‘‘১০ বছরে দুর্নীতির রেকর্ড ভেঙেছে আপ’’- জেপি নাড্ডা

আগামী দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের (Delhi Assembly elections) প্রস্তুতি শুরু হতে চলেছে, আর এই সময়ে বিজেপি সভাপতি জে.পি. নাড্ডা দিল্লির আপ (আম আদমি পার্টি) সরকারের বিরুদ্ধে…

BJP President JP Nadda Accuses AAP of Massive Corruption in Delhi

আগামী দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের (Delhi Assembly elections) প্রস্তুতি শুরু হতে চলেছে, আর এই সময়ে বিজেপি সভাপতি জে.পি. নাড্ডা দিল্লির আপ (আম আদমি পার্টি) সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ তুললেন। বৃহস্পতিবার, উত্তম নগরে একটি জনসভায় বিজেপির প্রচারণায় যোগ দিয়ে নাড্ডা দাবি করেন যে, গত দশ বছরে আপ সরকার দুর্নীতির একাধিক রেকর্ড ভেঙেছে এবং তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

জে.পি. নাড্ডা বলেন, ‘‘যদি কোনও জাতীয় স্তরে মিথ্যা বলার প্রতিযোগিতা হয়, তবে সেই প্রতিযোগিতায় অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রথম স্থান অধিকার করবেন।’’ তাঁর এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করেন এবং বলেন, কেজরিওয়াল সরকারের পক্ষে সরকারের নানা দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে, আর তা দেশের জনগণের কাছে আজ পরিষ্কার।

   

নাড্ডা আরও বলেন, ‘‘আপ সরকার যেভাবে কেজরিওয়াল এবং তাঁর দল সরকার চালিয়েছে, তাতে দিল্লির জনগণের সঙ্গ থেকে তারা শুধু প্রতারণা করেছে।’’ তিনি দিল্লি সরকারের একাধিক দুর্নীতি কাণ্ডের উদাহরণ দেন, যার মধ্যে ছিল এক্সাইজ পলিসি কেস। এই কেসে একাধিক আপ নেতাকে, সহ অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারও করা হয়। এই ঘটনার মাধ্যমে নাড্ডা অভিযোগ করেন যে, আপ সরকার সম্পূর্ণভাবে ‘আত্মসন্তুষ্ট’ হয়ে দুর্নীতির পথ বেছে নিয়েছে এবং দিল্লির জনগণের টাকার উপর ছিদ্র ফেলেছে।

এই জনসভায়, নাড্ডা একাধিক স্ক্যাম বা দুর্নীতির ঘটনা তুলে ধরেন, যেগুলি আপ সরকারের শাসনামলে ঘটে। তাঁর মতে, ‘‘ওয়াকফ বোর্ড স্ক্যাম—এটা এমন এক স্ক্যাম, যেখানে মুসলিমদেরও ঠকানো হয়েছে। এটাই তাদের শাসনামলের আসল চেহারা।’’ তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, কেজরিওয়াল সরকার দিল্লির জনগণের জন্য স্বচ্ছ জল সরবরাহের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির শিকার হয়েছে।

নাড্ডা আরও বলেন, ‘‘যতটুকু ‘আপদা’ (দুর্যোগ) তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জল এবং অন্যান্য সুবিধা নিয়ে কথা বলেছিল, তার পরিবর্তে তাদের মুখে এক্সাইজ স্ক্যামের অঙ্কের হিসাব জড়িত। ২৮০০ কোটি টাকার মদ সংক্রান্ত দুর্নীতি তাদের হাতে ধরা পড়েছে।’’ এছাড়া তিনি দিল্লি জল বোর্ডে ২৮ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতিরও অভিযোগ তোলেন, যা দিল্লির জল সরবরাহ ব্যবস্থার সংকট সৃষ্টি করেছে এবং ট্যাঙ্কার মাফিয়াদের হাতে চলে গিয়েছে।

নাড্ডা আরও বলেন, ‘‘যতটুকু দাবি করা হয়েছিল, ইয়ামুনা নদী পরিষ্কার করা হবে, সেইসব প্রতিশ্রুতি উড়িয়ে তারা ৭০০০ থেকে ৮০০০ কোটি টাকার দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে।’’ তিনি দাবি করেন যে, কেজরিওয়াল সরকার যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল এবং ক্লাসরুমের উন্নতির কথা বলেছিল, তাদের সেখানে ১৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।

এছাড়া, তিনি বলেন, ‘‘যতটুকু দিল্লির উন্নতি হয়েছে, তা সেন্ট্রাল সরকারের, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকারের দানে হয়েছে, আর তা আপ সরকারের নয়।’’ তিনি অভিযোগ করেন যে, কেজরিওয়াল সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের স্কিমগুলির বাস্তবায়নেও বাধা দিয়েছে, যার ফলে দিল্লির জনগণ আরও সমস্যায় পড়েছে।

নাড্ডার এই মন্তব্যের মাধ্যমে বিজেপি, দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে একটি কড়া অবস্থান গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘‘এবারের নির্বাচন শুধুমাত্র দিল্লির ভবিষ্যতের জন্য, আর এই নির্বাচনই দিল্লির জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।’’

এদিকে, আসন্ন নির্বাচনে আপের জন্য তাদের তৃতীয় consecutive term অর্জন করার লক্ষ্য রয়েছে। ২০১৫ এবং ২০২০ সালের নির্বাচনে তারা যথাক্রমে ৬৭ এবং ৬২টি আসন জয় করেছে, যেখানে বিজেপি ২০১৫ সালে তিনটি আসন এবং ২০২০ সালে আটটি আসন পেয়েছিল। তবে, বিজেপি মনে করে যে, এবার দিল্লির জনগণ তাদের সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে নেবে এবং আপের শাসনামলের দুর্নীতির জন্য কড়া উত্তর দেবে।

নাড্ডার কথায়, ‘‘দিল্লির জনগণ জানেন কীভাবে তাদের ভোটের মাধ্যমে সঠিক পরিবর্তন আনতে হয়। বিজেপির নেতৃত্বে দিল্লি একটি নতুন দিশা পাবে।’’

এই বক্তব্যে, একদিকে আপের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ চালানোর পাশাপাশি বিজেপি সভাপতি ২০২৫ সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করেছেন এবং এই নির্বাচনে জনগণের জন্য একটি নতুন প্রস্তাবনা দেওয়ার কথা বলেছেন।