পয়লা থেকে আর ১৫ বছরের পুরনো গাড়িতে পেট্রোল নয়

Delhi Bans Fuel: আপনার গাড়ির বয়স যদি ১৫ বছরের বেশি হয়, তবে খুব শিগগিরই আপনি ফুয়েল পাম্পে গিয়ে হতাশ হতে পারেন। দিল্লির ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণের…

Delhi Bans Fuel for 15-Year-Old Vehicles

Delhi Bans Fuel: আপনার গাড়ির বয়স যদি ১৫ বছরের বেশি হয়, তবে খুব শিগগিরই আপনি ফুয়েল পাম্পে গিয়ে হতাশ হতে পারেন। দিল্লির ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে দিল্লি সরকার। আগামী ১ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে ১৫ বছরের বেশি পুরনো পেট্রোল গাড়ি এবং ১০ বছরের বেশি পুরনো ডিজেল গাড়ির জন্য পেট্রোল বা ডিজেল সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এই নিয়ম কার্যকর করতে রাজধানীর ফুয়েল স্টেশনগুলোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বসানো হচ্ছে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অযোগ্য গাড়িগুলোকে চিহ্নিত করে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেবে।

দিল্লি পরিবেশ মন্ত্রী মঞ্জিন্দর সিং সিরসা এই উদ্যোগকে ‘শূন্য সহনশীলতা নীতি’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, “পুরনো গাড়িগুলো দূষণের সবচেয়ে বড় কারণ। এগুলো যদি রাস্তা থেকে সরানো না যায়, তবে দিল্লিতে এগুলো চলতেও পারবে না, জ্বালানিও পাবে না।” এই পদক্ষেপ দিল্লির বায়ুকে পরিচ্ছন্ন করার একটি বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ, যা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম।

   

কীভাবে কার্যকর হবে এই নিষেধাজ্ঞা?
দিল্লির ৫০০টির বেশি ফুয়েল স্টেশনে অটোমেটিক নম্বর প্লেট রিকগনিশন (ANPR) ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। এই ক্যামেরাগুলো গাড়ির নম্বর প্লেট স্ক্যান করে তাৎক্ষণিকভাবে পরিবহন বিভাগের ডেটাবেসের সঙ্গে মিলিয়ে গাড়ির বয়স এবং পলিউশন আন্ডার কন্ট্রোল (PUC) সার্টিফিকেটের বৈধতা যাচাই করবে। যদি কোনো গাড়ি নির্ধারিত বয়সের সীমা অতিক্রম করে বা বৈধ PUC না থাকে, তবে ফুয়েল ডিনায়াল সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাম্প বন্ধ করে দেবে এবং স্টেশনের কর্মীদের সতর্ক করবে। এই প্রযুক্তি-চালিত ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে যে কোনো অযোগ্য গাড়ি জ্বালানি পেতে না পারে। সিরসা জানিয়েছেন, “এটি একটি কঠোর এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়া। আমরা কোনো ছাড় দিচ্ছি না।”

Advertisements

কারা প্রভাবিত হবেন?
এই নিষেধাজ্ঞা ২০১০-এর আগে নথিভুক্ত পেট্রোল গাড়ি এবং ২০১৫-এর আগে নথিভুক্ত ডিজেল গাড়ির ওপর প্রভাব ফেলবে। যারা এই নিয়ম লঙ্ঘন করবেন, তাদের ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, জ্বালানি থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং এমনকি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার মতো শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। দিল্লিতে প্রায় ৫৫ লক্ষ গাড়ি নির্ধারিত বয়সের সীমা অতিক্রম করেছে, যার মধ্যে ৬৬ শতাংশই দু’চাকার। এছাড়া, ১ লক্ষের বেশি ‘এন্ড-অফ-লাইফ’ গাড়ি (ELVs) এখনও রাস্তায় চলছে। CAG-এর একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৮ থেকে ২০২১-এর মধ্যে স্ক্র্যাপিংয়ের জন্য চিহ্নিত পুরনো গাড়ির মাত্র ৬.২৭ শতাংশই আদতে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যান দিল্লির বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

