ক্রমশই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে রাজধানী, বায়ু দূষণে প্রাণ ওষ্ঠাগত দিল্লিবাসীর

দিল্লি এবং এনসিআর (National Capital region)-এর বাতাসের মান ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। যা গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছেছে। দিল্লির পাশাপাশি নয়ডা, ফরিদাবাদ, গুরগাঁও এবং চণ্ডীগড়েরও বায়ুর মান মারাত্মক…

Delhi Air pollution affect health

short-samachar

দিল্লি এবং এনসিআর (National Capital region)-এর বাতাসের মান ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। যা গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছেছে। দিল্লির পাশাপাশি নয়ডা, ফরিদাবাদ, গুরগাঁও এবং চণ্ডীগড়েরও বায়ুর মান মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছেছে। এর ফলে স্থানীয় পরিবহন এবং বিমান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে (Delhi Air pollution)। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আশুতোষ মিশ্রর প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে যে, এই দূষণের পেছনে মূলত কৃষি জমিতে খড় পোড়ানো এবং অন্যান্য বেশ কিছু কারণ দায়ী। 

   

বায়ু দূষণের কারণে দিল্লির বাসিন্দারা শ্বাসকষ্টসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। এর পাশাপাশি দূষণের কারণে দৃশ্যমানতাও কমেছে, যা গাড়ি চালানো ও বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বায়ুর মান সংক্রান্ত সূচক বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) বর্তমানে দিল্লিতে এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যা ‘গুরুতর’ বলে চিহ্নিত। AQI-এর মাত্রা ৪০০ ছাড়িয়ে গেলে তা মানুষের শ্বাসযন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে এবং বর্তমানে দিল্লির AQI সেই মাত্রা পার করেছে।

বায়ু দূষণের পেছনে প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি হল খড় পোড়ানো। প্রতিবছর শীতকালের আগে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা রাজ্যে কৃষকরা তাদের জমিতে খড় পোড়ান, যা দিল্লির বাতাসে মিশে দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। এই খড় পোড়ানোর ফলে প্রচুর পরিমাণে কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড এবং অন্যান্য বিষাক্ত কণা বাতাসে মিশে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু দিল্লি নয়, পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতেও এই দূষণ ছড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে নয়ডা, গুরগাঁও এবং চণ্ডীগড়ের মতো শহরেও দূষণের মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বায়ু দূষণের কারণে শিশু, প্রবীণ ব্যক্তি এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে, দূষিত বাতাসে দীর্ঘক্ষণ থাকার ফলে অ্যালার্জি, হাঁপানি, ফুসফুসের সংক্রমণ এবং এমনকি হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ছে। দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে, যাদের বেশিরভাগই শ্বাসকষ্ট এবং চোখ জ্বালার সমস্যায় ভুগছেন। ডাক্তারদের মতে, বাতাসের ক্ষতিকর কণাগুলি ফুসফুসে প্রবেশ করলে তা দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

দিল্লি ও তার আশেপাশের এলাকাগুলিতে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় যানজটের সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত সকালে এবং রাতে ঘন কুয়াশা ও দূষিত কণার কারণে রাস্তা দেখা দুষ্কর হয়ে পড়ছে, ফলে গাড়ি চালকদের গতি কমিয়ে চালাতে হচ্ছে। এর পাশাপাশি, বেশ কিছু বিমানবন্দরেও ফ্লাইট বাতিল এবং বিলম্বিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিমানের অবতরণ এবং উড্ডয়নের সময় কম দৃশ্যমানতা মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।

দিল্লি সরকার এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয় দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রাজধানীতে কার ইমিশন পরীক্ষা, ডাস্ট কন্ট্রোল ব্যবস্থা এবং নির্মাণ কাজের সময় ধুলোর প্রভাব কমানোর জন্য নিয়ম চালু হয়েছে। দিল্লি সরকার ‘রেড লাইট অন, গাড়ি বন্ধ’ প্রচার চালাচ্ছে যাতে যানবাহন থেকে নির্গত দূষণ কমানো যায়। তদ্ব্যতীত, গ্রিন দিল্লি অ্যাপ-এর মাধ্যমে নাগরিকদের দূষণ সংক্রান্ত অভিযোগ জানানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

সরকার ও পরিবেশ সংস্থাগুলি কৃষকদের খড় পোড়ানোর বিকল্প ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন করছে। ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের মেশিন দেওয়া হচ্ছে যাতে তারা খড় জমিতে মিশিয়ে দিতে পারেন। খড় পোড়ানো বন্ধ করতে বিভিন্ন সংগঠন কৃষকদের সঙ্গে কাজ করছে। তবে এই প্রচেষ্টাগুলি এখনও পুরোপুরি সফল হয়নি, কারণ অনেক কৃষক পুরনো অভ্যাসেই রয়েছেন এবং তারা মনে করেন যে খড় পোড়ানো সহজ ও সাশ্রয়ী পদ্ধতি।

বায়ু দূষণ প্রতিরোধে নাগরিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে, দূষণের সময় বাড়ির বাইরে অপ্রয়োজনীয় বের হওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, বিশেষ করে যেসব মাস্কে PM2.5 কণা আটকানোর ক্ষমতা রয়েছে।