সন্দেহভাজনকে গ্রেফতারের পর এই পরিকল্পনার কথা স্পষ্ট হয়েছে। ধৃত ব্যক্তি জাসির বিলাল ওয়ানি, ওরফে দানিশ, জম্মু–কাশ্মীরের আনন্তনাগ জেলার বাসিন্দা। গতকাল দিল্লি থেকে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার পরে, এনআইএ দল শ্রীনগর থেকে দানিশকে গ্রেফতার করে।

   

তদন্ত সংস্থার দাবি, দানিশ ছিলেন এই ‘হোয়াইট কলার’ জঙ্গি মডিউলের অন্যতম প্রযুক্তিগত সহায়তাকারী। তিনি ড্রোনের সার্কিট, ক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্যামেরা সংযুক্ত করা, এবং ভারী ব্যাটারি লাগানোর মতো উন্নত কাজ করতে পারতেন। তার এই দক্ষতা ব্যবহার করেই বিস্ফোরণের আগে একাধিক হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল।

NIA জানিয়েছে, দানিশ ড্রোন পরিবর্তন করে তা রকেট বা ছোট মিসাইল ছুড়তে পারে এমন একটি কাঠামো তৈরির চেষ্টাও করেছিলেন। তদন্তকারীদের মতে, এই পরিকল্পনা আকারে ছোট হলেও, এর প্রভাব অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারত। অনেক জঙ্গি গোষ্ঠী— বিশেষত পশ্চিম এশিয়ার জঙ্গি সংগঠন— এমন ড্রোন হামলা ব্যবহার করে বড়সড় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।

এনআইএ সূত্রে জানানো হয়েছে, দানিশের তৈরি করা ড্রোন কনসেপ্টে বড় ব্যাটারি ব্যবহার করার চেষ্টা ছিল, যাতে ড্রোন গুলি ভারী বিস্ফোরক বহন করে অনেক উঁচুতে ও অনেক দূরে উড়তে পারে। এর ফলে নিরাপত্তা বাহিনীর রাডার বা অ্যান্টি-ড্রোন স্কোয়াডের পক্ষে শনাক্ত করা কঠিন হতে পারত।

তদন্তকারীরা বলছেন,

“তাঁরা এমন ড্রোন বানাতে চাইছিল যা ভিড়ের মাঝে উড়ে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারবে। উদ্দেশ্য ছিল সর্বোচ্চ ক্ষয়ক্ষতি ঘটানো।”

এই ধরনের ড্রোন হামলার উদাহরণ বিশ্বজুড়ে রয়েছে। বিশেষত ২০২৩ সালের হামাস বনাম ইসরায়েল যুদ্ধে হামাসের ড্রোন ব্যবহার নিরাপত্তাজনিত ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছিল। এনআইএ তদন্তকারীরা মনে করছেন, অভিযুক্তরা সেই ধরনের মডেল অধ্যয়ন করেছিল এবং ভারতেও একই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে চেয়েছিল।

এদিকে, দিল্লি বিস্ফোরণের আত্মঘাতী হামলাকারী উমর উন নাবির ভূমিকা নিয়ে তদন্ত বাড়ছে। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, উমর ও তাঁর সঙ্গীরা কয়েক সপ্তাহ ধরে দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় রেকি করছিলেন। সেই সময়েই ড্রোন হামলার পরিকল্পনাও চলছিল বলে মনে করছে তদন্ত দল।

Advertisements

সূত্র বলছে,

➡︎ বিস্ফোরণের আগে উমর ও দানিশ একাধিকবার ভিডিও কল ও এনক্রিপটেড অ্যাপে কথা বলেছেন।

➡︎ দানিশ ড্রোন পরিবর্তন ও বোমা তৈরির প্রযুক্তি নিয়ে নির্দেশ দিতেন।

➡︎ কয়েকটি পরীক্ষামূলক ড্রোন উড়ানোর প্রমাণও তদন্তকারীদের হাতে এসেছে।

এই ঘটনার পর, বিশেষজ্ঞদের মতে ভারতে ড্রোন ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করতে হতে পারে। বিশ্বজুড়ে এখন বিভিন্ন দেশের জঙ্গি সংগঠন ড্রোন ব্যবহার করছে—সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান থেকে শুরু করে গাজা পর্যন্ত। সে কারণে ভারতও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অ্যান্টি-ড্রোন ইউনিট ও সিগন্যাল-জ্যামিং প্রযুক্তি বাড়িয়ে চলেছে।

তবে, এই বিস্ফোরণ এবং নতুন তথ্য তদন্তকারীদের সামনে আরও বড় প্রশ্ন তুলে ধরছে—দেশের ভেতর থেকে সংগঠিত এমন প্রযুক্তি-জ্ঞানসম্পন্ন মডিউল কিভাবে গড়ে উঠল? কারা এদের পিছনে রয়েছে?

এনআইএ জানিয়েছে,

“তদন্ত একাধিক দিক থেকে এগোচ্ছে। জঙ্গি নেটওয়ার্কের লজিস্টিক, আর্থিক যোগ, বিদেশি যোগাযোগ সব দিকেই অনুসন্ধান চলছে।”

আত্মঘাতী বিস্ফোরণের তদন্ত এখন দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থাগুলির নজরে। একাধিক রাজ্য পুলিশের সঙ্গেও সমন্বয় করে তদন্ত এগিয়ে চলছে।

সব মিলিয়ে, দিল্লির বিস্ফোরণকে ঘিরে বেরিয়ে আসা এই নতুন তথ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের তীব্র উদ্বেগ বাড়িয়েছে। কারণ, ড্রোন প্রযুক্তি যদি সন্ত্রাসের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হতে শুরু করে, তবে এটি দেশের জন্য এক নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।