নয়াদিল্লি: দিল্লির আকাশ যেন ধীরে ধীরে বিষে ভরে উঠছে। শীতের শুরুতেই রাজধানীর বাতাস আবার নেমে গেল বিপদসীমার তলায়। শুক্রবার সকাল ৯টার সরকারি রিপোর্ট বলছে, দিল্লির গড় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) দাঁড়িয়েছে ৩৭০–এ, যা টানা অষ্টম দিন ‘খুবই খারাপ’ বিভাগে রয়ে গেল। শহরের কমপক্ষে ১৮টি মনিটরিং স্টেশন AQI ৪০০–র ওপরে রেকর্ড করেছে, যা সরাসরি ‘সিভিয়ার’ স্তরে পড়ে।
বায়ুদূষণের প্রকোপে হাসপাতালগুলিতে শ্বাসকষ্ট, সিওপিডি, চোখ জ্বালা, হাঁপানি ও শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগীর ঢল নেমেছে। এক সমীক্ষা বলছে— গত এক মাসে দিল্লি–এনসিআর এলাকার ১০টির মধ্যে ৮টি পরিবারে অন্তত একজন সদস্য মারাত্মক দূষণের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
দূষণের গ্রাফ আরও বাড়তে পারে
পৃথিবী বিজ্ঞান মন্ত্রকের Air Quality Early Warning System জানিয়েছে— আগামী ছ’দিন দিল্লির AQI ‘খুবই খারাপ’ থেকে ‘সিভিয়ার’ পর্যায়ে থাকার আশঙ্কা। স্থির বায়ুপ্রবাহ ও শীতের উল্টো তাপমাত্রা (winter inversion) এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।
মূল কারণ কী? Delhi AQI Severe Medical Emergency
IITM–এর Decision Support System–এর হিসেব:
বৃহস্পতিবার PM2.5 দূষণের ১৭.৩% উৎস ছিল যানবাহন
স্টাবল বার্নিং বা খড় পোড়ানোয় অবদান ছিল ২.৮%
শুক্রবার তা সামান্য কমলেও বিশেষ পার্থক্য হয়নি। এদিকে স্যাটেলাইটে পঞ্জাবে ১৬টি, হরিয়ানায় ১১টি ও উত্তরপ্রদেশে ১১৫টি খড় পোড়ানোর ঘটনা ধরা পড়েছে, সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও স্থির আবহাওয়ার মধ্যে দূষণ নিয়ন্ত্রণে তা যথেষ্ট বাধা।
চিকিৎসকরা সরাসরি সতর্ক করলেন
AIIMS–এর বিশেষজ্ঞরা দূষণের মাত্রাকে “মেডিক্যাল এমার্জেন্সি” বলে চিহ্নিত করেছেন। AIIMS–এর ডঃ অনন্ত মোহন বলছেন, “পরিস্থিতি জীবনঘাতী। শুধু ফুসফুস নয়, হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক, মানসিক স্বাস্থ্য, সবকিছু প্রভাবিত হচ্ছে। গর্ভস্থ শিশু থেকে প্রবীণ, কাউকেই রেহাই দিচ্ছে না। আমরা রোগীদের ভেন্টিলেটর পর্যন্ত দিতে বাধ্য হচ্ছি।”
ডঃ সৌরভ মিত্তল–এর বক্তব্য, “দিল্লির সবচেয়ে বড় ভুল— দূষণকে নভেম্বর–কেন্দ্রিক সমস্যা মনে করা। দমকলের জল ছিটানো বা মাস্ক দিয়ে সাময়িক পরিত্রাণ মিললেও দীর্ঘমেয়াদি নীতি ছাড়া অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়।”
মাস্ক কি যথেষ্ট?
চিকিৎসকদের মতে—
এন৯৫ মাস্ক আংশিক সুরক্ষা দেয়
এয়ার পিউরিফায়ার ঘরের দূষণ কমায় কিন্তু এই দু’টি কখনও নীতিগত সমাধানের বিকল্প নয়
বিচারব্যবস্থা ও জনরোষ
বায়ুদূষণের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট এ সপ্তাহেই CAQM–কে স্কুলের খেলাধুলার অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেওয়ার নির্দেশ বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছে, আদালতের ভাষায় বর্তমানে মাঠে খেলা মানে “গ্যাস চেম্বারে শিশুদের প্রশিক্ষণ”।
এদিকে দিল্লির বাসিন্দাদের ক্ষোভ রাস্তায় ফুটে উঠেছে। ইন্ডিয়া গেট ও জনতার মঞ্চে বহু মানুষ, তার মধ্যে বহু শিশু–কিশোর অংশ নিয়ে “দ্রুত পদক্ষেপ চাই” স্লোগান তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, “প্রতি বছর একই দূষণ, একই রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি, কিন্তু কোনও স্থায়ী নীতি নেই।”
সারকথা
দিল্লি–এনসিআর আজ কার্যত বিষাক্ত বায়ুর বন্দি। শীত যত এগোবে, দূষণের স্তর তত বাড়তেই পারে— সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসকদের ভাষায়—
এ আর পরিবেশগত সঙ্কট নয়, এটি জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়।