দিল্লির বায়ু দূষণের সংকট
দিল্লির বায়ু দূষণ বিশ্বব্যাপী একটি গুরুতর সমস্যা। যানবাহনের নির্গমন এখানকার ক্ষতিকর PM2.5-এর ২০-৩০ শতাংশের জন্য দায়ী। পুরনো গাড়িগুলো এই দূষণকে আরও বাড়িয়ে তোলে। শীতকালে দিল্লির বাতাসে ধোঁয়াশার চাদর পড়ে যায়, যা শ্বাসকষ্ট, চোখের জ্বালা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাঙালি পরিবারগুলোর মধ্যে যারা দিল্লিতে বসবাস করেন, তারা প্রায়ই এই দূষণের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করেন। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপকে অনেকে স্বাগত জানালেও, এর বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

সমালোচনা ও চ্যালেঞ্জ
এই নিষেধাজ্ঞার সমালোচকরা কয়েকটি সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। একটি বড় উদ্বেগ হল সীমান্তে জ্বালানি সংগ্রহ। অনেকে নয়ডা বা গুরুগ্রামের মতো প্রতিবেশী শহর থেকে জ্বালানি নিয়ে দিল্লিতে চলাচল করতে পারেন। এছাড়া, কেউ কেউ বলছেন, শুধু বয়সের ভিত্তিতে গাড়ি নিষিদ্ধ করা যুক্তিসঙ্গত নয়। একটি ভালো রক্ষণাবেক্ষণ করা পুরনো গাড়ি একটি অযত্নে রাখা নতুন গাড়ির চেয়ে কম দূষণ করতে পারে। এই সমস্যাগুলো মোকাবিলায় সরকার সীমান্তে কঠোর পরীক্ষা এবং ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করার পরিকল্পনা করেছে।

দিল্লির পরিচ্ছন্ন বায়ু কৌশল
এই জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা দিল্লির বায়ু মান উন্নত করার একটি বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ। সরকার ২০২৬ সালের মধ্যে ৯০ শতাংশ CNG বাস প্রতিস্থাপন করে ৮,০০০ বৈদ্যুতিক বাস চালু করার পরিকল্পনা করেছে। এছাড়া, উঁচু ভবন, হোটেল এবং দিল্লি বিমানবন্দরে অ্যান্টি-স্মগ গান স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বৈদ্যুতিক যানবাহনের (EV) চার্জিং অবকাঠামো সম্প্রসারণের জন্য ৫০০ কোটি টাকার গ্রিন ফান্ডও বরাদ্দ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো পরিবেশবান্ধব পরিবহনের দিকে অগ্রসর হওয়ার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।

বাঙালি দৃষ্টিকোণ
পশ্চিমবঙ্গ থেকে দিল্লিতে বসবাসকারী বাঙালি পরিবারগুলোর জন্য এই নিয়ম একটি মিশ্র বার্তা নিয়ে এসেছে। অনেকে বায়ু দূষণ কমানোর এই উদ্যোগকে সমর্থন করলেও, পুরনো গাড়ির মালিকরা আর্থিক চাপের কথা উল্লেখ করছেন। একজন বাঙালি বাসিন্দা বলেন, “আমার ১২ বছরের পুরনো গাড়ি এখনও ভালো চলে। নতুন গাড়ি কেনা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারের উচিত ছিল স্ক্র্যাপিংয়ের জন্য আরও ভালো প্রণোদনা দেওয়া।” তবে, যারা দূষণের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছেন, তারা এই পদক্ষেপকে স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি বলে মনে করছেন।

কী করবেন গাড়ির মালিকরা?
যদি আপনার গাড়ি এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে, তবে আপনার কাছে কয়েকটি বিকল্প রয়েছে। আপনি গাড়িটি স্ক্র্যাপ করে সরকারি প্রণোদনা নিতে পারেন বা অন্য রাজ্যে নথিভুক্ত করতে পারেন। বৈদ্যুতিক গাড়িতে রূপান্তরও একটি সমাধান হতে পারে। তবে, ১ এপ্রিল থেকে ANPR-ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ এবং রাস্তায় র‍্যান্ডম চেকিং শুরু হবে। তাই দেরি করলে জরিমানা এবং গাড়ি বাজেয়াপ্তির ঝুঁকি রয়েছে।

দিল্লি সরকারের এই ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ। যদিও এটি গাড়ির মালিকদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, তবু পরিচ্ছন্ন বায়ুর লক্ষ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। বাঙালি সম্প্রদায়ের জন্য, যারা দিল্লিতে বসবাস করেন, এটি স্বাস্থ্য ও পরিবেশের দিক থেকে একটি আশার আলো জাগিয়েছে। আগামী দিনে এই নিয়ম কীভাবে কার্যকর হয়, সেদিকে নজর থাকবে সবার।