রাত পোহালেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের (Delhi Assembly Election) গণনা। এর জন্য দিল্লির নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক বেশি জোরদার করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে, ভোট গণনা যাতে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দিল্লি পুলিশের বিশেষ কমিশনার (এসিপি) এবং রাজ্য পুলিশের নোডাল অফিসার (এসপিএনও) দেবেশ চন্দ্র শ্রীবাস্তব এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন।
১৯টি গণনা কেন্দ্র স্থাপন
শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, দিল্লি জুড়ে মোট ১৯টি গণনা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে ভোটের গণনা করা হবে। প্রতিটি গণনা কেন্দ্রে একজন অ্যাডিশনাল ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (এডিসিপি) দায়িত্ব পালন করবেন। এই কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা মজবুত করতে ৩৮টি কেন্দ্রীয় বাহিনীর (সিএপিএফ) কোম্পানি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া, স্থানীয় পুলিশ কর্মীরা প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশন ও প্রার্থীদের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করবেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার
নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে শ্রীবাস্তব জানান, প্রতিটি গণনা কেন্দ্রে ফ্রেম মেটাল ডিটেক্টর, হ্যান্ডহেল্ড মেটাল ডিটেক্টর এবং এক্স-রে ব্যাগেজ স্ক্যানার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, প্রতিটি কেন্দ্রকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দু’টি কোম্পানি নিরাপত্তা প্রদান করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রতিটি গণনা কেন্দ্রে শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে, যাতে গণনার সময় পুরো প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ হয়। এই ব্যবস্থার মধ্যে থাকবে স্ট্রং রুম এবং গণনা হলের নিরাপত্তা। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় বাহিনী গণনা কেন্দ্রে নিরাপত্তা দেবে, এবং স্থানীয় পুলিশ গেট এবং প্রথম প্রবেশপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’’
এছাড়া, ১০০ মিটার দূর থেকে সব গণনা কেন্দ্র ঘিরে ব্যারিকেড তৈরি করা হবে, যাতে শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যক্তিরাই প্রবেশ করতে পারেন। তাঁদের প্রবেশের জন্য কঠোর নিরাপত্তা চেকিং হবে।
এলাকা এবং স্টং রুমের নিরাপত্তা
দিল্লি নির্বাচন কমিশনার র অ্যালিস ভাজও জানিয়েছেন, প্রতিটি গণনা কেন্দ্রে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশ বাহিনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী স্ট্রং রুমের পাশের এলাকাগুলোর তদারকি করবে। এই অঞ্চলে ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে, এবং স্ট্রং রুম ও করিডোরগুলির সিল্ড দরজা চিত্রগ্রহণের মাধ্যমে নজর রাখা হবে।
স্ট্রং রুমে প্রবেশের জন্য একটি একক প্রবেশ/প্রস্থান পথ থাকবে, যেখানে দ্বৈত লক ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। স্ট্রং রুম খোলার সময় এবং বন্ধ করার সময় ভিডিওগ্রাফি করা হবে এবং একটি লগবুক রাখা হবে, যাতে অনুমোদিত কর্মকর্তারা (সাধারণ পর্যবেক্ষক, জেলা নির্বাচন অফিসার বা ডিএসপি) তাদের প্রবেশের সময় চিত্রগ্রহণ করা হবে।
এছাড়া, স্ট্রং রুমের কাছে একটি অপারেশন কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে এবং কোনো গাড়ি, ভিভিআইপি বা কর্মকর্তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে
চেন্নাই, মুম্বাই বা হায়দরাবাদের মতো বড় শহরগুলির বিপরীতে দিল্লি নির্বাচন এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ভোট গণনা প্রক্রিয়া ও ফলাফল ঘোষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিটি গণনা কেন্দ্রে নিরাপত্তার সব দিক নিশ্চিত করতে এই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন যে, ভোট গণনা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে স্বচ্ছ এবং নিখুঁত হবে। প্রতিটি ভোট গণনা কেন্দ্রের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও নজরদারি দিয়ে এটি নিশ্চিত করা হবে যে গণনা ফলাফল শান্তিপূর্ণভাবে এবং কোনো ধরনের গোলমাল ছাড়া ঘোষণা হবে।
এপির বিরুদ্ধেও চ্যালেঞ্জের মুখে
এই নির্বাচনে রাজধানী দিল্লির সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল আপ (অেম আদমি পার্টি) এখন পর্যন্ত দুটি নির্বাচনে জয়ী হয়েছে এবং তাদের এই নির্বাচনেও জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা অব্যাহত থাকলেও আপ শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে এবারের নির্বাচনে ফলাফল কী হবে, তা নিয়ে সকলের মনেই জল্পনা তৈরি হয়েছে।
তবে, নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অস্থিরতা সত্ত্বেও, একথা নিশ্চিত যে, প্রতিটি গণনা কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সুষ্ঠুতা এবং সবার বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
নির্বাচনের পরবর্তী পদক্ষেপ
ভোট গণনা শুরু হলে, ধাপে ধাপে ফলাফল ঘোষণা করা হবে এবং শেষ পর্যন্ত কে কতটি আসন পেল, তা গণনা করে প্রকাশ করা হবে। কিছু সময় পর, যদি প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ বা আপত্তি থাকে, তবে তা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুযায়ী সমাধান করা হবে। এই নির্বাচনগুলি শেষ হলে, দিল্লির জনগণের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নতুন সরকার গঠন করা হবে।
দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন যথাযথভাবে পরিচালনা করতে নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় পুলিশ, সেন্ট্রাল বাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে চলা ভোট গণনা প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি দিল্লির মানুষের প্রতি নির্বাচন কমিশনের কর্তব্যবোধ এবং সততার প্রতিফলন।