রাজস্থানে পিয়নের চাকরির (peon job) জন্য যে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হল, তা কার্যত শিক্ষিত বেকারত্বের এক করুণ চিত্র তুলে ধরেছে। ৫৩ হাজার পদের জন্য রাজ্যজুড়ে আবেদনপত্র জমা পড়েছে প্রায় ২৫ লক্ষেরও বেশি। পরীক্ষার দিনে সকাল থেকেই দেখা গেল ভিড়ের চিত্র – জয়পুরের গান্ধীনগর পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে লম্বা লাইন পড়ে গিয়েছিল।
পিয়নের চাকরির যোগ্যতা যেখানে ন্যূনতম মাধ্যমিক পাশ, সেখানে আবেদনকারীদের প্রায় ৯০ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত – কেউ এমএসসি, কেউ বিএসসি, কেউ বা বি-টেক কিংবা এমফিল-পিএইচডি ডিগ্রিধারী। এই তথ্যই রাজস্থানে শিক্ষিত বেকার যুবকদের অসহায় অবস্থাকে স্পষ্ট করে দিয়েছে।
রাজস্থানের যুবক-যুবতীদের কাছে সরকারি চাকরির প্রতি যে অগাধ আকর্ষণ রয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে এই নিয়োগ পরীক্ষায়। কেউ কেউ বলেছেন, পিয়নের চাকরি হলেও অন্তত সরকারি চাকরি – তাই ভবিষ্যতে স্থায়িত্ব এবং বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পাওয়া যাবে। ফলে বহু উচ্চশিক্ষিত মানুষও এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি। সরকারি চাকরির মর্যাদা, স্থির আয় এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তা – এই তিনটি কারণেই তারা নিজেদের যোগ্যতার তুলনায় বহু নীচের পদে আবেদন করতে পিছপা হননি।
পরীক্ষার দিন সকাল থেকে জয়পুরের গান্ধীনগর পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে পড়ে যায় উপচে পড়া ভিড়। প্রার্থীরা দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। পরীক্ষার পরেও দুর্ভোগ কমেনি। জয়পুরের বাসস্ট্যান্ডে বাড়ি ফেরার বাস ধরতে গিয়ে প্রার্থীরা প্রচণ্ড ভিড়ের সম্মুখীন হন। সংকীর্ণ জানালা দিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে বাসে উঠতে গিয়ে কেউ পড়ে যাচ্ছেন, কেউ বা আটকে যাচ্ছেন – এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে। এই অব্যবস্থা রাজ্যের চাকরি সংক্রান্ত পরীক্ষার অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতাকেও প্রকাশ করেছে।
এই ঘটনাটি কেবল একটি চাকরির পরীক্ষা নয়, বরং রাজস্থানে শিক্ষিত বেকারত্বের এক গভীর সংকটের প্রতিফলন। ন্যূনতম যোগ্যতা দশম শ্রেণি হলেও পিয়নের মতো নিম্নপদে পিএইচডি, এমএসসি, এমফিল, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের আবেদন করা একদিকে যেমন দুঃখজনক, অন্যদিকে তেমনই চিন্তার বিষয়। কারণ এটি প্রমাণ করে যে, উচ্চশিক্ষা শেষ করেও যুবক-যুবতীরা উপযুক্ত কাজ পাচ্ছেন না। সরকারি চাকরির সীমিত সংখ্যা ও বেসরকারি খাতে চাকরির অভাব এই পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করছে।