দীপাবলির আকাশে বিষাক্ত বাতাস, দিল্লির একাধিক এলাকা রেড জোন

Delhi Air Pollution after Diwali

নয়াদিল্লি: দীপাবলির আলো নিভতেই দিল্লির আকাশ ঢেকে গেল ধোঁয়ার ঘন পর্দায়। উৎসবের রাতের পরই রাজধানীর বাতাসে বিষাক্ততার মাত্রা ভয়াবহভাবে বেড়ে গিয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার সময় দিল্লির বায়ু মান সূচক (AQI) ছিল ৩৩৫, অর্থাৎ ‘অতি খারাপ’ পর্যায়ে। রাজধানীর প্রায় সব মনিটরিং স্টেশনেই সূচক পেরিয়েছে ৩০০-এর গণ্ডি।

Advertisements

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি দেখা গেছে আনন্দ বিহারে, সেখানে সোমবার সকালে AQI ৪১৭, যা সরাসরি ‘গুরুতর’ (Severe) শ্রেণিতে পড়ে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের (CPCB) তথ্য অনুযায়ী, রবিবার রাতেই দিল্লির ৩৮টি মনিটরিং স্টেশনের মধ্যে ২৪টির বাতাস ছিল ‘অতি খারাপ’ মানের।

দূষণের দাপটে দিল্লি-NCR

রবিবার সন্ধ্যায় বিভিন্ন অঞ্চলের দূষণের মাত্রা ছিল, ওয়াজিরপুরে ৩৬৪, বিবেক বিহারে ৩৫১, দ্বারকায় ৩৩৫ এবং আর কে পুরমে ৩২৩। অন্যদিকে সিরি ফোর্ট, দিলশাদ গার্ডেন ও জাহাঙ্গীরপুরিতে AQI দাঁড়িয়েছে ৩১৮; পাঞ্জাবি বাগে ৩১৩, নেহরু নগরে ৩১০, অশোক বিহারে ৩০৫ এবং বাওয়ানায় ৩০৪। নয়ডার বিভিন্ন এলাকাতেও বাতাসের মান নেমেছে বিপজ্জনক স্তরে, নয়ডা সেক্টর ১-এ AQI ৩৪৪, ভিজয় নগরে ৩৪৮, গাজিয়াবাদের নয়ডা এলাকায় ৩৪১, আর গুরগাঁওয়ে ২৮৩।

সুপ্রিম কোর্টের সীমিত ছাড়ের পরও বেড়েছে দূষণ Delhi Air Pollution after Diwali

গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি-NCR-এ ‘গ্রিন ক্র্যাকার’ ফাটানোর অনুমতি দিয়েছিল, তবে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে, সকালে ৬টা থেকে ৭টা এবং রাতে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, এই পটকা বিক্রি চলবে ১৮ থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত। তবুও বাস্তবে দূষণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। দীপাবলির পরদিনই রাজধানীর বাতাসে ঝুলে থাকা সূক্ষ্ম ধূলিকণার (PM2.5) মাত্রা স্বাভাবিকের বহু গুণ বেড়ে যায়।

সরকারের পদক্ষেপ

দূষণের আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি ঠেকাতে রবিবারই CAQM (Commission for Air Quality Management) জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে GRAP-এর (Graded Response Action Plan) দ্বিতীয় ধাপ চালু করেছে। এর আগে প্রথম ধাপ কার্যকর ছিল ১৪ অক্টোবর থেকে।
নতুন নির্দেশিকায় নির্মাণস্থলে ধূলিকণার নিয়ন্ত্রণ, রাস্তায় জল ছিটিয়ে ধুলো কমানো এবং শিল্পাঞ্চলে নির্দিষ্ট দূষণবিধি মেনে চলার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

Advertisements

পরিস্থিতি আরও খারাপের আশঙ্কা

ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (IMD) জানিয়েছে, এই সপ্তাহে দিল্লির বায়ু আরও খারাপ হতে পারে। মঙ্গলবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরদিন, বাতাসের মান ‘গুরুতর’ পর্যায়ে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে।
সোমবারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে তারা।

 মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন

সোমবার সকালে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা নাগরিকদের দীপাবলির শুভেচ্ছা জানিয়ে আহ্বান জানিয়েছেন, “সবাই যেন আদালতের নির্দেশ মেনে কেবল গ্রিন ক্র্যাকার ফাটান, আর সম্ভব হলে ঐতিহ্য মেনে প্রদীপ, রংগোলি ও মিষ্টি দিয়েই উৎসব পালন করুন।”

তিনি আরও বলেছেন, “এই বছরের দীপাবলি দিল্লির জন্য ঐতিহাসিক। একদিকে পরিবেশবান্ধব আতসবাজির অনুমতি, অন্যদিকে স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো কর্তব্যপথে আয়োজিত ‘দিব্য দীপোৎসব’—এ যেন নতুন ভারতের সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের প্রতীক।”

শনিবার সেই দীপোৎসবে কর্তব্যপথ জুড়ে জ্বলেছে ১.৫১ লক্ষ প্রদীপ, আকাশে উড়েছে রামায়ণ-ভিত্তিক ড্রোন শো, যা রাজধানীর ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় লিখেছে।